শুধু বড়রা নয়, শিশুরাও ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে ডেঙ্গুতে। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সী শিশুরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে প্রথম দিকে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও গত জুনের পর থেকে তা বেড়ে চলেছে। চলতি আগস্ট মাসে এই হাসপাতালে ১৪ দিনে ভর্তি হয় ১৭৫ শিশু। এর আগের মাস জুলাইতে ২৫০, আর জুনে ভর্তি হয়েছে ১৮০ শিশু।
হাসপাতালটিতে প্রথমে ১৪ নম্বর ওয়ার্ড ৫০ শয্যা বরাদ্দ থাকলেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় ২ নম্বর ওয়ার্ডও দেয়া হয় ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য।
মিরপুর কাজীপাড়ার বাসিন্দা এক বছর বয়সী সাবিত গত শনিবার থেকে জ্বরে ভুগছে। শারীরিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাকে নিয়ে আসেন শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইন্সটিটিউটে। সেখানে পরীক্ষা করার পর জানা যায়, সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। তাকে চিকিৎসকের পরামর্শে একই হাসপাতালের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। সেখানে তার চিকিৎসা চলছে। বর্তমানে তার অবস্থা উন্নতির দিকে বলে জানিয়েছেন তার বাবা। সাবিতের মতো ১০৫ জন শিশু চিকিৎসাধীন রয়েছে এই হাসপাতালে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ২৩ শিশু ভর্তি হয়েছে হাসপাতালটিতে। মারা গেছে ১ জন। এছাড়া আইসিইউতে আছে ৬ জন। এ মাসে প্রথম ১৪ দিনে ৪ শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। চলতি বছর এই হাসপাতালে ১২ শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। চলতি বছর ৭শত ৬১ জন শিশু ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু ওয়ার্ড খালি না থাকায় অতিরিক্ত চিকিৎসা হচ্ছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে।
হাসপাতালটির নিচ তলায় বিশেষায়িত ডেঙ্গু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায়, নির্ধারিত শয্যার চেয়েও বেশি শিশু ভর্তি এই হাসপাতালে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশুরা চিকিৎসা নিচ্ছে এখানে। হাসপাতালটিতে চিকিৎসা নিয়ে রোগীদের অভিযোগ না থাকলেও পর্যাপ্ত ওষুধ ও স্যালাইন সরবরাহ নিয়ে অভিযোগ রয়েছে।
আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের অভিযোগ, “হাসপাতাল থেকে মাঝে মাঝে ওষুধ দেয়। আবার অনেক সময় বলে সাপ্লাই কম বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হবে। কয়েকদিন থেকে আমাদের বাইরে থেকেও স্যালাইন নিয়ে আসতে হচ্ছে।”
ডেঙ্গু আক্রান্ত ফারিয়ার বাবা জামাল হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “হঠাৎ করে ছেলের জ্বর আসে। পরীক্ষা করেই ডেঙ্গু ধরা পড়ে। ডাক্তার বাসায় চিকিৎসা করে আবার আরেকটা রিপোর্ট করতে বলল। তখন প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় শিশু হাসপাতালে নিয়ে এসেছি।”
তিনি আরও বলেন, “এখানে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভালো। প্রথমদিকে হাসপাতাল থেকে ওষুধ স্যালাইন দিয়েছে আমাদের। কিন্তু গতকাল বললো ওষুধ ও স্যালাইন পর্যাপ্ত সরবারহ আসছে না, বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হবে। আবার আজকে হাসপাতাল থেকে স্যালাইন দিয়েছে। ওষুধ বাইরে থেকে নিয়ে আসছি।”
তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা তাসলিমা ১০ মাস বয়সী মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাচ্চার কান্না থামাতে ব্যস্ত তাসলিমা। তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “তার মেয়ে নিউমোনিয়া ও ডেঙ্গু নিয়ে ভর্তি হয়েছে। চিকিৎসা ভালো পাচ্ছি। মাঝে মাঝে বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে আমাদের। ওষুধের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে।”
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও রোগীর চাপ নিয়ে ডেঙ্গু ওয়ার্ডের ইনচার্জ শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ফারহানা আহম্মেদের সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “সাধারণভাবে ডেঙ্গুর লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। জ্বর একটানা থাকতে পারে, আবার ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার পর আবারও জ্বর আসতে পারে। সঙ্গে শরীরে ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা এবং চামড়ায় লালচে দাগ (র্যাশ) হতে পারে। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে শরীরের যেকোনো জায়গা থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। তবে এগুলো না থাকলেও ডেঙ্গু হতে পারে। অনেক শিশুর ডাইরিয়া ও বমি হচ্ছে। কারণ এবার ডেঙ্গুর ধরণ পরিবর্তন হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “চলতি বছর ডেঙ্গু সংক্রামণ বেড়ে যাওয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। ফলে হাসপাতালে চাপ বাড়ছে রোগীদের। যা গত বছরের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। চাপ বেশি থাকায় আমাদের ডাক্তার নার্সরা একটু হিমশিম খাচ্ছে। ক্রিটিক্যাল শিশুদের জন্য কিছু বিশেষ শয্যার ব্যবস্থা রেখেছি। পর্যাপ্ত আইসিউর ব্যবস্থা আছে আমাদের।"
স্যালাইন ওষুধ সংকট নিয়ে তিনি বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে চাপ বাড়ছে। হঠাৎ চাপ বাড়ায় স্যালাইনের সরবারহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চাহিদার তুলনায় রোগী বেশি হওয়ায় কিছুটা সংকট আছে আমাদের।”