ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর সাইপ্রাসে পাড়ি জমাচ্ছেন অনেক ইহুদি। সাইপ্রাসের লারনাকা শহরের ইহুদি কমিউনিটি সেন্টারটিতে সাধারণত ইহুদি দর্শনার্থীরা যান প্রার্থনা করতে। সেই সঙ্গে সাইপ্রাসে যুক্তরাজ্য পরিচালিত বন্দী শিবিরগুলো সম্পর্কে জানতেও সেখানে যান তারা।
সম্প্রতি গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ বন্দী শিবিরগুলোতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান সেনাদের হত্যাযজ্ঞ থেকে বেঁচে যাওয়া ৫৩ হাজারের বেশি ইহুদিকে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। তারা সেখানে কয়েক বছর বসবাস করে, ১৯৪৯ সালে এই ইহুদিদের শেষ ১০ হাজার জনকে নিয়ে নতুন গঠিত রাষ্ট্র ইসরায়েলে পাড়ি জমান।
লারনাকা শহরের নিরিবিলি এ কমিউনিটি সেন্টারটির চিত্র এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ৭ অক্টোবর হামাসের অতর্কিত হামলার পর ইসরায়েল ছেড়ে বহু ইহুদি ওই কমিউনিটি সেন্টারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে সেখানে সংকটময় পরিস্থিতির দেখা দিলেও একটু শান্তিতে থাকাই তাদের লক্ষ্য।
৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হন। ২৪০ জনের বেশি মানুষ বন্দী হয়ে আছেন হামাসের কাছে।
ইহুদিদের প্রধান ধর্মীয় নেতা অ্যারি রাসকিন বলেন, “প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ইহুদি এই শহরে আসছেন। হামাসের হামলার পর শান্তির খোঁজে সাইপ্রাসে এসেছেন ১৬ হাজারের বেশি ইসরায়েলি।” তিনি জানান, কমিউনিটি সেন্টারটিতে আশ্রয় নেওয়া প্রত্যেক মানুষকে তাদের বিছানা, খাবার, অস্থায়ী থাকার জায়গাসহ সামর্থ্য অনুযায়ী সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। এর জেরে ইসরায়েলে বড় কোনো হামলা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সাইপ্রাসে অনেক ইহুদি।
হামাসের হামলার পর বাইরের অনেক দেশ থেকে সংরক্ষিত সেনাকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে যুক্ত করা হয়েছে। তারা সকলে সাইপ্রাস হয়ে ইসরায়েলে যাচ্ছেন। অ্যারি রাসকিন বলেন, “আর্জেন্টিনার মতো বিভিন্ন দেশ থেকে তরুণ ইহুদি সংরক্ষিত সেনাদের আসতে দেখেছি আমরা। এখন যেসব ঘটনা দেখছি, সাইপ্রাসের মানুষের যে উদারতা দেখছি, তা নিয়ে একটি বই লিখে ফেলতে পারি।”
বিগত কয়েক সপ্তাহে শুধু ইসরায়েলিরা সাইপ্রাসে গিয়েছেন তা নয়। অন্যান্য অনেক দেশের নাগরিকেরাও সেখানে গিয়েছেন। সাইপ্রাসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনস্তান্তিনোস কম্বোস মনে করছেন, সংঘাতের কারণে লেবাননসহ এ অঞ্চলের ১ লাখের বেশি মানুষ সাইপ্রাসে প্রবেশ করেছেন। আর ৭ অক্টোবরের পর থেকে ৩৫ দেশ থেকে ১ হাজারের বেশি নারী, পুরুষ ও শিশু সাইপ্রাসে এসেছেন।
সাইপ্রাস নিরাপদ ‘স্বর্গরাজ্যে’ হিসেবে বলে মনে করেন ইউনিভার্সিটি অব নিকোশিয়ার ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হুবার্ট ফাউস্টম্যান। তিনি বলেন, “সিরিয়া ও লেবানন থেকে যদি বিপুল সংখ্যক শরণার্থী সাইপ্রাসে পালিয়ে এসে থেকে যান, তাহলে পরিস্থিতি বদলে যেতে পারে। সাইপ্রাসে তখন সত্যিকারের বিশৃঙ্খলা ডেকে আনতে পারে।”