কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ২০২১ সালের ডায়েরিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সংগঠনে কাজ করা শিক্ষার্থীদের নাম লিপিবদ্ধ করার ব্যাপারে ‘বৈষম্যের’ অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরি কমিটির বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের এ বছরের ‘অফিসিয়াল’ ডায়েরি ৫ মাস দেরিতে প্রকাশিত হয়। যা গত জুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হাতে পৌঁছে দেওয়া হয়।
এতে দেখা যায়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তন, প্রযুক্তি বিষয়ক সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইটি সোসাইটি, সাংবাদিকদের সংগঠন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবসহ অন্য অনেক সংগঠনের নাম ডায়েরিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আবার যেসব সংগঠনের নাম এসেছে তাদেরও কাজও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।
ডায়েরি কমিটির এমন আচরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিবর্তনের সভাপতি সজীব দাশ বাঁধন বলেন, “এতদিন আমাদের সংগঠনের নাম, সভাপতির নামসহ ডায়েরিতে আসতো। কিন্তু এবার কেন প্রশাসন বাদ দিলো তা বুঝতেছি না। এটা আমাদের জন্য খুবই অসম্মানজনক। ক্যাম্পাসের প্রথম সারির একটা সংগঠন হওয়ার পরও ডায়েরিতে আমাদের নাম আসে নাই।“
বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে আইটি সহায়তা দিয়েও নাম না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করে আইটি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র আইটি বিষয়ক সংগঠন আইটি সোসাইটি ২০১৬ সালে যাত্রা শুরু করে শিক্ষার্থীদের আইটি বিষয়ে যেকোনো সমস্যায় সহযোগিতা করে আসছে। প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত ৩ বার আবেদন করার পর এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে নাম নেই আমাদের। অথচ আমাদের পরে প্রতিষ্ঠিত হয়েও অনেক সংগঠনের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে চলে এসেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়েরিতে আইটি সোসাইটির নাম না থাকার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
ডায়েরিতে যেসব সংগঠনের নাম এসেছে তাদেরও সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কোনো সংগঠনের সভাপতি-সম্পাদকের নামসহ বিস্তারিত না দিলেও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পুরো কমিটির নাম, নাম্বার ও ইমেইল প্রকাশ করেছে ডায়েরি মুদ্রণ কমিটি। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল সাংবাদিকের আলাদা তালিকা রয়েছে ডায়েরিতে। এতে ডায়েরি কমিটির বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ উঠে ও তুমুল সমালোচনা শুরু হয়।
ডায়েরির এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে ডায়েরি কমিটির আহ্বায়ক ও বর্তমান শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. মো. শামিমুল ইসলাম বলেন, “ডায়েরিতে যেসব সংগঠনের বিস্তারিত কমিটি এসেছে সেগুলো আগেও ছিল। সংগঠনের নিবন্ধন নিয়ে বর্তমানের মতো আগেওও ঝামেলা ছিল। এখানে ডায়েরি কমিটির কিছুই করার নাই। আমরা স্বচ্ছতা রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে তথ্য চেয়েছি। কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি করেছে। সেই কমিটি একটি তালিকা দিয়েছে। সেই অনুযায়ীই আমরা ডায়েরি প্রিন্ট করি। এরপরও যদি কোনো জিজ্ঞাসা থাকে তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।”
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যে সংগঠনগুলো অনুমোদিত শুধু তাদের নামই ডায়েরিতে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু বলতে পারবো না।”
শিক্ষার্থীদের একটি সংগঠনের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নাম আসলেও অন্যান্য সংগঠনের প্রধানদের পর্যন্ত নাম কেন আসেনি তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি ডায়েরিতে ওইভাবে যুক্ত ছিলাম না। এখন এটা তারা কীভাবে করেছে তা আমি জানি না। এভাবে আগামীতে আর করা হবে না। ঢালাওভাবে আর থাকবে না। সামনে থেকে সভাপতি-সম্পাদকের নাম থাকবে। এবার করোনা সমস্যার কারণে হয়তো এরকম হয়ে গেছে।”