বার্ধক্যজনিত কারণে ৯১ বছর বয়সে ফ্রান্সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন কলকাতার ‘দত্তকপুত্র’ ফরাসি লেখক দমিনিক লাপিয়ের। তার স্ত্রী দমিনিক সোঁচোঁ লাপিয়ের ফরাসি সংবাদমাধ্যম ভাখ-মাতাঁকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
‘সিটি অব জয়’, ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’, ‘বিয়ন্ড লাভ’, ‘ফাইভ পাস্ট মিডনাইট ইন ভোপাল’, ‘ইজ প্যারিস বার্নিং’, ‘ইজ নিউ ইয়র্ক বার্নিং’, ‘অ্যা রেনবো ইন দ্য নাইট’ নামের মর্মস্পর্শী সব গ্রন্থের লেখক লাপিয়ের।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা শহরের ইতিকথা, জীবন সংগ্রাম ধরা পড়েছে তার উপন্যাসে। লিখেছেন ভারতের স্বাধীনতা আর মহাত্মা গান্ধী সম্পর্কেও। তার এক-একটি রচনা যেন ইতিহাসের দলিল।

১৯৩১ সালের ৩০ জুলাই ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের সমুদ্র তীরবর্তী শাতেলেইলন শহরে জন্ম লাপিয়েরের। ভারতকে নিজের আত্মার মতোই ভালোবাসতেন, বিশেষত কলকাতাকে। এই শহরের মধ্যে তিনি এক প্রাণ খুঁজে পেয়েছিলেন। যাকে কেন্দ্র করে তার কলম থেকে বেরিয়ে আসে সিটি অফ জয় নামের উপন্যাস। যে উপন্যাস থেকে ১৯৯২ সালে নির্মাণ করা হয় চলচ্চিত্র। ব্রিটিশ পরিচালক ও প্রযোজক রোনাল্ড জোফে এই চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেন।
বইটি থেকে পাওয়া রয়্যালটির অর্থ ভারতের জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে প্রদান করেছিলেন লাপিয়ের। তার এ বদান্যতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভারত সরকার ২০০৮ সালে তাকে ‘পদ্ম ভূষণ’ পদক দিয়ে সম্মানিত করে।
১৯৬৫ সালে প্রকাশিত ‘ইজ প্যারিস বার্নিং?’ বইটি লাপিয়েরের সবচেয়ে বিখ্যাত বই। এ বইটিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ১৯৪৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। ১৯৬৬ সালে প্রখ্যাত ফরাসি চলচ্চিত্র পরিচালক রেনে ক্লেমেন্ট বইটিকে চলচিত্রে রূপ দেন।
কলকাতার কুষ্ঠ ও পোলিও রোগাক্রান্ত শিশুদের সেবা দেওয়া প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অর্থ সাহায্য পাঠাতেন তিনি। নিজেও বহুবার এসেছেন। ভারতের শিক্ষা, পুনর্বাসন ও নিকাশি কাজেও বহু অর্থ দান করেছেন লাপিয়ের।
ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট বইতে তিনি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পতন থেকে মহাত্মা গান্ধীর মৃত্যু ও অন্ত্যেষ্টি পর্যন্ত সময়কালকে তুলে ধরেছেন ছবির মতো। ১৯৮৪ সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের রাজধানী ভোপালে গ্যাস দুর্ঘটনাকে অবলম্বন করে তিনি লেখেন ফাইভ পাস্ট মিডনাইট ইন ভোপাল। এই বই থেকে পাওয়ার রয়্যালটির একাংশও ভোপালে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র চালাতে দান করেন লেখক।








































