এখন আর আগের মতো প্রেমের চিঠি যেমন লেখা হয় না, তেমনি কার্ডেও আর কেউ খুব একটা প্রেমের বাণী পৌঁছে দেয় না ভালোবাসার মানুষটির কাছে। অথচ বছর দশেক আগেও প্রিয় মানুষটিকে মনের কথা জানাতে গিফট ও কার্ড দেওয়ার চল ছিল বেশ ভালোই। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে ভিড় সামলাতে হতো হলমার্ক বা আর্চিজ গ্যালারিকে। বাঙালির জীবনে আবার শুধু ভালোবাসা দিবস নয়, আসে বসন্তদিন, একই সঙ্গে। তাই উপহার দেওয়া-নেওয়া হয়ে উঠেছিল এক রীতি। কিন্তু সেসব দিন আজ অনেকটাই ম্লান হওয়ার পথে, আধুনিক প্রযুক্তি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে। অন্তত দোকানিদের দাবি অনেকটা এমনই।
রাজধানীর হাতিরপুল এলাকার সোনারগাঁও রোডে কয়েক বছর আগেও তিনটি গিফট কার্ডের দোকান ছিল। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে রমরমা ব্যবসা হতো তাদের। কার্ডের পাশাপাশি বিক্রি হতো টেডিবিয়ার, পুতুল ও নানা ধরনের শোপিস। তবে সেসব দোকানের দুটোই এখন আর নেই। টিকে আছে আইস-কুল নামের শুধু একটি দোকান।
দোকানের কর্মচারী রবিউল ইসলাম জানান, ইস্টার্ন প্লাজার পাশে এই জায়গাটিতে গত ২৮-৩০ বছর ধরে তারা ব্যবসা করছেন। তাদের পাশেই ছিল হলমার্ক ও আর্চিজ নামের আরও দুটি দোকান। সব কটি দোকোনেই বাহারি রঙের গিফট কার্ড ও গিফট বিক্রি হতো। বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের আগে জমে উঠত বেচাকেনা। গত কয়েক বছর ধরে বেচাবিক্রি অনেক কমে গেছে। তাই হলমার্ক ও আর্চিজ তাদের ব্যবসা গুটিয়ে এখান থেকে চলে গেছে। নিজেদের জায়গায় দোকান হওয়ায় আইসকুল এখনো কোনোমতে টিকে আছে। তবে আগের মতো আর ক্রেতা নেই।
বেচাবিক্রি কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে রবিউল বলেন, “আগে মানুষের হাতে খুব একটা প্রযুক্তি ছিল না। গিফট কার্ডই ছিল মনের কথা জানানোর ভালো উপায়। কিন্তু এখন সবার হাতে হাতে স্মার্টফোন। একে অন্যের সঙ্গে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপেই কথা বলে। সেখানেই মনের কথা বলে। তাই কার্ডের বেচাবিক্রি অনেকটা কমে গেছে।”

রবিউল আরও বলেন, “২০০৮-১০ সালে আমাদের ব্যবসা জমজমাট ছিল। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের পুতুল, গিফট কার্ড, শোপিস বিক্রি হতো। এখন প্রতিটি পাড়া মহল্লায় এই ধরনের গিফটের দোকান গড়ে উঠেছে। তাই মানুষ ঘরের কাছ থেকেই কেনাকাটা করে। তারপরও আমাদের কিছু ক্রেতা আছেন, যারা আমাদের কাছ থেকেই তাদের মনের মানুষের জন্য গিফট কিনে নিয়ে যান।”
রবিউলের সঙ্গে কথা বলার মাঝেই দোকানে প্রবেশ করেন জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক ডা. তাইয়েব ইবনে জাহাঙ্গীর। বিশ্ব ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে স্ত্রীর জন্য গিফট কার্ড কিনতে এসেছেন। প্রতিটি বিশেষ দিবসেই এই দোকান থেকে তিনি স্ত্রীর জন্য কার্ড ও গিফট কেনেন।
ডা. তাইয়েব বলেন, “যখন প্রেম করতাম তখন প্রেমিকাকে এই দোকান থেকে কার্ড দিতাম। সেই প্রেম বিয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে। তবে ভালোবাসার মানুষটিকে এখনো কার্ড দেওয়া থামাইনি। হয়তো সময় পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু আমরা পরিবর্তন হয়নি। বিশেষ বিশেষ দিনে কার্ড পাওয়ার পর আমার স্ত্রী বেশ খুশি হয়। কখনো কখনো সে চমকেও ওঠে।”
প্রিয়জনকে কার্ড দেওয়ার সংস্কৃতি এখন অনেকটা হারিয়ে গেছে উল্লেখ করে ডা. তাইয়েব বলেন, “আগে আমাদের সময় ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ তেমন একটা ছিল না। তাই আমরা আমাদের ভালোবাসার প্রকাশটা করতাম চিঠি লিখে, কার্ড দিয়ে বা বই গিফট দিয়ে। এখন অনেক কিছু পরিবর্তন হয়েছে। নতুন প্রজন্ম এখন পছন্দ করে একসঙ্গে খেতে যেতে, ঘুরতে। এই কারণে কার্ড দেওয়ার সংস্কৃতিটা এখন অনেকটা কমে গেছে। তবে আমাদের প্রজন্মের যারা তারা এখনো প্রিয়জনকে কার্ড দিতেই বেশি পছন্দ করি।”




































