দেশের সবচেয়ে পুরনো চলচ্চিত্র উৎসব ‘ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের’ আয়োজন করে ‘রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব সংসদ’। ১৯৯২ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব শুরুর দিকে দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হলেও বর্তমানে প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয়। এবারও ‘রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসব সংসদ’ আয়োজন করছে ‘২০তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’।
বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে ঢাকা ক্লাবের স্যামসন লাউঞ্জে এই উৎসবের উদ্বোধনের তারিখ ঘোষণা করা হয়। ‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’—এই শ্লোগানে ১৫ জানুয়ারি থেকে ২৩ জানুয়ারি এ উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের উৎসবে ১০টি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশসহ ৭০টি দেশের ২২৫টি দেশের চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। বরাবরের মতোই এবারের উৎসবেও এশিয়ান ফিল্ম প্রতিযোগিতা বিভাগ, রেট্রোস্পেকটিভ বিভাগ, বাংলাদেশ প্যানারোমা, সিনেমা অফ দ্য ওয়ার্ল্ড, চিলড্রেন ফিল্মস্, স্পিরিচুয়াল ফিল্মস, শর্ট অ্যান্ড ইন্ডিপেনডেন্ট ফিল্ম এবং উইমেন্স ফিল্ম মেকার সেকশনে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সাংস্কৃতিক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এবং বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন উৎসবের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর লেবানন ও জার্মানির যৌথভাবে প্রযোজিত এবং মারিয়া ইভানোভা জেড পরিচালিত ‘দ্যা অ্যাঙ্গার’ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
উৎসবের পরিচালক আহমেদ মুজতবা জামাল বলেন, “এবারের উৎসবে ৭০টি দেশের ২২৫টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কিছু চিন্তায় আছি। এবার আমাদের ৯৫ জন বিদেশী অতিথি আসার কথা থাকলেও করোনার কারণে কতজন আসবেন এখনই বলা যাচ্ছে না।”
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, “৮০র দশক থেকেই চলচ্চিত্রের প্রতি ভালো লাগা, ভালোবাসা শুরু। তখন বিভিন্ন জায়গায় ছবি দেখা হতো। রাশিয়ান কালচার সেন্টার, জার্মান কালচার সেন্টার, ব্রিটিশ কাউন্সিলে অনেক দেশের চলচ্চিত্রের সঙ্গে পরিচয় হতে থাকে। সেই থেকে চলচ্চিত্রের সঙ্গেই আছি। ”
তিনি আরও বলেন, “চলচ্চিত্র এমন একটি মাধ্যম যা খুব দ্রুত একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলে। আমরা খুব দ্রুত এর মাধ্যমে শিখতেও পারি।”
উৎসবের প্রধান প্রোগ্রামার ইরানি নির্মাতা ও চলচ্চিত্র সংগঠক জোহরে জামানি বলেন, “এই বছর উৎসবটি জাকজমকভাবে পালিত হচ্ছে। ইরান থেকেই ৩৪টি ফিল্ম দেখানো হবে। আশা করি সবাই এই উৎসব উপভোগ করবেন। করোনায় অনেক কিছু বদলে গেছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন কোনো মিরাকল ঘটবে বলে বিশ্বাস করি।”
ঢাকা ক্লাব বোর্ড মেম্বার জালাল আহমেদ বলেন, “এই উৎসব আমাদের ভালো ছবি দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। আমরা অনলাইনে ছবি দেখতে পারি। কিন্তু যে ছবি দেখার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা একমাত্র এমন চলচ্চিত্র উৎসবের মাধ্যমেই সম্ভব।”
ঢাকা ক্লাব প্রেসিডেন্ট খন্দকার মশিউজ্জামান রোমেল বলেন, “ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসব একটি মিলন মেলা। নানা দেশের গুণীব্যক্তিরা এই উৎসবে আসেন। এবার করোনার কারণে অনেকই আসতে পারছেন না। সবার সহযোগিতায় এই উৎসব এগিয়ে যাবে।”
ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সভাপতি অধ্যাপক কিশোয়ার কামাল বলেন, “ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবের ব্যাপ্তি পৃথিবীময়। সারা বিশ্বের নামকরা সব চলচ্চিত্র এখানে প্রদর্শিত হয়। যে যেই স্বাদের চলচ্চিত্র পছন্দ করে, সে সেই স্বাদের চলচ্চিত্রই এখানে পাবে।”
করোনার কারণে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। যাদের করোনা ভ্যাকসিনের দুইটি ডোজ নেওয়া আছে, একমাত্র তারাই সার্টিফিকেট দেখিয়ে ভেন্যুতে প্রবেশ করতে পারবেন। ছাত্র ছাত্রীরা জন্য নির্ধারিত ভেন্যুতে আইডি কার্ড দেখিয়ে বিনামূল্যে চলচ্চিত্র উপভোগ করতে পারবেন। এবার অনলাইনে রেইনবো চলচ্চিত্র উৎসবের চলচ্চিত্রগুলো দেখা যাবে।