জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বিজ্ঞান কারখানা সংলগ্ন ‘সুন্দরবন’ এলাকায় ‘আইবিএ-জেইউ’ এর স্থায়ী ভবন নির্মাণকল্পে রাতের আঁধারে বিভিন্ন প্রজাতির প্রায় ৪০ টি গাছ কেঁটে ফেলা হয়েছে। এর প্রতিবাদে গাছে কাফন পরিয়ে ‘প্রতীকি লাশ’ নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১ নভেম্বর) দুপুর ২ টায় গাছ কাটা স্থান থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। পরবর্তীতে মিছিলটি ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, শহীদ মিনার ঘুরে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা ‘রাতের আঁধারে গাছ কাটে, ভিসি কি করে’,‘সুন্দরবনের গাছ কাটে, প্রক্টর কি করে’,‘রাতের আঁধারে গাছ কাটে, দালাল ফিরোজ (প্রক্টর) কি করে’,`গাছ খেকোদের গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে` ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।
এছাড়াও এসময় শিক্ষার্থীদের হাতে ‘সুন্দরবন ধ্বংস করে উন্নয়ন চাই না’, ‘উইকেন্ডের কাঁচা টাকা, ক্যাম্পাস হয় ফাঁকা ফাঁকা’, ‘ব্যর্থ ভিসির গদিতে আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত প্লাকার্ড দেখা যায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বুধবার ভোররাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) পাশে সুন্দরবন নামক স্থানে গাছগুলো কাটা হয়েছে। পরে গাছগুলোর ডালপালা ফেলে রেখে প্রধান অংশ ট্রাকে তুলে অন্যত্রে নেওয়া হয়েছে। গাছগুলো কোথায় নিয়ে গেছে, তা জানা যায়নি। তবে ট্রাকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মশাররফ হোসেন হল গেইট দিয়ে ক্যাম্পাসের বাইরে বের হয়। এছাড়া সেসময় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দু’জন শিক্ষক ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন বলেও জানা গেছে।
নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে গাছ কাটা হলে সেসব গাছ বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা। তবে গাছ কাটার পর কয়েকঘন্টা পার হলেও কাটা গাছগুলো এস্টেট কার্যালয়কে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে এস্টেট অফিসের প্রধান আবদূর রহমান বলেন, ‘গাছ কাটার ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না। আমাদের সাথে কোন প্রকার আলোচনা করা হয়নি। সকালে খবর পেয়ে আইবিএ’র শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে তাঁরা জানান, কাটা গাছ এস্টেট অফিসকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। তবে কাটা গাছ কোথায় আছে তা এখনও জানি না।’
জাবি ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের সাধারণ সম্পাদক অমর্ত্য রায় বলেন, ‘রাতের আঁধারে চোরের মত প্রশাসন গাছ কেটে ফেলেছে। অথচ আমাদেরকে কথা দিয়েছিল, গাছ কাটবে না। প্রশাসন বলছে, আইবিএ না জানিয়ে গাছ কেটেছে। যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানে কাজ চালিয়ে যেতে চায় তবে আমরা সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবো। এভাবে প্রাণপ্রকৃতি ধ্বংস করে বন উজাড় করাকে আমরা ধিক্কার জানাই। পুর্নাঙ্গ মাস্টারপ্লান প্রনয়ন ছাড়া আমরা একটা ভবনও নির্মাণ করতে দিবো না।’
মিছিল পরবর্তী সমাবেশে শিক্ষার্থীরা `জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও` আন্দোলনের ঘোষণা দেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১ টায় বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।