দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেতেই রাজধানীতে পরপর দুটি বড় সমাবেশের মাধ্যমে নিজেদের শক্তির জানান দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে আওয়ামী লীগের বড় দুটি সমাবেশের পর দলের কেন্দ্র ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে এক ধরনের সন্তুষ্টি কাজ করছে। এখন বিরোধী দল বিএনপি নতুন করে কেমন কর্মসূচি দেয়, সেদিকেই নজর রাখছে সরকারি দলটি। বিরোধী দলের কর্মসূচি দেখেই মাঠে নতুন কর্মসূচি সাজাতে টানা তিন মেয়াদে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দলটি।
তবে দ্বাদশ নির্বাচনে রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির আন্দোলনে বড় কোনো চাপ অনুভব করছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষপর্যায়ের নেতারা। একইসঙ্গে তারা পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির অবস্থানে বিশ্বাস করেন না বলে জানান। যদিও নির্বাচনের আগে এই (চার) কয়েক মাস আগে মাঠের নিয়ন্ত্রণ বিরোধী দলের হাতে একতরফা ছেড়ে দিতেও রাজি নন। এতে বিরোধী দল পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করলে, সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া দেখানোর কৌশল নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
মাঠের রাজনীতিতে বিরোধী দলের এক দফার আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি না থাকায় এই মুহূর্তে কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না আওয়ামী লীগও। বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ‘গায়েবি মামলা’ করা হচ্ছে এবং বিরোধী দলের সক্রিয় নেতা কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে বলে বিএনপি অভিযোগ তুলেছে। যদিও সরকার এমন অভিযোগ অস্বীকার করছে।
চলতি সেপ্টেম্বরে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে এমনটা মনে করছেন না আওয়ামী লীগের নেতারা। অক্টোবরের দিকে হয়তো বিএনপি টানা কর্মসূচি নিতে পারে। তখন আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি নেবে। গত ১ সেপ্টেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের সমাবেশ এবং ২ সেপ্টেম্বর আগারগাঁওয়ে সুধী সমাবেশ বিপুল জমায়েত হয়।
সরকারি দলের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, “চলতি মাসের ১ ও ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে দুটি সমাবেশের মূল লক্ষ্য ছিল দেশে-বিদেশে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি এবং অবস্থানের জানান দেওয়া। আওয়ামী লীগের এই পরিকল্পনা পুরোপুরি সফল বলে মনে করেন নেতারা। সে কারণে তারা এখন কর্মসূচি না রেখে ধীরগতিতে এগোতে চাইছেন। তবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কিছু সমাবেশ আগেই ঠিক করা ছিল। সেই সমাবেশগুলো তারা করবেন।”
গত ২৮ জুলাই বিএনপি ঢাকার নয়াপল্টনে বিপুল মানুষের উপস্থিতিতে মহাসমাবেশ করে। ওই দিন আওয়ামী লীগও জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে বড় সমাবেশ করে। এরপর বিএনপি মানববন্ধন, লিফলেট বিতরণ, বিক্ষোভ মিছিলের মতো কর্মসূচি পালন করেছে। এ সময় আওয়ামী লীগও পাল্টা কর্মসূচি থেকে বিরত রয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর একজন দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে। তিনি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “বিএনপির পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার বিষয়টি এখন অগ্রাধিকারে নেই আওয়ামী লীগের। বরং দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা যেসব সমাবেশে যাচ্ছেন, সেগুলোতে বিপুল জমায়েত নিশ্চিত করা প্রধান লক্ষ্য। একই সঙ্গে দলের নেতাদের প্রস্তুত রাখা, সতর্ক থাকা, স্বল্প সময়ের নির্দেশনায় জমায়েত করার পরিকল্পনাও রেখেছে আওয়ামী লীগ। বিশেষ করে ঢাকায় এক ধরনের সতর্ক পর্যবেক্ষণ সব সময় থাকবেই।”
তবে দলের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, বিএনপি গত বছর ১০ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না পেরে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করে। এতে দলটির নেতাকর্মীদের মনোবলে ধাক্কা খায়। এরপর পুনরায় সংগঠিত হতে কয়েক মাস সময় লেগে যায় তাদের। এরপর ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি সফল না হওয়ায় এখনো বড় কর্মসূচি নিতে পারেনি বিএনপি। সর্বশেষ সেপ্টেম্বরে দলটি ঘুরে দাঁড়িয়ে সরকারকে চাপে ফেলতে পারবে এমনটা মনে করছেন না সরকারি দলের নেতারা। আগামী মাসের অক্টোবরের দিকে হয়তো বিএনপি টানা কর্মসূচি নিতে পারে। তখন আওয়ামী লীগ পরিস্থিতি বিবেচনা করে কর্মসূচি নেবে।”
কূটনৈতিক চাপ সামলানোই বড় চ্যালেঞ্জ
শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) ভারত সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখান থেকে ফেরার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বাংলাদেশ সফর করবেন। এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে গাবতলী, মিরপুর ও গুলশান হয়ে ভাটারা পর্যন্ত মেট্রোরেল পথের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ওইদিন সাভারে সমাবেশে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। সাভারেও ঢাকার সমাবেশের মতো বড় জমায়েত করার পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। পরের দিন ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যেই ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৭তম জন্মদিন। এই দিনটি আওয়ামী লীগ প্রধানমন্ত্রীর অনুপস্থিতিতে পালন করবে। এর বাইরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে নির্ধারিত কোনো কর্মসূচি নেই আওয়ামী লীগের।
অক্টোবরে সিলেট, বরিশাল ও খুলনায় বিভাগীয় সমাবেশ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন উপলক্ষে ফরিদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে সমাবেশে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। অর্থাৎ অক্টোবরে টানা কর্মসূচি রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, “আওয়ামী লীগ রাজপথে চ্যাম্পিয়ন, এটা ঢাকার দুটি সমাবেশে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ নিজেদের মতো কর্মসূচি অব্যাহত রাখবে।”