• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

পারিবারিক সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মশালা


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১১, ২০২৩, ০৫:২১ পিএম
পারিবারিক সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় কর্মশালা

‘পারিবারিক সম্পত্তিতে নারী-পুরুষ সমানাধিকার প্রতিষ্ঠায় নাগরিক সমাজের করণীয়’ শীর্ষক একটি পর্যালোচনা কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস)।

সোমবার (১০ এপ্রিল) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বিএনপিএসের কেন্দ্রের সভাকক্ষে এ আয়োজন করা হয়।

আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুর রহমান বলেন, “পারিবারিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার না থাকা নারীর অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের পথে ও বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।” তিনি বলেন, “১৯৭১-এর এপ্রিলে মুক্তিযুদ্ধকালে গঠিত মুজিবনগর সরকারর স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মূলনীতি ছিল সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার। সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক ও মতাদর্শিক ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে বৈষম্য রাষ্ট্রীয় ও আইনগতভাবে অবৈধ।”

বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস (ব্লাস্ট)-এর আইনজীবী সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, “পারিবারিক সম্পত্তিতে সমান অধিকার না থাকায় শিশুবয়স থেকেই পরিবারে মেয়েশিশুকে লালনপালন করা হয় মূলত একজন উপযুক্ত পাত্র দেখে বিয়ে দিয়ে অন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। পরিবারের এই মানসিকতা যেমন বাল্যবিয়ে বৃদ্ধি করে, তেমনি জীবনভর নারীদের পরজীবী হিসেবে গণ্য হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করে দেয়।”

পর্যালোচনা কর্মশালাটিতে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষকবৃন্দ, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সদস্য (এসএমসি), মন্দির কমিটির প্রধান, সামাজিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, সমাজসেবক, রাজনীতিকসহ সংস্থা পরিচালিত খিলগাঁও থানাধীন কর্ম এলাকার তৃণমূল নারী সংগঠন, ক্লাস্টার গ্রুপ, ইয়ুথ গ্রুপ ও কমিউনিটি ফোরামের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

বিএনপিএস কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কো-অর্ডিনেটর (পিএমই) মোসাব্বের হোসেনের সঞ্চালনায় উক্ত পর্যালোচনা কর্মশালায় বিষয়ভিত্তিক ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সংস্থার উন্নয়ন কর্মকর্তা অনিকেত আচার্য। ধারণাপত্রের আলোকে বক্তব্য ও মতামত প্রদান করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ফাতেমা আক্তার ডলি, পল্লীমা মহিলা পরিষদের সহ-সভাপতি সৈয়দা শামিমা সুলতানা, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস আইনজীবী সুস্মিতা চক্রবর্তী,  বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সদস্য নুসরাত এশা, নারীমৈত্রী’র সিনিয়র ফিল্ড অফিসার আফরোজা আক্তার আঁখি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) প্যারা লিগ্যাল এইড সদস্য শিথী দাস ও কাজী দ্রাকসিন্দা জবীন, দাসেরকান্দী রাধাকৃষ্ণ মন্দির পরিচালনা পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি অনঙ্গ মোহন রাজবংশী, মানিকনগর মডেল হাই স্কুলের সিনিয়র শিক্ষক সুপ্রজিৎ দাস, অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘সংবাদপ্রকাশ’-এর সহ-সম্পাদক রুমি প্রভা, দৈনিক আমার বার্তা’র বিশেষ প্রতিনিধি রতন চন্দ্রবালো, আওয়াম প্রজেক্টের অ্যাসিসটেন্ট কো-অর্ডিনেটর শিথী ঘোষ এবং বিএনপিএস-ঢাকা পূর্ব কেন্দ্রের কেন্দ্র ব্যবস্থাপক শেলীনা পারভীন।

পর্যালোচনা কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীবৃন্দ সকলেই নারীর পরনির্ভরশীলতার বিপরীতে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সুদৃঢ়করণ,  তথা উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে নাগরিক সমাজের দায়দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা উল্লেখ করেছেন।

বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) ১৯৮৬ সাল থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও পবিত্র সংবিধানের আলোকে পরিবার থেকে রাষ্ট্রে নারীর সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা, ক্ষমতায়ন এবং প্রান্তিক মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে সরকার এবং বিভিন্ন নারী ও উন্নয়ন সংগঠনসহ প্রগতিশীল বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ-এর পাশাপাশি কাজ করে আসছে।

বিএনপিএস-এর ভাষ্য, অসম ও প্রতিকূল এ অবস্থার মধ্যেও গত ৫০ বছরে নারীসমাজ দেশের উন্নয়নে সমানতালে ভূমিকা রেখে চলেছে। বর্তমান বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল অবদান এ দেশের নারীসমাজের, যা নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের বক্তব্যেও উঠে এসেছে। বর্তমানে সমাজ, রাষ্ট্রে আমরা সবচেয়ে বেশি যে সংকটের মোকাবেলা করছি তা হচ্ছে বাল্যবিয়ে ও নারী নির্যাতন। নারী ও কিশোরীরা পরিবার, অফিস আদালত, যানবাহন, রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। আমরা মনে করি, এগুলো রোগের উপসর্গ মাত্র। মূল কারণটি হলো নারীর পায়ের নিচে মাটি না থাকা। এই সংকট মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর পদক্ষেপ হতে পারে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সৃদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। এখনো ১৯৬১ সালে পাকিস্তানের সামরিক শাসক কর্তৃক প্রণীত বৈষম্যমূলক ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইনের বলে উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পদ ও সম্পত্তিতে সমান অধিকার পাওয়া থেকে বাংলাদেশের নারীসমাজকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, সংবিধানের ২৬(১) ও ২৬(২) ধারা অনুযায়ী মৌলিক অধিকারের অন্যতম ভিত্তি ‘বৈষম্যহীনতা’র সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন বহাল থাকার যৌক্তিক ও আইনগত কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। কাজেই, স্বাধীনতার মূলনীতি তথা সমতা, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অঙ্গীকারসমূহ লঙ্ঘন করা থেকে রাষ্ট্রকে বিরত রাখা এবং রাষ্ট্রীয় অগ্রগতির স্বার্থে বৈষম্যমূলক উত্তরাধিকার আইন পরিবর্তন করে সকল ধর্ম ও লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য উত্তরাধিকারসহ পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকারের বিধান রেখে আইন প্রবর্তনে উদ্যোগ গ্রহণ আবশ্যক। সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত প্রচেষ্টা সরকার তথা রাষ্ট্রকে এ বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।

Link copied!