অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক একটি কৌশলগত অংশীদারত্বে পৌঁছাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁর সম্মানে আয়োজিত ভোজসভায় বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ আশাবাদ জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ইন্দো-প্যাসিফিক এবং এর বাইরেও সবার অভিন্ন সমৃদ্ধির জন্য কৌশলগত সম্পর্কের দিকে এগিয়ে যেতে পারে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।”
বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধ, জলবায়ু পরিবর্তন ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের একাধিক সংকট মোকাবিলায় ফ্রান্স–বাংলাদেশের অংশীদারত্ব একটি অর্থবহ শক্তি হতে পারে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর থেকে ফ্রান্স বাংলাদেশের বিশ্বস্ত উন্নয়ন সহযোগী। দুই দেশ দায়িত্বশীল ব্যবসা পরিচালনার দিকে আলোকপাত করে একটি শক্তিশালী বাণিজ্য অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।”
ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দ্বিপক্ষীয় সফরে রোববার রাতে ঢাকায় এসেছেন এমানুয়েল মাখোঁ। শেখ হাসিনা বলেন, এই ভোজসভায় ফরাসি প্রেসিডেন্টকে আতিথেয়তা দিতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত ও সম্মানিত বোধ করছেন।
২০২১ সালের নভেম্বরে এলিসি প্রাসাদে ফরাসি প্রেসিডেন্টের উষ্ণ আতিথেয়তার কথা স্মরণ করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এমানুয়েল মাখোঁর উদ্দেশে তিনি বলেন, “আমি আনন্দিত যে আপনি আমার ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন। ফ্রান্স আমাদের হৃদয় ও কল্পনায় একটি বিশেষ স্থানে রয়েছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ফরাসি প্রেসিডেন্টের জন্য বাংলাদেশের অদ্বিতীয় জনপ্রিয় খাবার কাচ্চি বিরিয়ানির স্বাদ নেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। তিনি বলেন, “আমাদের উভয় জাতিই আমাদের রন্ধনপ্রণালি, সংস্কৃতি ও ভাষাগত ঐতিহ্যের জন্য অত্যন্ত গর্বিত। আমাদের দুই জনগোষ্ঠীকে একে অপরের কাছাকাছি আনতে আমাদের দুটি সংস্কৃতির মধ্যে আরও পদ্ধতিগত পন্থা এবং সংমিশ্রণকে উন্নীত করার সময় এসেছে।”
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি কি আমাদের আরেকটি সুস্বাদু খাবার স্থানীয় জনপ্রিয় ফল আমড়ার জুস দিয়ে টোস্ট করার কথা বলতে পারি?”
শেখ হাসিনা বলেন, তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফরাসি বিপ্লবের চেতনায় গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু তার আত্মনিয়ন্ত্রণের সংগ্রামে স্বাধীনতা, সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধের প্রসারে তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’–এ (১৯৭১ সালের ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে) এর প্রতিফলন ঘটেছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার আহ্বান আঁদ্রে মার্লোর মতো বিশ্ব বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল, যারা মুক্তিকামী বাঙালির উদ্দেশ্য সাধনে লড়াই করার জন্য অনেক তরুণকে সংগঠিত করেছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “এটা প্রায়ই আমার মনে হয় যে প্রেসিডেন্ট মাখোঁ তার ফরওয়ার্ড মার্চ আন্দোলনের মাধ্যমে মার্লো ও তাঁর অনুসারীদের গর্বিত উত্তরাধিকার বহন করছেন।”
এমানুয়েল মাখোঁ ভোজসভাস্থলে পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফুলের তোড়া দিয়ে তাকে স্বাগত জানান। এ সময় জাতির পিতার ছোট কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা উপস্থিত ছিলেন।
পেঁয়াজুসহ ধূমায়িত ইলিশ ও সমুচা, স্যুপ, রুটি ও মাখন দিয়ে মাখোঁকে নৈশভোজে আপ্যায়িত করা হয়। এ ছাড়া তার খাবারের তালিকায় ছিল খাসির মাংসের কাচ্চি বিরিয়ানি, গরুর কাবাব, চিকেন কোর্মা, ঐতিহ্যবাহী লুচি ও রোস্টেড লবস্টার।
মিষ্টান্নের মধ্যে ছিল পাটিসাপটা পিঠা, মিষ্টি দই, রসগোল্লা, তাজা ফল, পানীয় ও আনারের জুস, তাজা জুস, জল ও কোমল পানীয়, চা ও কফি।
সূত্র : বাসস