বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল বাংলাদেশে সম্প্রচার করা যাবে না— এই শর্তে ১ অক্টোবর থেকে দেশের কোথাও বিদেশি চ্যানেল দেখা যাচ্ছে না। কেউ যেন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সম্প্রচার করতে না পারে সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। যদিও ক্যাবল অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার করছে না।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রীর বক্তব্য
বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য বারবার বলা হলেও তাতে কাজ হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, “আমাদের দেশে বছরের পর বছর আমাদের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বিদেশি চ্যানেলগুলো বিজ্ঞাপনসহ সম্প্রচার করছে। এর প্রেক্ষিতে দেশ প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সে কারণে আমরা যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি, সেটিকে টেলিভিশন মালিকদের সংগঠন, সম্প্রচার জার্নালিস্ট ফোরামসহ সকলে অভিনন্দন জানিয়েছে। আমরা আশা করবো, বিদেশি চ্যানেলগুলো সহসাই বিজ্ঞাপনমুক্তভাবে বাংলাদেশে ফিড পাঠাবে।”
তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, “আমরা বহুবার তাগাদা দিয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত যারা এখানে বিদেশি চ্যানেলের প্রতিনিধি তাদের সাথে ক্যাবল অপারেটরবৃন্দ ও দেশের টিভি চ্যানেলগুলোর মালিকদের নিয়ে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, ১ অক্টোবর থেকে আমরা আইন কার্যকর করবো এবং সে অনুযায়ী আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।”
ড. হাছান মাহমুদ আরো বলেন, “সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। বিদেশি চ্যানেলগুলোর যারা এজেন্ট ও অপারেটর, তারা বিজ্ঞাপনমুক্ত ফিড চালাতে পারছে না বলে সম্প্রচার বন্ধ করেছে। যেসমস্ত বিদেশি চ্যানেল বিজ্ঞাপনবিহীনভাবে সম্প্রচার করছে, তাদের চ্যানেল কিন্তু চলছে, চলতে কোনো বাধা নেই।”
সিএনএন, বিবিসিসহ বিজ্ঞাপনমুক্ত ১৭টি বিদেশি চ্যানেল না চালালে কেবল অপারেটরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী।
যা বলছেন দর্শকরা
বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ হওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে দর্শকদের মধ্যে। অনেকে বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। আবার অনেকে এর ঘোর বিরোধিতা করছেন।
জান্নাত আরা অনন্যা নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, “বাংলাদেশে বিজ্ঞাপনসহ অনুষ্ঠান প্রচার করে—এমন সব বিদেশি চ্যানেলের সম্প্রচার বাংলাদেশে বন্ধ করে দিয়েছে ক্যাবল অপারেটররা। কলকাতার বাংলা চ্যানেলসহ ভারতীয় চ্যানেলগুলোর একচেটিয়া বাজার ছিল বাংলাদেশে। নাটক-সিরিয়ালে পারিবারিক বিরোধ, সামাজিক কূটচাল, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, স্বামী-স্ত্রী, বউ-শাশুড়ির দ্বন্দ্ব দেখিয়ে সমাজকে কলুষিত করতে বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্বুদ্ধ করতো। এ নিয়ে বাংলাদেশের বিবেকবান মানুষ চায় ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সম্প্রচার বন্ধ করা হোক।”
অনন্যা আরও বলেন, “দেরিতে হলেও বাংলাদেশে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে ভারতীয় চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব কুরুচিপূর্ণ সিরিয়াল এবং নাটক মঞ্চস্থ করে লোকসমাজে এক ভীষণ ক্ষতি সাধণ করেছে। তাই আমাদের দেশ এইসব থেকে মুক্তি পেলে, বাঁচবে আমদের দেশের মানুষ, আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি আরও ঐতিহ্যবাহী ও সমৃদ্ধিশালী হবে।”
এদিকে বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে দেখছেন আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী সাঈদ হোসাইন আকাশ। তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশের ক্যাবল অপারেটরদের ডিশ লাইন বিজনেস টিকেই আছে শুধুমাত্র এই বিদেশি ক্যাবল চ্যানেলগুলোর জন্য। মানুষ ক্যাবল লাইন বা ডিশ লাইন নেয়-ই বিদেশি চ্যানেল দেখার জন্য। এগুলো ছাড়া সারাদিন রেজিমের দালালি আর আর চেতনার ব্যবসা করা বাংলাদেশের যে চ্যানেলগুলো আছে, শুধুমাত্রসেগুলো পাবলিক একদিনও দেখবে না।”
আকাশ আরও লেখেন, “অধিকাংশ বিদেশি চ্যানেলের টেলিকাস্টিং কপিরাইট বা সম্প্রচার স্বত্ব ভারতের কেনা। তাদের আয়ের সিংহভাগই আসে এই বিজ্ঞাপন প্রচার করেই। ফলে বাংলাদেশের ক্যাবল অপারেটরদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এবং ভারতীয় চ্যানেল মালিকদের চাপে হলেও এই সিদ্ধান্ত বদলে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হবে।”
সাঈদ ধারণা করছেন, শিগগিরই সরাকার তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। ফের সম্প্রচার শুরু হবে বিদেশি টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর।
ক্যাবল অপারেটর এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব)-এর বক্তব্য
সরকারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েই বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতা আনোয়ার পারভেজ। পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত সম্প্রচার বন্ধ রাখা হবে।
সংবাদ প্রকাশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বিদেশি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেও কোনো লাভ হয়নি। তারা বিজ্ঞাপনমুক্ত চ্যানেল সম্প্রচারে রাজি নন।
আনোয়ার পারভেজ বলেন, “দেশীয় ক্যাবল অপারেটর কিংবা পরিবেশকদের বিদেশি চ্যানেল থেকে বিজ্ঞাপন বাদ দেওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে যারা আইপি টিভি চালাচ্ছেন তারা কিন্তু বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। অথবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ রয়েছে। সিদ্ধান্তটি সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই।”
এদিকে, বিজ্ঞাপনসহ বিদেশি চ্যানেল সম্প্রচার বন্ধ হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেল সংশ্লিষ্টরা। কারণ, তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল বিজ্ঞাপনযুক্ত বিদেশি চ্যানেল বন্ধের।