নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ায় অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের। সপ্তাহের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০-৩৫ টাকা। অপরদিকে সরকার নির্ধারিত দামের দ্বিগুণের বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে আলু। বাজারে কেজিপ্রতি আলু বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকায়। আবার কেউ বিক্রি করছেন ৬৫ টাকায়।
সরেজমিনে বাজার দেখা যায়, গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায়। সেই একই পেঁয়াজ আজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকায়। অপরদিকে গত সপ্তাহে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ১১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে দেশি পেঁয়াজ কিনতে আসা মো. রহিম নামের একজন ক্রেতা সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে এসে নিত্যপণ্যের দাম শুনে কিনবো কিনা বুঝতে পারছি না। দুদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ কারওয়ান বাজার থেকে কিনেছি ১০০ টাকায়। সেখানে আজ শুক্রবার কিনলাম ১৩৫ টাকায়। এমনি ৩০ টাকা বেশি দিয়ে কিনলাম, এরপর আবার বিক্রেতা দাম চায় ১৪০ টাকা। একটা পেঁয়াজেই যদি দাম এত বেড়ে যায়, বাজারে অন্যসব পণ্যের কী হবে হিসেব করলেই বোঝা যায়।”
এই ক্রেতা আরও বলেন, “মানলাম দেশে অবরোধ চলছে। কিন্তু তাই বলে সব নিত্যপণ্যের দাম এইভাবে বেশি হবে সেটা মানার মতো না। আসলে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছেন না বলেই ব্যবসায়ীরা সবকিছু নিয়ে পার পেয়ে যাচ্ছে। আর কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের।”
শুধু পেঁয়াজেই দাম বেড়েছে এমন নয়। বাজারে কাঁচা মরিচের দামেও উত্তাপ ছড়াচ্ছে। দুইদিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া আলু, রসুন, আদা, টমেটো, গাজর, শিমসহ অধিকাংশ সবজির দামই বেড়েছে।
টমেটো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১১০-১২০ টাকায়, গাজর প্রতিকেজি ১০০ টাকা, পটল, ঢেঁড়স, বরবটি কেজিপ্রতি ৭০ টাকা, বেগুন, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, উস্তা ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়।
এক কেজি কাঁচা মরিচ কিনবেন বলে বিক্রেতার কাছে দাম নিয়ে কথা বলছিলেন মো. রফিকুল ইসলাম। কেজিপ্রতি কাঁচা মরিচের দাম ১৫০ টাকা শুনতেই কিছুটা চুপসে গেলেন তিনি।
রফিকুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তিনি সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “ভাই কী বলবো, কাঁচা মরিচও যদি ১৫০ টাকায় বিক্রি হয় তাহলে খাবো কী আমরা। আমরা সাধারণ মানুষ অসহায়। আমাদের দেখার মতো এখন কেই নেই। সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, জনগণ নিয়ে ভাবার সময় কারও নেই। যা কষ্ট শুধু জনগণই করছে।”
এদিকে নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেও একমত নন ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, অবরোধ, হরতালের কারণে বাজারে পণ্য সংকট। কারণ এ সময় ঢাকার বাইরে থেকে পণ্যবাহী ট্রাক ঢাকায় ঢুকতে পারেনি। পণ্য সংকট হলেও সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়েনি।
আলাউদ্দিন নামের এক ব্যবসায়ী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বাজারে পণ্য সংকট রয়েছে। তবে কোন জিনিসের দাম বাড়ছে একটু বলেন তো। সাধারণ ক্রেতা যে অভিযোগ করে দাম বাড়ছে, পণ্য সংকট হলে তো একটু বাড়বেই। আমাদেরও তো পরিবার নিয়ে চলতে হবে।”
এই বিক্রেতা আরও বলেন, “আড়তে মাল কিনতে গেলে বলে দাম বেশি। সরকার যে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের দোকানে ভোক্তা দিয়ে অভিযান চালায়, আড়তে তো অভিযান চালাতে পারে না। আড়তে অভিযান চালালে তো বেশি দামে বড় ব্যবসায়ীরা মাল বিক্রি করতে পারবে না, আর আমরাও বেশি দামে মাল কিনতে পারবো না। তবে এ সপ্তাহে সবকিছু জিনিসের দাম খুব বেশি বাড়েনি। সবকিছুর দাম আগের মতোই আছে।”