• ঢাকা
  • রবিবার, ১৯ মে, ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৫ পরামর্শ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৮, ২০২৩, ০৬:৩৫ পিএম
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৫ পরামর্শ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইজারল্যান্ডের জেনেভাতে আইওএম কাউন্সিলের ১১৪তম অধিবেশনে উচ্চ পর্যায়ের সেগমেন্টে ভিডিও বিবৃতি দেন। ছবি-পিআইডি

জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার অহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি মানুষের গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ৫টি পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, “বেশিরভাগ জলবায়ু বাস্তুচ্যুতি কিছু ভয়াবহ পরিস্থিতিতে জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং সীমানা পেরিয়েও ঘটছে।”

 ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম) কাউন্সিলের ১১৪তম অধিবেশনে ‘মানব গতিশীলতায় জলবায়ুর প্রভাব : সমাধানের জন্য একটি বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে মঙ্গলবার এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে ২১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ বাস্তচ্যুত হতে পারে। এরমধ্যে শুধু দক্ষিণ এশিয়াতেই থাকবে চার কোটি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা, এবং মারাত্মক সাইক্লোন তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতিতে ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এ ধরনের বাস্তচ্যুতি আমাদের ধারণার চেয়েও দ্রুত গতিতে ঘটছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত বা আটকা পড়েছেন তাদের মৌলিক সেবা, সামাজিক সুরক্ষা এবং জীবীকা নির্বাহের সুযোগ থাকতে হবে।’ ‘তাদের আতিথ্য দানকারী সম্প্রদায়ের উপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবেলা করা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারে আশ্রয় দেওয়ার বোঝা বহন করছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কিছু লোক পুরো অঞ্চলের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে মানবপাচার চক্রের শিকার হয়। এই ধরনের মিশ্র অভিবাসন প্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতার বিষয়টিকে আরও সমস্যাগ্রস্ত করে তোলে।’

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘মানুষের চলাচলের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে প্রাধান্য দিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে বাংলাদেশ। আমি আশ্বস্ত যে অনেক ক্ষুদ্র দ্বীপ উন্নয়নশীল দেশও এ বিষয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা আনন্দিত যে, কপ-২৮, জিএফএমডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সরকার তার সীমিত সম্পদের মধ্যে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। আমাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে নিরাপদ বাসস্থান দিতে কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ উদ্যোগ হিসেবে স্থানীয় মাছ শিকার, পর্যটন ও বায়ুশক্তিকেন্দ্রে পরিণত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পাঁচটি পরামর্শ দেন।

এগুলো হলো :
প্রথমত, নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং নিয়মিত অভিবাসন সম্পর্কিত গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মানবাধিকার-ভিত্তিক পদ্ধতিতে আমাদের মানব গতিশীলতার জলবায়ু প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে;

দ্বিতীয়ত, জলবায়ু অভিবাসীদের পরিস্থিতি জলবায়ু ন্যায়বিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করা উচিৎ। যাতে তারা যে ক্ষতি ও ধ্বংসের সম্মুখীন হয় তার প্রেক্ষাপট-নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করা যায়।

তৃতীয়ত, অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসাবে দেখার জন্য আমাদের অবশ্যই স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রস্তুত থাকতে হবে যেখানে এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হিসাবে প্রমাণিত হয়;

চতুর্থত, জলবায়ু অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু এবং অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর জন্য বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষামান পুনর্গঠনের জন্য আমাদের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মানগুলো পর্যালোচনা করতে হবে; এবং

পঞ্চমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য একটি বস্তুনিষ্ঠ মামলা প্রস্তুত করতে আমাদের মানব গতিশীলতার উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে সু-গবেষণা করা ডেটা এবং প্রমাণগুলোতে বিনিয়োগ করা উচিৎ।

সূত্র : ইউএনবি

Link copied!