পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, “১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গণহত্যার মাধ্যমে যে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছিল, তার মূল নায়ক ছিল পুলিশ কমিশনার রকিবুল হুদা। তাকে এরশাদ সাহেবও প্রমোশন দিয়েছেন। পরবর্তীতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াও প্রমোশন দিয়েছেন।”
বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ‘চট্টগ্রাম গণহত্যা দিবস’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হাছান মাহমুদ বলেন, “সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যেই বৃষ্টির মতো গুলি ছুঁড়ে ২৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে। এর দায়ে পুলিশ কমিশনারকে অভিযুক্ত করা হয়নি, বরং পুরস্কৃত করা হয়েছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ পৃথিবীর সামনে একটি গর্বিত দেশ। ন্যাম সামিটে জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথ সেক্রেটারিসহ বহু দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আমার বৈঠক হয়েছে। প্রত্যেকেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তিনি আবার নতুনভাবে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। পত্রপত্রিকায় দেখেছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন।”
হাছান মাহমুদ বলেন, “এসব দেখে নির্বাচন কেন করলাম না, বিএনপির মধ্যে এখন এ নিয়ে গভীর হতাশা। সারা পৃথিবী যখন অভিনন্দন জানাচ্ছে, তখন তারা দিশেহারা হয়ে গেছে, খেই হারিয়ে ফেলেছে।”
শেখ হাসিনাকে সাহসী নেত্রী উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “রণাঙ্গনে যেমন সেনাপতি যুদ্ধ পরিচালনা করেন, তেমনি সবসময় জীবন ও মৃত্যুকে হাতের মুঠোয় নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তিনি কখনো বিচলিত হন নাই। ঢাকার বুকে যেদিন নুর হোসেন নিহত হয়, সেদিনও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন।”
নুর দিবসের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “চট্টগ্রামেও ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা মিছিলে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সেদিনও পাখি শিকারের মতো গুলি ছুঁড়ে জননেত্রীকে হত্যার অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। সেদিন নিহতের সংখ্যা ২৪ জন বলা হলেও অনেক লাশ গুম করা হয়েছে। বহু মানুষ আহত হয়েছিলেন। সন্ধ্যায় সমস্ত শহর অন্ধকার করে দেওয়া হয়েছিল। নেত্রীর ট্রাকের আশপাশের কয়েকজন নিহত হয়েছেন। এমনকি নেত্রীকে লক্ষ্য করেও গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। গুলিবর্ষণ খানিকটা থেমে গেলে আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ নেত্রীকে কোর্ট বিল্ডিংয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।”
চট্টগ্রাম সবসময় আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, “১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষণা করার পর, ছয় দফার সমর্থনে প্রথম জনসভা হয় লালদিঘির পাড়ে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে তৎকালীন অবিভক্ত চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হান্নান পাঠ করে শুনিয়েছিলেন। ১৮৫৭ সালে যখন সিপাহি বিদ্রোহ হয় তখন চট্টগ্রাম প্যারেড গ্রাউন্ডে সুবেদার রজব আলী বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। সমগ্র বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত ব্রিটিশ সাম্রাজ্য, যেখানে সূর্য অস্তমিত হতো না, সেই ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন সূর্যসেন এবং চট্টগ্রামকে এগারো দিন স্বাধীন রেখেছিলেন।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সমস্ত প্রতিবন্ধকতাকে উপড়ে ফেলে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ আজ এগিয়ে চলছে। নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে এবং সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় দেশে একটা ভালো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশে-বিদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, “ভোট নিয়ে যারা প্রশ্ন তোলার চেষ্টা করে, তারা আসলে নিজের মুখটা রক্ষা করার জন্য প্রশ্ন উত্থাপন করছে। বিএনপি এখন আগের নেতৃবৃন্দকে বাদ দিয়ে ড. মঈন খানকে নামিয়েছে। সুন্দর সুন্দর কথা বলে তিনি যদি কিছু করতে পারেন।”