• ঢাকা
  • সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩০, ২০ রজব ১৪৪৬

রেইন ট্রি হোটেল ও আনভীর-মুনিয়ার ঘটনাতেও ছিলেন পিয়াসা


সুব্রত চন্দ
প্রকাশিত: আগস্ট ২, ২০২১, ০২:০৩ পিএম
রেইন ট্রি হোটেল ও আনভীর-মুনিয়ার ঘটনাতেও ছিলেন পিয়াসা

উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল ও মাদক সেবনের অভিযোগে আটক হয়েছেন মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। রোববার (১ আগস্ট) মধ্যরাতে রাজধানীর বারিধারার একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একটি দল। এ সময় তার বাসা থেকে মদ, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য সেবনের সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা আটকের পর গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে তাকে নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তবে এবারই প্রথম আলোচনায় আসেননি এই মডেল। ২০১৭ সাল থেকে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনায় বারবার উঠে এসেছে তার নাম। কিন্তু কে এই পিয়াসা?

আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলেকে ফাঁদে ফেলে বিয়ে

২০০৯ সালের এনটিভি’র রিয়েলিটি শো ‘সুপার হিরো, সুপার হিরোইন’ অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতা করার মাধ্যমে প্রথম শোবিজ জগতে পা রাখেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। এরপর বেশ কয়েক বছর মডেলিং করে ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি বিয়ে করেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে শাফাত আহমেদকে। তবে দুই বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ৮ মার্চ তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয় বলে জানান দিলদার আহমেদ। এ নিয়ে তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়।

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম তখন অভিযোগ করেন, পিয়াসা মাদকাসক্ত ও উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তিনি ফাঁদে ফেলে শাফাতকে বিয়ে করেন। তাই তাকে তালাক দেন শাফাত।

রেইন ট্রি কাণ্ডে দুমুখো চরিত্র

২০১৭ সালেই দেশজুড়ে বহুল আলোচিত রেইন ট্রি কাণ্ডে ফের নাম আসে পিয়াসার। ওই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে জন্মদিনের পার্টির কথা বলে দুই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাতের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় করা মামলার এজাহারে নাম ছিল পিয়াসার। তখন অভিযোগ ওঠে শাফাতের বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ মামলার নেপথ্য কারিগর হিসেবে ছিলেন পিয়াসা। তিনি শাফাতের বিরুদ্ধে মামলা করতে প্রথমে ভুক্তভোগীকে সহযোগিতা করেন। এই মামলায় তিনি আদালতে সাক্ষ্যও দিয়েছেন। যদিও পরবর্তীকালে আবার তিনিই মামলা তুলে নিতে ভুক্তভোগীকে হুমকি দেন। এই বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিল সেই ভুক্তভোগী।

রেইন ট্রি হোটেলে ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় প্রথমে শাফাতসহ অন্য আসামিরা গ্রেপ্তার হলেও পরবর্তীকালে জামিনে মুক্তি পান। বর্তমানে মামলাটি আদালতে বিচারধীন আছে।

পিয়াসার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ

রেইন ট্রি কাণ্ডের দুই বছরের মাথায় পুনরায় আলোচনায় আসেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। ২০১৯ সালের ৫ মার্চ চাঁদা দাবির অভিযোগে পিয়াসার বিরুদ্ধে মামলা করেন আপন জুয়েলার্সের কর্ণধার দিলদার আহমেদ সেলিম। তিনি পিয়াসার সাবেক শ্বশুর। মামলার পর পিয়াসা ঢাকা মহানগর মূখ্য হাকিম তোফাজ্জল হোসেনের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন এবং জামিন আবেদন করেন। মামলাটি জামিনযোগ্য হওয়ায় বিচারক তাকে জামিন দেন।

আপন জুয়েলার্সের কর্ণধারের বিরুদ্ধে গর্ভপাত ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম যেদিন তার সাবেক পুত্রবধুর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করেছেন, ঠিক তার কয়েকদিন পর সাবেক শ্বশুরের বিরুদ্ধে নির্যাতন ও গর্ভপাতের চেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন পিয়াসা। ২০১৯ সালের ১১ মার্চ দিলদারের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন তিনি। তখনো আরেকদফা আলোচনার কেন্দ্রে আসেন পিয়াসা।

