• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

প্রেমিকাকে হত্যা করে নেত্রকোনায় পালিয়ে যান প্রেমিক


ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২২, ০৪:০৬ পিএম
প্রেমিকাকে হত্যা করে নেত্রকোনায় পালিয়ে যান প্রেমিক

রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে অজ্ঞাতনামা নারীর হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে র‌্যাব।একই সঙ্গে ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত ও হত্যাকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিহত ওই নারীর নাম হাসিনা আক্তার (২৮)। 

শনিবার (১৯ মার্চ) নেত্রকোনা থেকে হাসিনা আক্তারকে হত্যার অভিযোগে মোহাম্মদ মাহিবুর কামাল (২২) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৭। সোমবার (২১ মার্চ) আইনি কার্যক্রম শেষে মাহিবুর কামালকে রাঙামাটি জেলা জজ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে ১১ মার্চ কাপ্তাই উপজেলার ৪ নম্বর কাপ্তাই ইউনিয়নের বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত একটি টয়লেটের ভেতর থেকে হাসিনা আক্তারের লাশ উদ্ধার করে কাপ্তাই পুলিশ। 

এদিকে হত্যাকারীকে খুঁজতে পুলিশের পাশাপাশি ছায় তদন্তে নামে র‌্যাব-৭। র‌্যাবের তদন্তে বেরিয়ে আসে হাসিনা আক্তারের হত্যার রহস্য।

র‌্যাব জানায়, হাসিনা আক্তারের খুনি তার মাদকাসক্ত প্রেমিক মাহিবুর কামাল। মাথায় ইট দিয়ে আঘাত করে প্রেমিকা হাসিনাকে হত্যা করেছেন তিনি। হত্যার পর হাসিনার মৃতদেহের পাশে বসেও গাঁজা সেবন করেছেন প্রেমিক মাহিবুর কামাল। হাসিনা আক্তার নিজেও ছিলেন মাদক ব্যবসায়ী।

রোববার (২০ মার্চ) র‌্যাব-৭-এর চট্টগ্রামের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ গণমাধ্যমকে বলেন, এই খুনের পেছনে মাদক সেবন, মাদক ব্যবসা, অনৈতিক সম্পর্ক ও পারিবারিক অশান্তি কাজ করেছে। 

র‌্যাব-৭ সূত্রে জানা গেছে, ১২ বছর আগে দ্বীন ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন হাসিনা আক্তার। এক কন্যাসন্তানকে দত্তক নিয়েছিলেন এ দম্পতি। স্বামী দ্বীন ইসলাম থাকতেন বান্দরবানে। হাসিনা মেয়েকে নিয়ে কাপ্তাইয়ে থাকতেন। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য ছিল। একপর্যায়ে মাদক ব্যবসা ও বিভিন্ন অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন হাসিনা আক্তার। বিষয়টি নিয়ে স্বামী ও নিজ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে তার প্রায় ঝগড়া হতো। ছয় মাস আগে স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তার।

হত্যাকাণ্ডের এক মাস আগে মাহিবুর কামালের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন হাসিনা আক্তার। মোহাম্মদ মাহিবুর কামালর মাদকাসক্ত। তিনি ইয়াবা ও গাঁজা সেবন করেন। হাসিনার আক্তার সঙ্গে সম্পর্ক হওয়ার পর মোহাম্মদ মাহিবুর কামালকে বিয়ের জন্য পরিবার থেকে চাপ দেওয়া হয়। অপর দিকে হাসিনাও বিয়ের জন্য মোহাম্মদ মাহিবুর কামালকে চাপ দিতে থাকেন।

এই অবস্থায় ১১ মার্চ বিকেলে কাপ্তাই বিএফআইডিসি মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে হাসিনার আক্তার সঙ্গে দেখা করতে আসেন মাহিবুর কামাল। বিয়ের কথা নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাসিনা আক্তারকে ইট দিয়ে আঘাত করেন মাহিবুর কামাল। এতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন হাসিনা আক্তার। এরপর তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আরও বেশ কয়েকবার ইট দিয়ে আঘাত করেন মাহিবুর কামাল।

র‌্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ আরও বলেন, ইটের আঘাতে হাসিনা আক্তার যখন মারা যান, তখন মাহিবুর কামাল তার লাশের পাশে বসে গাঁজা, সিগারেট সেবন করেন। পরে হাসিনার আক্তারের মরদেহ স্কুলের পরিত্যক্ত টয়লেটে নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। এরপর তিনি নেত্রকোনায় গিয়ে আত্মগোপন করেন। 

এ ঘটনায় হাসিনা আক্তারের মা  আমেনা বেগম ১৩ মার্চ কাপ্তাই থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

আমেনা বেগম জানান, পারিবারিক অশান্তির কারণে তার মেয়ে মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছিলেন। মাদক ব্যবসা থেকে ফিরে আসার চেষ্টা করলেও সিন্ডিকেটের কারণে পারেননি। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. শাহীনুর রহমান জানান, রোববার (২০ মার্চ) দুপুরে র‌্যাব-৭ হাসিনা আক্তারের মূল হত্যাকারী  মোহাম্মদ মাহিবুর কামালকে কাপ্তাই থানায় সোপর্দ করেছে।

Link copied!