• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বিদেশি প্রভুরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না : হানিফ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২৩, ০৯:৫৭ পিএম
বিদেশি প্রভুরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না : হানিফ

বিদেশি প্রভুরা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবউল আলম হানিফ। তিনি বলেছেন, “আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। বিদেশি প্রভুদের কাছে ধরনা দিয়ে কোনো লাভ হবে না। এই দেশের ক্ষমতার মালিক জনগণ। জনগণ যতদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে আছেন, ততদিন কোনো শক্তির ক্ষমতা নেই এই সরকারের পতন ঘটাতে পারে।”

শনিবার (১৯ আগস্ট) কাকরাইলস্থ বাংলাদেশ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর দক্ষিণ জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, “আপনারা (বিএনপি) যে প্রভুর দেশে দৌড়াচ্ছেন, সেই প্রভুর দেশের সংস্থা আইআরআই জরিপ করে বলেছে, দেশের ৭০ শতাংশ মানুষ এখনো শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল। ৭০ শতাংশ মানুষের আস্থাশীল সরকারের পতন ঘটানোর সুযোগ নেই।”

বিদেশিদের চাপে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মুখ শুকিয়ে গেছে, বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে হানিফ বলেন, “শুক্রবার (১৯ আগস্ট) একটা ভাষণে মির্জা ফখরুল বলেছেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নাকি মুখ শুকিয়ে গেছে। উনার প্রভু পাকিস্তান আর পশ্চিমারা চাপ দেওয়ায় নাকি আমাদের মুখ শুকিয়ে গেছে। ফখরুল সাহেব আগস্ট মাস বাঙালির শোকের মাস, রক্ত ক্ষরণের মাস। এই মাসে আমরা শোকাতুর থাকি। এটা উৎসবের মাস নয় যে, আপনি আমাদের হাসিমুখ দেখবেন।”

হানিফ বলেন, “আপনারা আওয়ামী লীগের রুদ্র মূর্তি দেখেছেন। এই আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুই দুইবার আপনাদের ক্ষমতা থেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের কর্মীদের চেনেন নেই এখনো! আওয়ামী লীগের কর্মীদের হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। আগস্ট মাস যাক তারপর দেখবেন আমাদের নেতাকর্মীদের অবস্থান।”

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “লজ্জা হয় না মির্জা ফখরুল। কিছুদিন আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই দেশের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যখন ভিসানীতি ঘোষণা করেছিল তখন খুশিতে বাক বাকুম করে অভিনন্দন জানালেন। এই দেশের রাজনীতি, নির্বাচন নিয়ে সকাল-বিকাল আপনারা বিদেশিদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন, দৌড়াচ্ছেন। তাদের দিয়ে বক্তব্য দেওয়াচ্ছেন- সেই বক্তব্য আপনাদের ভালো লাগছে। এসব আপনাদের কাছে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ বলে মনে হয়নি? এখন পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র তারা অস্বস্তির কথা বলেছে, এতেই মনে হচ্ছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ। নির্লজ্জ দালালির একটা সীমা আছে ফখরুল।”

হানিফ বলেন, “আমি আগেও বলেছি, রাজাকারের সন্তান রাজাকারই হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা রাজাকার ছিল, এখনো পাকিস্তানের রাজাকার। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি ধ্বংস করেছিল। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে কী ছিল বাংলাদেশ? বাংলাদেশকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়েছিল, নরক বানিয়েছিল। আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে নির্বিচারে হত্যা করেছিল, ১০ হাজার মা-বোনের ওপর পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছি। তাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করে আজীবন ক্ষমতায় থাকা। সেদিন কোথায় ছিল মানবতা, কোথায় ছিল গণতন্ত্র, কোথায় ছিল আইনের শাসন।”

আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “বাঙালি জাতির শোকের মাস আগস্ট। বারবার এই মাসেই বাঙালি জাতির ওপর আঘাত এসেছে। সবচেয়ে বড় আঘাত এসেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। এরপর ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়ংকর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারাদেশের ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা হয়েছিল। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিল।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা কারও দয়ায় বা কোনো মেজরের হুইসেলে আসেনি উল্লেখ করে হানিফ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস লড়াই-সংগ্রাম করে আমরা দেশ স্বাধীন করেছিলাম। পাকিস্তানিরা যখন বুঝতে পেরেছিল তাদের পরাজয় নিশ্চিত তখন তারা পুরো দেশকে পোড়া মাটির ভূ-খণ্ড বানিয়ে দিয়েছিল। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে মাত্র সাড়ে তিন বছরে দেশ পুনর্গঠন করেছিলেন। প্রশাসন, অফিস আদালত ঠিক করেছিলেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী, বিডিআর গঠন করেছিলেন। সংবিধান রচনা করে দেশকে উন্নয়নের ধারা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন- ঠিক সেই সময়ে জাতির মহান নেতাকে সপরিবার হত্যা করা হয়।”

জাতির পিতাকে হত্যায় কে বা কারা জড়িত ছিল, এমন প্রশ্ন রেখে হানিফ বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি পঁচাত্তরে আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল ফারুক রশীদরা ছিল ভাড়াটে খুনি, ভাড়াটে লাঠিয়াল। এর মূল শক্তি ছিল পাকিস্তান ও একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতা করা পশ্চিমা পরাশক্তি। একাত্তরের পরাজয়ের চরম প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তারা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যা করেছিল। আর নেপথ্যে মূল কুশীলব হিসেবে কাজ করেছিল খুনি জিয়া।”

বঙ্গবন্ধু হত্যায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন তার প্রমাণ তিনি রেখে গেছেন মন্তব্য করে হানিফ বলেন, “বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেখে আমরা ভেবেছিলাম এরাই বোধ হয় মূল হোতা। কিন্তু তারাই পরে বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের কাছে বলেছে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরিকল্পনা তার কাছ থেকে পেয়েছে, তার পরামর্শ, সমর্থন এবং তার নির্দেশে তারা এগিয়ে গেছে। জিয়া যে বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব ছিল তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আইনের আওতায় না এনে তাদের পুরস্কৃত করেছে, তাদের প্রমোশন দিয়েছেন। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চিরতরে রুদ্ধ করেছিলেন।”

মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, “বঙ্গবন্ধু হত্যার কুশীলব কারা তা জাতি জানতে চায়। কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। জাতি জানতে চায় বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কারা ক্ষমতা দখল করে কারা স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ধ্বংস করেছিল। কারা বারবার দেশের উন্নয়ন, অগ্রযাত্রা ব্যথাহত করতে চায়, জাতি জানতে চায়।”

হানিফ বলেন, “বিএনপি নেতা কথায় কথায় আন্দোলন করেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন। তারা বলেন, খালেদা জিয়ার নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে। আপনারা কোন মুখে মানবাধিকারের কথা বলেন? কীসের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে? আমরা তো তার বিরুদ্ধে মামলা করিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তৎকালীন আইন উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় সন্দেহাতীত প্রমাণ হওয়ায় তার দণ্ড হয়েছে। আপনাদের এতো বাঘা বাঘা আইনজীবী। ৬২ বার তারিখ নিয়েছেন খালেদাকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য, কিন্তু পারেননি। খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছেন এটা ডকুমেন্টেড প্রমাণিত। একজন দণ্ডপ্রাপ্ত কয়েদি তার নাকি মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।”

মাহবুবউল আলম হানিফ আরও বলেন, “ইতিহাসের চরম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট। আজকে বিশ্বের বড় বড় দেশ সবক দিচ্ছে, মানবতার জ্ঞান দিচ্ছে। নিজেরা একটু পেছন ফিরে তাকান। ১৯৭৫ সালে সবচেয়ে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছিল- তখন কোথায় ছিল আপনাদের মানবাধিকার। আর আজকে খুনিদের পক্ষ হয়ে নসিহত করতে এসেছেন।”

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়াম লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ। এছাড়া প্রধান বক্তা ছিলেন, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক কে এম আজম খসরু।

Link copied!