মামলার অভিযোগে পিয়াসা বলেন, দিলদার আহমেদ চাননি শাফাত এবং তার বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট থাকুক। এজন্য দিলদার আহমেদ বিভিন্ন সময় তাকে মানসিক নির্যাতন করেছিলেন। এমনকি শাফাত নানা অনৈতিক কাজে লিপ্ত হলেও দিলদার তাতে বাধা দেননি। উল্টো সহযোগিতা করেছেন। শেষ তাকে তালাক দেওয়ার জন্য শাফাতকে বাধ্যও করেছিলেন। তা না হলে শাফাতকে ত্যাজ্যপুত্র করার হুমকি দিয়েছিলেন দিলদার।

মামলায় পিয়াসা আরো অভিযোগ করেন, রেইন ট্রি কাণ্ডে শাফাত যখন কারাগারে বন্দি, তখন দিলদার আহমেদ তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেছেন। পরে শাফাত জামিনে ছাড়া পাওয়ার পর স্বামীকে এসব ঘটনা বলায় শ্বশুর আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে শাফাত আবার কারাগারে গেলে দিলদার ফের তাকে নির্যাতন করেন। এক সময় তার অন্তঃসত্তা হওয়ার খবর পেয়ে তাকে গর্ভপাত করার জন্য চাপ দেন। এমনকি মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দেন। তবে ওই বছরের ১৭ জুলাই আদালতে দাখিল করা মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, পিয়াসার করা ওইসব অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. মজিবুর রহমান।

মুনিয়া-আনভীর কাণ্ডে পিয়াসা!

আপন জুয়ালার্সের সঙ্গে কাঁদা ছোড়াছুড়ির পর বেশ কয়েক বছর আলোচনার বাইরে ছিলেন ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া মুনিয়া ও আনভীর কাণ্ডে ফের একবার গণমাধ্যমের শিরোনাম হন তিনি। চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল গুলশানের ১২০ নম্বর রোডের একটি বাড়ির ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় নিহতের বড় বোন নুসরাত জাহান তানিয়া তার ছোট বোনকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এই মামলার এজাহারেও নাম ছিল পিয়াসার।

মামলার এজাহারে বলা হয়, মুনিয়া ও আনভীরের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মুনিয়া যে ফ্ল্যাটে ছিল, সেই ফ্ল্যাটের মালিকের বাসায় গিয়ে ইফতার করায় এবং ছবি তোলায় চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল তাকে বকাঝকা করেন আনভীর। আর সেই ছবি আনভীরের মাকে দেখিয়েছিলেন আলোচিত এই পিয়াসাই।

এ বিষয়ে তখন পিয়াসার বক্তব্য ছিল, মুনিয়া সাইকো ও লোভী ছিল। সে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার জন্য আনভীরের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রাখছিল। তাই পিয়াসা আনভীরের সংসার বাঁচানোর জন্য তার মাকে ছবি দেখিয়েছিল।

অবশেষে আটক পিয়াসা

বারবার আলোচনায় আসা এই পিয়াসাকেই রোববার (১ আগস্ট) মধ্যরাতে আটক করে ডিবি। তাকে আটকের পর ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ গণমাধ্যমকে বলেন, “পিয়াসা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তিনি রাতের রানী বলেই সুপরিচিত। সারা দিন ঘুমিয়ে কাটাতেন এবং রাতে বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানদের টার্গেট করে বাসায় ডেকে আনতেন। এরপর বাসায় গোপনে তাদের আপত্তিকর ছবি তুলতেন। সেই ছবি বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের দেখানোর ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন।”

হারুন অর রশিদ আরও বলেন, “আমরা পিয়াসার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইল করার অনেকগুলো অভিযোগ তদন্ত করছিলাম। সেই তদন্তের অংশ হিসেবে পিয়াসার বাসায় অভিযান চালানো হয়। তার বাসা থেকে বিদেশি মদ ও ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্য সেবনের নানা সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। ব্ল্যাকমেইলিং করার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এ ছাড়া যেহেতু মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে, এ জন্য গুলশান থানায় মামলা করা হবে।”

একই রাতে মোহাম্মদপুর থেকে আরেক মডেল মরিয়ম আক্তার মৌকেও আটক করে পুলিশ। পুলিশের দাবি পিয়াসা ও মৌ একই চক্রের সদস্য।  
 

Link copied!