কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন। দেশ ছাড়ার আগে নিজের একটি ভাষণ রেকর্ড করে যেতে চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি পাননি। সোমবার (৫ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে বঙ্গভবন থেকে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে করে তারা রাজধানী ছেড়েছেন।
জানা গেছে, দেশে ছাড়ার আগে সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন শেখ হাসিনা। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে সেই বৈঠক হয়েছে। তখনো আরও বলপ্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। পদত্যাগ করতেও রাজি হননি। পরে পরিবারের স্বজনদের কথা মেনে পদত্যাগে রাজি হন তিনি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই সামরিক হেলিকপ্টারে বোন রেহানাকে নিয়ে পালাতে বাধ্য হন হাসিনা। সংবাদ সূত্র প্রথম আলো।
একাধিক সূত্র বলছে, দেশে ত্যাগের আগে সকালে তিন বাহিনীর প্রধান ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ডেকে ছিলেন শেখ হাসিনা। পরিস্থিতি সামাল দিতে কেন পারছে না, সে বিষয়ে জানা হয় তাদের কাছে। শেখ হাসিনা তখন বলেন, আন্দোলনকারীরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাঁজোয়া যানে উঠে লাল রং দিয়ে দিচ্ছেন, সামরিক যানে পর্যন্ত উঠে পড়ছেন—এর পরও কেন তারা কঠোর হচ্ছে না। এ ছাড়া বিশ্বাস করে এই কর্মকর্তাদের শীর্ষ পদে বসিয়েছেন—সেটাও তিনি উল্লেখ করেন।
তখন আইজিপি জানান, পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গেছে, তাতে পুলিশের পক্ষেও আর বেশি সময় এ রকম কঠোর অবস্থান ধরে রাখা সম্ভব নয়।
ওই সময়ে শীর্ষ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়, বলপ্রয়োগ করে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা মানতে চাচ্ছিলেন না। তখন কর্মকর্তারা শেখ রেহানার সঙ্গে আরেক কক্ষে আলোচনা করেন। তাকে পরিস্থিতি জানিয়ে শেখ হাসিনাকে বোঝাতে অনুরোধ করেন। শেখ রেহানা এরপর বড় বোন শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনা করেন। কিন্তু তিনি ক্ষমতা ধরে রাখতে অনড় থাকেন। একপর্যায়ে বিদেশে থাকা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন একজন শীর্ষ কর্মকর্তা। এরপর জয় তার মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। তারপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে রাজি হন।
তখন তিনি জাতির উদ্দেশে একটা ভাষণ রেকর্ড করতে চান প্রচারের জন্য। ততক্ষণে গোয়েন্দা তথ্য আসে যে বিপুলসংখ্যক ছাত্র-জনতা শাহবাগ ও উত্তরা থেকে গণভবন অভিমুখে রওনা হয়েছে। দূরত্ব বিবেচনায় ৪৫ মিনিটের মধ্যে শাহবাগ থেকে গণভবনে আন্দোলনকারীরা চলে আসতে পারে বলে অনুমান করা হয়। ভাষণ রেকর্ড করতে দিলে গণভবন থেকে বের হওয়ার সময় না-ও পাওয়া যেতে পারে। এই বিবেচনায় শেখ হাসিনাকে ভাষণ রেকর্ডের সময় না দিয়ে ৪৫ মিনিট সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
এরপর ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের পুরোনো বিমানবন্দরে হেলিপ্যাডে আসেন শেখ হাসিনা। সেখানে তাদের কয়েকটি লাগেজ ওঠানো হয়। তারপর তারা বঙ্গভবনে যান। সেখানে পদত্যাগের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোনসহ ভারতের উদ্দেশে উড্ডয়ন করেন শেখ হাসিনা।
এদিকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর গণভবনে প্রবেশ করেছে ছাত্র-জনতা। এরপরই গণভবনে ঢুকে পড়েছেন হাজারো মানুষ। সেখানের উল্লসিত ছাত্র-জনতার স্রোত দেখা যায়। দুপুরে গণভবনে ঢল নামে ছাত্র-জনতার। এতদিন সুরক্ষিত ভবনে প্রবেশ করেন তারা। এ সময় ভেতরে আন্দোলনকারীদের লুটপাট ও ভাঙচুর করতে দেখা যায়। সেখান থেকে কেউ কেউ বিভিন্ন জিনিসপত্রও নিয়ে যাচ্ছেন।
                
              
																
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    





























