• ঢাকা
  • রবিবার, ০৬ অক্টোবর, ২০২৪, ২১ আশ্বিন ১৪৩১, ২ রবিউস সানি ১৪৪৬

গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামছে ওলামা লীগ


সফিকুল ইসলাম
প্রকাশিত: এপ্রিল ৯, ২০২৩, ১২:২৬ পিএম
গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামছে ওলামা লীগ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ধর্মীয় ইস্যুতে অপপ্রচার-গুজব প্রতিরোধে মাঠে নামছে আওয়ামী ওলামা লীগ। ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের নির্দেশনায় দেশের বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসায় আলেম-ওলামাদের সমন্বয়ে অঞ্চলভিত্তিক কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে ওলামা লীগ। সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি ৯টি ধারাকে একত্রিত করে রাজধানীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে মতবিনিময়ের পর সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতির সম্মতি নিয়ে ২৯ এপ্রিল রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয় সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বলেও জানানো হয়েছে। 
সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক ড. কে এম আবদুল মোমেন সিরাজি বলেন, ওলামা লীগের সবপক্ষকে একত্রিত করে ২৯ এপ্রিল সম্মেলন হতে যাচ্ছে। খুলনা বাদে বাকি সাত বিভাগে প্রতিনিধি সম্মেলন শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, সারা দেশে জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে ওলামা লীগের নেতাকর্মী সমর্থক রয়েছে। সাত থেকে সাড়ে সাত লাখ আলেম-ওলামা এই সংগঠনে যুক্ত রয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা আশঙ্কা করছেন, দ্বাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের দিক থেকে ধর্মীয় ইস্যু নিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অতীতের মতো নানা ধরনের গুজব-অপপ্রচার চালাতে পারে। তাই আগেভাগেই সতর্কতামূলক অবস্থান নিতে চান দলটির নেতারা। তাদের মতে, নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ ও সরকারকে ইসলামবিদ্বেষী হিসেবে তুলে ধরে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা জোরালো হতে পারে। সেটা যাতে না হয় তার জন্য দলীয় মতাদর্শের অনুসারী আলেম-ওলামাদের মাধ্যমে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডের সবুজ সংকেত পেয়ে এরই মধ্যে ১৫৯ সদস্যের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের ও ওলামা লীগের একাধিক নেতা সংবাদ প্রকাশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কূটনীতিকদের মাধ্যমে সরকারকে চাপে রাখার পাশাপাশি নানা ইস্যুতে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত ও হেফাজতে ইসলামের একটি অংশ। অন্য সব ইস্যুর পাশাপাশি পুরোনো কৌশল অবলম্বন করে সরকারকে ইসলামবিদ্বেষী ও আলেম-ওলামাদের প্রতি বিরূপ এমন প্রচার চালিয়ে ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে এই গোষ্ঠী।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, গত তিন (১৪ বছর) মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ইসলাম তথা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কল্যাণে নানা পদক্ষেপ নিলেও তা সাধারণ মানুষের কাছে সঠিকভাবে বা সঠিক পন্থায় তুলে ধরা যায়নি। সারা দেশে ৫৬০টি মডেল মসজিদের সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত। এ ছাড়া কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়ে আলেম-ওলামাদের যে সম্মান শেখ হাসিনা দিয়েছেন তা অতীতের কোনো সরকারের আমলে দেখা যায়নি।

ওই নেতা আরও বলেন, এত কিছু করার পরেও একটি অংশ সরকারকে বারবার ইসলামের মুখোমুখি দাঁড় করানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। আর এ কাজটি করছে বিএনপি, জামায়াত ও হেফাজতের একটি অংশ। তারা সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করে যে, এই সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা বলেন, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন না হলেও এর মতোই হচ্ছে ওলামা লীগ। আগামী ২৯ এপ্রিল এই সংগঠনের সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের আদর্শে বিশ্বাসী আলেম-ওলামাদের ঐক্যবদ্ধ করা হবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে এই আলেম-ওলামারা ভূমিকা রাখবেন।

প্রসঙ্গত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৯ সালে আওয়ামী ওলামা পার্টি গঠন করেন। তখন নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশ। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর সংগঠনটি বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯৬ সালে ওলামা পার্টি নতুন করে আওয়ামী ওলামা লীগ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। সে সময় সংগঠনটির নেতৃত্ব দেন মাওলানা হাবিবুল্লাহ কাচপুরী। পরে সংগঠনটি বিভক্ত হয়ে পড়ে।

Link copied!