বিএনপি ও জামায়াতপন্থী ৫ চিকিৎসকসহ ১২ জনকে মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা কোচিং সেন্টারের আড়ালে পরীক্ষার্থীদের কাছে এই প্রশ্ন সরবরাহ করতেন।
সিআইডি বলছে, চক্রটি ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত শতশত মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীর কাছে প্রশ্ন সরবরাহ করেছে। এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করেছে, যা দেশে বিলাসবহুল জীবন ও বিদেশে পাচার করেছেন তাদের চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে।
গ্রেপ্তাররা হলেন- ডা. ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধান (৫০), ডা. সোহেলী জামান (৪০), ডা. মোহাম্মদ আবু রায়হান, ডা. জেডএম সালেহীন শোভন (৪৮), ডা. মো. জোবায়দুর রহমান জনি (৩৮), ডা. জিল্লুর হাসান রনি (৩৭), ডা. ইমরুল কায়েস হিমেল (৩২), জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া মুক্তার (৬৮), রওশন আলী হিমু (৪৫), আখতারুজ্জামান তুষার (৪৩), জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পি (৪৫) ও আব্দুল কুদ্দুস সরকার (৬৩)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১৯টি মোবাইল ফোন, ৪টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ব্যাংক কার্ড, ভর্তির এডমিট কার্ড, দুই লাখ ১১ হাজার টাকা, থাইল্যান্ডের মূদ্রা ১৫ হাজার ১০০ বাথ জব্দ করা হয়েছে।
রবিবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির সদর দপ্তরের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী।
![](https://86818.cdn.cke-cs.com/QOKezuxUuZpoGw7a0M0R/images/7adc7b116fa18790599ee82fe8e080b1d61b3dd1fc5d6195.jpg)
সিআইডি প্রধান বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষা এলেই প্রশ্ন ফাঁস চক্র সক্রিয়া হয়ে ওঠে। শিক্ষাখাতের ক্যানসার হিসেবে বিবেচিত এসব প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রকে নির্মূল করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাগুলোতে নিয়মিত প্রশ্ন ফাঁসকারী বিশাল এক সিন্ডিকেটের খোঁজ পায় সিআইডির সাইবার পুলিশ।
এ ঘটনায় মিরপুর মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, চক্রটির অন্তত ৮০ সদস্য প্রায় ১৬ বছর ধরে হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্ন দিয়ে মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি করিয়ে শত কোটি টাকা আয় করেছে।
এই ঘটনায় জড়িতদের ঢাকা, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডির সাইবার টিম। গ্রেপ্তারকৃত ১২ জনের মধ্যে ৭ জনই ডাক্তার। এদের প্রায় সবাই বিভিন্ন মেডিকেল ভর্তি কোচিং সেন্টার, নয়তো প্রাইভেট পড়ানোর আড়ালে প্রশ্নফাঁস করতেন।
অতিরিক্ত আইজিপি মোহাম্মদ আলী জানান, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৮ জন তাদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। যাতে শতাধিক শিক্ষার্থীর নাম উঠে এসেছে, যারা প্রশ্ন পেয়ে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। ইতোমেধ্যে অনেকে পাস করে ডাক্তারও হয়ে গেছে। এদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার কাজ প্রক্রিয়াধীন আছে।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের কাছ থেকে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের দেওয়া বিপুল পরিমাণ ব্যাংকের চেক এবং এডমিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। যেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এছাড়াও মাস্টারমাইন্ড জসীম উদ্দিন ভূঁইয়ার কাছ থেকে একটি গোপন ডায়েরি উদ্ধার করা হয়, যেখানে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা তার চক্রের অন্য সদস্যদের নাম রয়েছে। সেসব সদস্য ধরতে সিআইডির অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
তদন্তে উঠে এসেছে, ২০০১ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১৬ বছরে অন্তত ১০ বার এই চক্র মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস করেছে। এদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে, যেগুলো মানিলন্ডারিং মামলায় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার ডা. ময়েজ উদ্দিন প্রশ্ন ফাঁস চক্রের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড। মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করে ফেইম নামের একটি কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে মেডিকেল প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়ান তিনি। গত ২০ বছর এভাবে শতশত শিক্ষার্থীকে ভর্তি করিয়েছেন। ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা ময়েজ বর্তমানে জামায়াতের চিকিৎসক হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে দুটি মানিলন্ডারিং মামলা রয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও ছাত্রদলের রাজনীতি করা গ্রেপ্তার অন্য চিকিৎসকরা হলেন- সালেহীন শোভন, জোবাইদুর রহমান, জিল্লুর হাসান রনি ও জহির উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী। তারা সবাই ২০০৫ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হন। এরপর বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আড়ালে প্রশ্ন ফাঁস করে আসছিলেন।
আপনার মতামত লিখুন :