• ঢাকা
  • রবিবার, ১৩ অক্টোবর, ২০২৪, ২৭ আশ্বিন ১৪৩১, ৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

সোনালীর কাছে ১১শ কোটি টাকা ধার চেয়েছে ইসলামী ব্যাংক


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪, ০৮:৪৪ এএম
সোনালীর কাছে ১১শ কোটি টাকা ধার চেয়েছে ইসলামী ব্যাংক

তীব্র তারল্য সংকটে ভুগছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসি। এ পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের কাছে ১১০০ কোটি টাকা ধার চেয়েছে ব্যাংকটি। ইতিমধ্যে সোনালী ব্যাংক ধার দেওয়ার জন্য সম্মতিও দিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি পেলে তারল্য সুবিধা দেবে রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংক। 

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়ে মঙ্গলবার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠিও দিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এ ছাড়া স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) আওতায় আরও পাঁচ হাজার কোটি টাকার তারল্য সুবিধা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে চিঠি দেয় ইসলামী ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, এটা খুবই দুঃখজনক। একসময় অন্য ব্যাংককে ধার দেওয়া ইসলামী ব্যাংক আজ গভীর সংকটে। ব্যাংকটিতে এত লুটপাট হয়েছে যে কোমর সোজা করে দাঁড়াতেও পারছে না। ইসলামী ব্যাংকে ঘটে যাওয়া ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও জানান তারা।

এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, এস আলম গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক থেকে যেভাবে টাকা লুট করেছে, তা পৃথিবীর ইতিসাসে নজিরবিহীন।

বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ প্রথম প্রজন্মের শরিয়াহভিত্তিক বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক। সারাদেশে ব্যাংকটির বর্তমানে ৩৯৫ শাখা, ২৫২ উপশাখা এবং ২ হাজার ৭৮৭টি এজেন্ট আউটলেট রয়েছে। সম্প্রতি উচ্চমূল্যস্ফীতি, ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় এবং দেশের সামগ্রিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ব্যাংক খাত থেকে আমানত তোলার চাহিদা বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকের ওপর তারল্য চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তাই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে তিন মাসের জন্য আন্তঃব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা পেতে ব্যাংকের পক্ষ থেকে সোনালী ব্যাংকের অনুকূলে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকার একটি ব্যাংক গ্যারান্টি ইস্যু করার অনুরোধ করছি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, শুধু ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ নয়। তারল্য সুবিধার জন্য অনেক ব্যাংকই আবেদন করেছে। তবে আন্তঃব্যাংক পদ্ধতিতে গ্যারান্টি চেয়ে কেবল ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ চিঠি দিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয়নি।

জানা যায়, সংকটে পড়া ব্যাংকগুলো কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টি নিয়ে আন্তঃব্যাংক মার্কেট থেকে ধার নেবে, সে বিষয়ে একটি খসড়া তৈরি করেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, যে ব্যাংক ধার নেবে, তার কাউন্টার পার্টি ব্যাংক থেকে আগে মৌখিক সম্মতি নিতে হবে। এরপর ধার নেওয়া ব্যাংকের বোর্ডে বিষয়টি তুলে অনুমোদন করাতে হবে। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করতে হবে। এক্ষেত্রে কত টাকা নেবে, তা কীভাবে পরিশোধ করবে, সুদহার কত হবে, তার একটি পরিকল্পনা দিতে হবে। তিন মাসে ধার শোধ করতে না পারলে ব্যাংকটি আরও ৯ মাস সময় পাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি কমিশনও পাবে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ব্যাংকিং খাত পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশসহ ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় ব্যবসায়ী গোষ্ঠী এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে অন্তত ৫০ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এ ব্যবসায়ী গ্রুপ। ব্যাংকটি থেকে নামে-বেনামে টাকা বের করে নেওয়ার কারণে তীব্র তারল্য সংকটের মুখে পড়ে। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যাংকটির বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। টাকা ছাপিয়ে দেওয়া সেই বিশেষ সুবিধা এখন বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাই ব্যাংকটি এখন তারল্য সংকটে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ধার চাচ্ছে।

Link copied!