• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২,
  • ২ জমাদিউস সানি, ১৪৪৭
৪৫তম বিসিএস

তিন লাখ আবেদনকারীর মধ্যেও পাওয়া গেল না যোগ্যতা—ফাঁকা ৫০২ পদ


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: নভেম্বর ২৭, ২০২৫, ০৯:৫৪ এএম
তিন লাখ আবেদনকারীর মধ্যেও পাওয়া গেল না যোগ্যতা—ফাঁকা ৫০২ পদ

বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তিন বছর পর অবশেষে প্রকাশিত হলো ৪৫তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফলাফল। তবে প্রত্যাশার বিপরীতে দুই হাজার ৩০৯টি ক্যাডার পদের মধ্যে ৫০২টি পদই শূন্য থাকছে—যা একক কোনো বিসিএসে এত বিপুলসংখ্যক পদ ফাঁকা থাকার নজির সৃষ্টি করল। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) বলছে, বেশ কিছু পেশাগত ও কারিগরি ক্যাডারের জন্য যোগ্য আবেদনকারী না পাওয়ার কারণেই এসব পদ পূরণ করা যায়নি।

এদিকে প্রার্থীরা বলছেন—এটি পিএসসির “পরিকল্পনার ব্যর্থতা” এবং “যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়ায় অদূরদর্শিতা”।

যোগ্য প্রার্থী না থাকায় শূন্য ৫০২ পদ: পিএসসির ব্যাখ্যা

পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এসএম মতিউর রহমান জানান, বিশেষ করে পরিবার পরিকল্পনা, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারেই বড় ধরনের শূন্যতা দেখা গেছে। শুধু পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারেই ৪৪০টি পদে কোনো উপযুক্ত প্রার্থী পাওয়া যায়নি।

পিএসসির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এসব ক্যাডারে নির্দিষ্ট শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকা বাধ্যতামূলক হওয়ায় অনেক প্রার্থী চূড়ান্ত মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেননি।

চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভ—“যোগ্য না পাওয়া নয়, যোগ্য প্রার্থীই কম দেখানো হয়েছে”

চূড়ান্ত ফলে বিপুল সংখ্যক পদ ফাঁকা থাকায় ক্ষুব্ধ চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের অভিযোগ—

প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় অত্যন্ত কম সংখ্যক প্রার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণের সংখ্যাও ছিল অস্বাভাবিকভাবে কম, ফলে মৌখিকে পদের বিপরীতে খুব কম সংখ্যক প্রার্থী উপস্থিত হওয়ায় অনেক আসনই শেষ পর্যন্ত খালি থেকে গেছে।

তাদের হিসাব অনুযায়ী— ২৩০৯টি পদের বিপরীতে প্রিলিতে পাস করানো হয়েছে মাত্র ১২,৭৮৯ জনকে (প্রতি পদের বিপরীতে ৫–৬ জন), লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৬,৫৫৮ জন (প্রতি পদের বিপরীতে প্রায় ২.৮৪ জন)

অর্থাৎ মৌখিকে প্রতিটি পদের বিপরীতে অংশ নিয়েছেন মাত্র ৩ জন—যেখানে একজন বাদ পড়লেই পদ শূন্য।

প্রার্থীরা বলছেন, আগে প্রতিটি শূন্যপদের বিপরীতে মৌখিকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকত ১০ জনের। কিন্তু এখন এই সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট আমজাদ হোসেন বলেন, “প্রিলিতে উচ্চ কাট–মার্কস দিয়ে প্রার্থী কমানো হচ্ছে। ফলে একেকটি শূন্যপদের বিপরীতে মাত্র ৫ জনকে মৌখিকে পাঠানো হচ্ছে। এতে একজন বাদ দিলেই পদ শূন্য।”

রাজশাহী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থীও একই অভিযোগ করেন।

চাকরিপ্রার্থীদের হিসাব বনাম পিএসসির পূর্বের বিসিএস অভিজ্ঞতা

পূর্ববর্তী বিসিএসগুলোতে এত বড় ঘাটতি ছিল না— ৪০, ৪১, ৪৩ ও ৪৪ বিসিএস মিলিয়ে শূন্য পদ ছিল মোট ৩৬১টি। কিন্তু ৪৫তম বিসিএসেই ফাঁকা থাকছে ৫০২টি—যা পূর্ববর্তী চার বিসিএসের মোট শূন্য পদের সংখ্যাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

পিএসসির হিসাব—আগের বিসিএসগুলোতে:

৪০তমে ফাঁকা ২৫৬, ৪১তমে মাত্র ১৬, ৪৩তমে ৫৫ এবং ৪৪তমে ৩৪ পদ।

প্রার্থীদের দাবি—নতুন নীতি না আনলে সমস্যা আরও বাড়বে

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন— প্রিলিতে প্রতি শূন্যপদের বিপরীতে অন্তত ২০ জনকে উত্তীর্ণ করা, লিখিত পরীক্ষায় প্রতি পদের জন্য কমপক্ষে ১০ জনকে রাখা এবং পেশাগত ক্যাডারে যোগ্যতার মানদণ্ড স্পষ্ট করা প্রয়োজন।

তাদের মতে, তা না হলে ভবিষ্যতেও এ ধরনের বিপুল শূন্যতা তৈরি হবে।

Link copied!