• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২০ মুহররম ১৪৪৫

ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে বাজারে স্যালাইন সংকট


বিজন কুমার
প্রকাশিত: আগস্ট ৯, ২০২৩, ০২:২৯ পিএম
ডেঙ্গুর প্রকোপের মধ্যে বাজারে স্যালাইন সংকট
রাজধানীতে বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ও মৃত্যু

রাজধানী ঢাকায় হু হু করে বেড়ে চলছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। প্রতিদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছর রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে আক্রান্ত ও মৃতের এই সংখ্যা। এরই মধ্যে বাজার দেখা দিয়েছে শিরায় দেওয়া স্যালাইলন সংকট। এতে বিপাকে পড়েছেন রোগী ও তাদের স্বজনরা।

মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর চাপ সবচেয়ে বেশি। এখানে প্রতিদিন শতাধিক ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। বুধবার (৯ আগস্ট) মুগদা হাসপাতালের আশপাশের ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্যালাইনের সংকট রয়েছে বাজারে। যদিও মুগদা হাসপাতালে স্যালাইনের সংকট নেই। তবে বাইরের চিত্র ভিন্ন। ফার্মেসির মালিক থেকে শুরু করে রোগীর স্বজনরাও বলছেন, বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই শিরায় দেওয়া স্যালাইনের।

মুগদা হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় দিদার ইসলাম নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। তার চার বছরের ছেলে ইমরান ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। দিদার বলেন, “ছেলেটা প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। ১০ দিন অন্য একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিল, উপকার পাই নাই। তার ওপর বাজারে স্যালাইন সংকট। স্যালাইন কিনতে যাই, দোকানদার বলে স্যালাইন নাই। একেকটি স্যালাইন ১৫০ টাকা, ১৮০ টাকা করে কিনছি। পরে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি করাইছি। এখানে স্যালাইন সংকট নেই।”

জানা গেছে, ডেঙ্গু রোগীদের শিরায় সাধারণত দুই ধরনের স্যালাইন দেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ডিএনস (ডেক্সট্রোজ স্বাভাবিক স্যালাইন), অন্যটি এনএস বা স্বাভাবিক স্যালাইন (নরমাল স্যালাইন)। হাসপাতালগুলোতে স্যালাইন সরবরাহ করে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড (ইডিসিএল) নামের একটি প্রতিষ্ঠান। দপ্তরটির নির্বাহী কর্মকর্তা বলছেন, ডেঙ্গুর প্রকোপে গত বছরের তুলনায় এ বছর শিরায় দেওয়া স্যালাইনের চাহিদা বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ।  

পূর্ণিমা নামে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক রোগী বলেন, “আমি গত শুক্রবার আক্রান্ত হইছি। তার আগে বাড়িতে চিকিৎসা নিছি। শরীর দুর্বল হওয়ায় মুগদা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি। তিন ব্যাগ স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। বাড়িতে যখন চিকিৎসা নিয়েছি, তখন স্যালাইনের দাম ৫০০ টাকা নিয়েছে। যিনি স্যালাইন দিয়েছিলেন, তিনি বলেছিলেন, স্যালাইন নাকি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দাম বেশি।”

স্যালাইন কিনতে আসা জহিরুল ইসলাম মিলন বলেন, “আমার মা কয়েক দিন আগে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিল। তখন স্যালাইনের সংকটে অনেক বিপাকে পড়তে হয়েছিল। রোগীকে নিয়ে আতঙ্ক, তার ওপর স্যালাইন নেই। নরমাল স্যালাইন দোকানিরা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে ওই সময়। কী একটা হাহাকার পরিস্থিতি।”

মদিনা মেডিসিন পয়েন্টের কর্মচারী মোকলেস ইসলাম বলেন, “সাধারণত প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫টা স্যালাইন বিক্রি হয়। ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। রোগীর জন্য সবগুলো স্যালাইন বর্তমানে আমার দোকানে নেই। কোম্পানিতে চাহিদা দিলে কম স্যালাইন পাই। চাহিদা ১০টা দেওয়া হলে, ৫ অথবা ৭টা স্যালাইন দেয়।”

ভূঁইয়া ড্রাগ অ্যান্ড সার্জিক্যাল হাউসের কর্মচারী জয় বলেন, “দুই-তিন মাস ধরে স্যালাইনের সংকট চলছে। এই পরিস্থিতি হওয়ার একমাত্র কারণ ডেঙ্গু। আমরা যখন কোম্পানিকে বলি স্যালাইন দিতে, তখন তারা  বলে, সাপ্লাই নেই।”

মুগদা মেডিকেল হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মো. নিয়াতুজ্জামান জানান, বর্তমানে হাসপাতালে স্যালাইনের পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। প্রয়োজন হলে অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানিতে (ইডিসিএল) চাহিদা দিলে তারা চাহিদানুযায়ী স্যালাইন সরবরাহ করে।

ইডিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এহসানুল কবির জগলুলর বলেন, “এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় শিরায় দেওয়া স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে গেছে। বছরজুড়ে আমরা সাধারণত ৬০ থেকে ৭০ লাখ স্যালাইন সরবরাহ করি। বর্তমানে এই চাহিদা অতিক্রম করে প্রায় লাখের ঘরে পৌঁছেছে। কোম্পানিতে উৎপাদন শুরু হবে নভেম্বর মাস থেকে। এখন বিভিন্ন কোম্পানি থেকে স্যালাইন ক্রয় করে হাসপাতালগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।”

Link copied!