প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মহল বলে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। আর আমাদের দেশের কিছু লোক আছে, তারা তো ঘেউ ঘেউ করেই যাচ্ছে। তারা ঘেউ ঘেউ করতে থাকুক, তাতে আমাদের কিচ্ছু আসে যায় না।”
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের আলোচনায় সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এগুলো যারা দেখে না তাদের চোখে হচ্ছে ঠুলি পরা, খুনিদের ঠুলি, যুদ্ধাপরাধীদের ঠুলি। এরা দেশের উন্নয়ন দেখে না। লুটে খেতে পারছে না, সেটাই তাদের বড় কথা। তারা গরিবের হাড্ডিসার, কঙ্কালসার দেহ দেখিয়ে বিদেশ থেকে অর্থ আনবে, আর লুটপাট করে খাবে।”
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা কাজে লাগিয়ে একটি মহল দেশের বিরুদ্ধে বদনাম করছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের উন্নয়নটা যারা সহ্যই করতে পারে না, তাদের মুখেই ওই কিছু হলো না, কিছুই হলো না। তাদের বলব, নিজেরা আয়নায় একটু চেহেরা দেখেন। আর অতীতে কী করেছেন সেটা দেখেন। আর যাদের জন্য মায়াকান্না, একটা হচ্ছে দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত, আরকেটা খুনি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল, আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল, আইভী রহমানের হত্যাকারী। সেই হত্যাকারীরা আজকে সব থেকে বেশি সোচ্চার।”
এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই সংগঠন নিজের হাতে গড়ে দিয়ে গেছেন। অনেক ঘাত-প্রতিঘাত সয়ে আমরা এই সংগঠনকে সুসংগঠিত করেছি। আর একমাত্র আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এদেশে অর্থনৈতিকভাবে উন্নয়ন করে।”
এদিকে উন্নয়নের গতিধারাটা অব্যাহত রেখে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভালো কাজ করার পরও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে লেগে থাকা এক শ্রেণির মানুষের অভ্যাস বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
সরকার প্রধান বলেন, “যারা এদেশের স্বাধীনতা চায়নি, যারা খুনিদের নিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে বাংলাদেশকে, দেশের উন্নয়নকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে চেয়েছিল, তাদের কিছু প্রেতাত্মা এখনও সমাজে আছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে আছে। তারাই এগুলো করে বেড়াচ্ছে। বিদেশীদের কাছে নালিশ করে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে তথ্য দিচ্ছে।”
দশ ট্রাক অস্ত্রমামলা ও দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে বিএনপি বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিদেশ পালিয়ে আছেন বলে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কিন্তু ষড়যন্ত্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।”
জনগণের ভোট চুরি করে কেউ পার পায়নি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে অতীতে যারা ছিনিমিনি খেলেছে, তারা তাদের শাস্তি পেয়েছে। দেশের মানুষই তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ পর পর তিনবার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে। যদি জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হতাম, তাহলে এই তিন তিনবার আমরা ক্ষমতায় আসতে পারতাম না। আর আজকে ১৩ বছর পূর্ণ করতে পারতাম না।”
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে এ দেশের উন্নয়নের চাকাটা গতিশীল থাকবে বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।
২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলে তাদের প্রতি উল্টো প্রশ্ন ছোঁড়ে শেখ হাসিনা বলেন, “১৫ ফেব্রুয়ারি ৯৬ সালে খালেদা জিয়া কেমন নির্বাচন করেছিল? কয় পার্সেন্ট ভোট পড়েছিল? ৪ পার্সেন্ট ভোটও পড়েনি। সমস্ত জায়গায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করে দিয়ে, ভোটের বাক্স সিল দিয়ে ভরে, খালেদা জিয়া নাকি তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রী। জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে খালেদা জিয়ার শেষ রক্ষা হয়নি।”
আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, “জনগণের ভোট চুরি করেছিল বলে কী হয়েছিল তার পরিণতি? গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, আন্দোলন হয়েছিল, সংগ্রাম হয়েছিল। সেই সংগ্রাম আন্দোলনের মধ্যে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিল পদত্যাগ করতে। আজকে যারা নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের আমি স্মরণ করাতে চাই সেই ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন ও খালেদা জিয়ার পদত্যাগের কথা। তাদের তৃতীয়বারের প্রধানমন্ত্রীও দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেননি। ভোট চুরির অপরাধে নাকে খত দিয়ে তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল। পদত্যাগ করতে যাবে রাষ্ট্রপতি ভবনে, জনগণের পারমিশন নিয়ে যেতে হয়েছিল।”
শেখ হাসিনা বলেন, “ভোট চুরি করলে জনগণ ছেড়ে দেয় না, এটা বাস্তবতা।”
এছাড়া দেশের স্বাধীনতায় বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্যে ওঠে আসে ৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই কালরাতের কথাও।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “যে মানুষটার বুক ভরা ভালোবাসা ছিল বাংলাদেশের মানুষের জন্য, আর যে মানুষগুলো আমাদের ঘরে খেয়ে পরে গেল তারা কীভাবে ওই বুকে গুলি চালালো। বাংলাদেশের মাটিতো অনেক উর্বর। এখানে যেমন অনেক ভালো মানুষও জন্মে, আবার পরগাছাও জন্মে। তেমনি বেঈমান পরগাছাও এদেশে ছিল। তাদের ইচ্ছে ছিল, এদেশ যেন আর উন্নতি করতে না পারে। মহান মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছেল এরা।”