সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ। এই পদ্ধতিতে কাঁকড়ার চাষ আরও লাভজনক হবে বলে মনে করছেন গবেষকেরা।
শনিবার (১৮ মার্চ) টেকনাফের মিনাবাজারে চাষি পর্যায়ে সরবরাহকৃত কাঁকড়ার প্রথম আহরণ এবং মাঠ দিবস কর্মসূচি পালিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ-আল মামুনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান।
মৎস্য অধিদপ্তরের সাসটেইনেবল কোস্টাল মেরিন প্রকল্পের অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে কাজ করেছে নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগ। এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক ছিলেন ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন। প্রকল্পের সহযোগী সংস্থা হিসেবে ছিল চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড এনিম্যাল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, গ্লোব অ্যাগ্রো লিমিটেড এবং ইরাওয়াব ট্রেডিং।
বর্তমানে খুলনা ও কক্সবাজারে শীলা কাঁকড়া চাষ করা হয়। বৈদেশিক চাহিদা বেশি হওয়ায় কাঁকড়া রপ্তানির মাধ্যমে প্রতিবছর ৩০-৪০ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় যোগ হচ্ছে। কিন্তু কাঁকড়ার চাষের জন্য চাষির প্রকৃতির ওপর সম্পূর্ণরুপে নির্ভরশীল। তারা বিভিন্ন উপকূলীয় মোহনা এলাকা ও ম্যানগ্রোভ এলাকা থেকে কিশোর কাঁকড়া আহরণ করে তা মোটাতাজাকরণ করে থাকেন।
এ ছাড়া নরম খোলসের কাঁকড়ার চাষ ও চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় অনিয়ন্ত্রিত আহরণ মহোৎসব চলছে যা জীববৈচিত্র্যর জন্য হুমকিস্বরূপ। বৈদেশিক চাহিদা বেশি হওয়ায় প্রকৃতি থেকে কিশোর কাঁকড়ার আহরণ দিন দিন বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে কাঁকড়া মোটাতাজাকরণে চাষিরা বিভিন্ন ধরনের মাছ কাঁকড়ার খাবার হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন, যা সম্পূরক ও নিয়ন্ত্রিত নয়।
কাঁকড়ার চাষের এই সমস্যার সমাধানে সম্পূরক খাদ্য ব্যবহার করে হ্যাচারিতে উৎপাদিত কাঁকড়ার পোনা নার্সিং ও মোটাতাজাকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পটি কক্সবাজার এবং সাতক্ষীরা জেলায় চলমান রয়েছে। ওই প্রকল্পের মাধ্যমে বেসরকারি হ্যাচারিতে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে উৎপাদিত প্রায় ২০ হাজার পোনা কক্সবাজারের ১৩ জন কাঁকড়া চাষিকে সরবরাহ করা হয়। এই পোনা নার্সিং ও চাষাবাদে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্ক উদ্ভাবিত সম্পূরক খাদ্যও চাষিদের সরবরাহ করা হয়।
এ বিষয়ে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাহবুবুল হক বলেন, “কাঁকড়া ব্লু ইকোনমিতে ও উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।”
প্রধান গবেষক নোবিপ্রবির ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মামুন বলেন, “হ্যাচারির পোনা ও সম্পূরক খাবার দিয়ে কাঁকড়া উৎপাদন বাংলাদেশের উপকূলীয় মৎস্য চাষে মাইলফলক হয়ে থাকবে।”