• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

আঠারো পেরিয়ে সাফল্য সমৃদ্ধিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়


সোহানুর রহমান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৯, ২০২৩, ০৯:২২ এএম
আঠারো পেরিয়ে সাফল্য সমৃদ্ধিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ২০০৫ সালে কলেজ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বীকৃতি পায় দেশের অন্যতম প্রাচীন এ বিদ্যাপীঠ। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে সাফল্যের ১৮ বছর পূর্ণ করে ১৯ বছরে পদার্পণ করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ২০ অক্টোবরকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ হিসেবে পালন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। গৌরব ও সাফল্যের ১৮ বছরে ক্যাম্পাসের অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও দেশের উচ্চশিক্ষা প্রসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এক অভূতপূর্ব ভূমিকা পালন করে আসছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি বর্তমানে সাড়ে ৭ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ জেলখানার বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ৭ দশমিক ৫ একর কেনা জমি রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য রয়েছে ২০০ একর জমি। যার ১৮৮ দশমিক ৬০ একর অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে বাকি ১১ দশমিক ৪০ একর জমির অধিগ্রহণ চলমান রয়েছে।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৭টি অনুষদে ৩৮টি বিভাগ ও ২টি ইনস্টিটিউট রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ৬৮০ জন শিক্ষক রয়েছেন। যার মধ্যে অধ্যাপক রয়েছেন ১৫৬ জন। সহযোগী অধ্যাপক ১৭৭ জন, সহকারী অধ্যাপক ২৯০ জন ও প্রভাষক ৬৭ জন। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৮ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন। এমফিল কোর্সে ২৬৫ জন ও পিএইচডিতে ১৫১ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি বিভাগে প্রফেশনাল প্রোগ্রাম চালু রয়েছে, আরও বেশ কয়েকটি বিভাগে চালুর প্রস্তুতি রয়েছে। এখানে ৭৩৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৮ সালের ৯ অক্টোবর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। যার মাধ্যমে কেরানীগঞ্জে প্রায় ২০০ একর জায়গার ওপর নির্মিত হচ্ছে আধুনিক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ছাত্রীদের জন্য ‘বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল’ নামে ১৬ তলাবিশিষ্ট হলে ১২০০ ছাত্রীর আসন ব্যবস্থা করা হয়েছে। গবেষণা কার্যক্রমে পারস্পরিক সহযোগিতা লাভের জন্য বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও গবেষণা শিল্প পরিষদ, পরমাণু শক্তি কমিশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিদেশি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) মূল্যায়নে দেশের ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে জায়গা করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে স্পেনের সিমাগো ইনস্টিটিউশন র‌্যাঙ্কিংয়ে রসায়ন বিষয়ে গবেষণা সূচকে বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছর স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ১ হাজার ৬৭৬ জন শিক্ষার্থীকে মেধা ও অবৈতনিক দুই ক্যাটাগরিতে ৫৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকার বৃত্তি দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনে নতুন শ্রেণিকক্ষ বরাদ্দের মাধ্যমে শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটানো ছাড়াও ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে আধুনিক ‘কার্টোগ্রাফি ল্যাব’ চালু, বিভিন্ন বিভাগে কম্পিউটার ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে সেমিস্টার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা, শিক্ষার্থীদের নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থাপনায় বাড়ি পাঠানোর উদ্যোগ, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করার জন্য ডিনস অ্যাওয়ার্ড চালুর উদ্যোগ ও তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির লক্ষ্যে কাউন্সিলিং সেন্টার চালুসহ বছরব্যাপী সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড চালানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলা নববর্ষ ছাড়াও শরৎ উৎসব, বসন্ত উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, নজরুল উৎসবসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বার্ষিক চিত্রকর্ম প্রদর্শনী, নিয়মিত বিভিন্ন নাটক ও সিনেমোর প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে দুপুরে ঢাকার ভেতর চক্রাকারে শাটল বাস সার্ভিস চালু করা হয়েছে।

ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি ও করোনার টিকার প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস, রেঞ্জার ইউনিট থেকে মোট ২৫০ জন শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। গবেষকদের সুবিধার্থে বছরে দুইবার এমফিল, পিএইচডি ভর্তি করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান তৈরির পরিকল্পনা চলছে। এ ছাড়া ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’-এর নীতিমালা অনুমোদন ও বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরে ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ স্থাপন করা হচ্ছে। বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপট ও গ্রেড শিট ভেরিফিকেশনের উদ্যোগ, ই-নথি চালু, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কলেজ থেকে পাওয়া ২টি মাইক্রোবাস এবং ৪টি মিনিবাস নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন পুলের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে ৫৬টি যানবাহন রয়েছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অধিকতর পরিবহন সুবিধা দেওয়ার জন্য বিআরটিসি থেকে ভাড়া করা বাস ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনটি সংস্কার করে আধুনিক ক্যাফেটিরিয়ায় রূপান্তর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বিভিন্ন উন্নয়ন ও সেবা সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমানে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ১০টি শাখার মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এটি এখন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আধুনিক ডিজিটাল গ্রন্থাগার রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে। প্রায় ৬০টি ল্যাপটপের মাধ্যমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গবেষকদের ই-বুকস ও অনলাইন জার্নাল সেবা চালু রয়েছে। প্রতিষ্ঠার ১৪ বছর পর ১১ জানুয়ারি ২০২০-এ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনে প্রায় ১৮ হাজার গ্র্যাজুয়েট ও অন্য ডিগ্রিধারী অংশ নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ও উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্বল্প পরিসরের হলেও নানান ঐতিহ্যের কারণে এর সুনাম বিশ্বব্যাপী। প্রফেশনাল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অনেক এগিয়ে রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে অনেক এগিয়ে গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা, গবেষণার সুনাম ও আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট এগিয়ে। বিশ্ববিদ্যালটিকে আন্তর্জাতিক মানের গড়ে তুলতে কাজ করছি। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয়টি শিক্ষা ও গবেষণায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত অনেক সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে দিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে, সবাইকে নিজের বিবেকবোধ দিয়ে দায়িত্ব পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

শিক্ষা বিভাগের আরো খবর

Link copied!