• ঢাকা
  • শনিবার, ১৮ মে, ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ৯ জ্বিলকদ ১৪৪৫
২৮ অক্টোবর

পাল্টা কৌশলে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২৩, ০৯:৫৫ পিএম
পাল্টা কৌশলে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ

২৮ অক্টোবর পাল্টা কৌশল নিয়ে মাঠে থাকবে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। নগরবাসীর জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখ, অলিগলি ও মোড়ে-মোড়ে সতর্ক অবস্থান নেবেন দলটির বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের নামে বিএনপি যদি কোনো ধরনের সংঘাত-সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে তা কঠোরভাবে প্রতিহত করার পরিকল্পনাও রয়েছে দলটির। সেজন্য দলের পক্ষ থেকে একের পর এক বর্ধিত ও কর্মীসভা করা হচ্ছে।

ডিএমপির চিঠির জবাব দিল আওয়ামী লীগ:
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটেই শনিবার (২৮ অক্টোবর) সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা বলেছে, ওই সমাবেশে প্রায় দুই লাখ লোকের সমাগম হবে। সমাবেশের বিকল্প স্থান নির্ধারণসহ সাত বিষয়ে জানতে চেয়ে পুলিশের দেওয়া চিঠির জবাবে এসব কথা বলেছে আওয়ামী লীগ।

‘শান্তি ও উন্নয়ন’সমাবেশের অনুমতি চেয়ে ২০ অক্টোবর পুলিশের কাছে চিঠি দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন। ওই চিঠির জবাবে বুধবার বিকল্প দুটি স্থানের নামসহ সাতটি তথ্য জানতে চায় পুলিশ। সেই চিঠিতে সমাবেশে আগত লোকের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না তা জানতে চায় পুলিশ।

পুলিশের চিঠির জবাবে বৃহস্পতিবার (২৬ আক্টোবর) রিয়াজ উদ্দিনের দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, শনিবারের সমাবেশে লোকসমাগম সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে। সমাবেশে প্রায় দুই লাখ লোকের সমাগম হবে। সমাবেশের বিস্তৃতির বিষয়ে চিঠিতে বলা হয়, সমাবেশটি জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নগর ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ সড়ক, দৈনিক বাংলা মোড় এবং মতিঝিল সড়ক ও স্টেডিয়াম সড়ক পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য এসব স্থানে মাইক লাগানো হবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়, সমাবেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করবেন। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ২৮ অক্টোবর (শনিবার) শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সবধরনের প্রস্তুতি (মঞ্চনির্মাণ ও প্রচার–প্রচারণার কার্যক্রম) ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি গ্রহণ করা দুরূহ ব্যাপার।

আওয়ামী লীগের এ সমাবেশ করছে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। চিঠিতে দলটির পক্ষ থেকে সমাবেশস্থল ও তার কাছাকাছি এলাকায় প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাসহ সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতা দিতে পুলিশের কাছে অনুরোধ করা হয়েছে।

দলটির শীর্ষ নেতারা বলছেন, বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কোনো ধরনের বাধা দেওয়া হবে না। তবে সংঘাত-সহিংসতা করলে কঠোরভাবে প্রতিহত করা হবে। এদিকে একই দিনে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি নিয়ে অনড় অবস্থান থাকায় সংঘাত-সহিংসতার বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

দু-দলের মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের রাজনীতির টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে ২৮ অক্টোবর। এদিন নির্ধারণ হতে পারে দেশের রাজনীতি ও আন্দোলন-সংগ্রামের গতিপথ। ফলে এখন পর্যন্ত দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের সংঘাত-সহিংসতা না হলেও ২৮ অক্টোবর থেকে দেশের রাজনীতিতে আরও উত্তাপ্ত ছড়াতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

সর্বশেষ বুধবার তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা শাখার কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর ও জেলা আওয়ামী লীগের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, “রাস্তা ছাড়বেন না। আক্রমণও করব না। এইবার সতর্ক পাহারায় আছি। তবে আক্রমণ করলে পাল্টা আক্রমণ হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কেন ছাড়ব? অপশক্তিকে রুখতে হবে একসঙ্গে।”

দলীয় সূত্রে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময় যতোই কমিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে দেশের রাজনীতি। সরকারবিরোধী আন্দোলনে মনযোগী মাঠের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। সারা দেশ থেকে নেতাকর্মী নিয়ে আগামী ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বড় ধরনের শোডাউন করতে চায় দলটি। তবে ২৮ অক্টোবর রাজধানী ঢাকা পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। ওইদিন বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবেই ঢাকা দখল করতে না পারে। সেজন্য ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর উপস্থিতি থাকবে। আশপাশের জেলাগুলোতে আলাদা দৃষ্টি রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

মূলত আন্দোলনের নামে বিএনপি বড় ধরনের অঘটন ঘটাতে পারে এমন শঙ্কা থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন ক্ষমতাসীনরা। তবে অকারণে বিএনপির সঙ্গে বিশৃঙ্খলাতে না জড়ানোর নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে দলের হাই কমান্ড থেকে। কর্মসূচি ঘিরে যদি কেউ বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির চেষ্টা করে- তাহলে পাল্টা জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা আছে আওয়ামী লীগের।

বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে মাসব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী যুবলীগ। শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত সংসদীয় আসন ভিত্তিক শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা করবে সংগঠনটি। ২৯ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের অন্তর্গত সংসদীয় আসন ভিত্তিক ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ। ৩০ অক্টোবর দেশের সব মহানগরে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ। ১ নভেম্বর দেশের সব জেলায় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ। ২ নভেম্বর দেশের সব উপজেলা-থানা-পৌরসভায় ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ সমাবেশ। এসব কর্মসূচির মাধ্যমেই যুবলীগের নেতাকর্মীরা নির্বাচন পর্যন্ত মাঠে থাকবে বলে জানা গেছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথক পৃথক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম বলেন, “আমরা যখন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছি তখন বিএনপি টেকব্যাক বাংলাদেশ বলে দেশকে পিছিয়ে দিতে চায়। তারা চিন্তা করে আফগানিস্তান বা বিভিন্ন দেশে যেমন পুতুল সরকার বসানো হয়েছিল ঠিক সেইভাবে নির্বাচনকে বানচাল করে একটা পুতুল সরকার বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হবে সেই স্বপ্ন দেখছে তারা। বিএনপি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে মিশে সেই ষড়যন্ত্রে মশগুল। গতকাল দুপুরে মুন্সীগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের কর্মীসভায় তিনি এসব কথা বলেন।”

Link copied!