• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে নিখোঁজ ৩ তরুণ


ফরিদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২২, ০২:০১ পিএম
দালালের খপ্পরে পড়ে ইতালির পথে নিখোঁজ ৩ তরুণ

বিদেশে ভালো বেতনে কাজের আশায় যেকোনো উপায়েই হোক স্বপ্নের দেশ ইতালিতে যেতে চেয়েছিলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার তিন তরুণ। পাশের গ্রামের দুই প্রবাসী যুবকের সঙ্গে এ জন্য ৩০ লাখ টাকায় চুক্তিও হয় তাদের। এর মধ্যে অভিভাবকেরা ২৪ লাখ টাকা দিয়েছে দালালদের। বাকি টাকা দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছিল। এরই মধ্যে লিবিয়ায় একটি ঘরে বন্দি হওয়ার পর নৌকায় সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি যাওয়ার পথে গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের কোনো খোঁজ নেই। এ নিয়ে পরিবারের লোকজন অজানা আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।

নিখোঁজ এই তিন তরুণ হলেন ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল ইউনিয়নের বাবুর কাইচাইল গ্রামের ফারুক মাতুব্বরের ছেলে মঈন মাতুব্বর ফয়সাল (১৮), ইউনুস শেখের ছেলে সামিউল শেখ (১৯) ও মাজেদ মিয়ার ছেলে নাজমুল মিয়া (২২)।

ফয়সালের বাবা ফারুক মাতুব্বর জানান, তার ছেলেসহ তিনজনকে ৩০ লাখ টাকায় ইতালি নিয়ে যাবে বলে কথা দিয়েছিল পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামের দুই প্রবাসী শওকত চৌধুরী ও রাসেল মিয়া (২৪)। তিনি বলেন, “এজন্য ২৪ লাখ টাকা নগদ দিয়েছি শওকতের ভাই ইলিয়াস চৌধুরী ও রাসেলের ভাই শাহিনকে।”

ছোট নাউডুবি গ্রামের শওকত ও রাসেল আপন চাচাতো ভাই। ফারুক মাতুব্বরের মামাতো ভাইয়ের ছেলে তারা। লিবিয়ায় গেছেন চার বছর আগে। এ তথ্য জানিয়ে ফারুক মাতুব্বর বলেন, “এর আগেও তারা তিনজনকে এভাবে ইতালি নিয়ে যায়। পরিচিত ও আত্মীয় বিধায় তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। গত ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বিমানযোগে ফয়সাল, নাজমুল ও সামিউলকে নিয়ে যায় লিবিয়ার একটি শহরে। তারপর তাদের দ্রুতই ইতালি নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানায় দালালেরা। এ জন্য বাকি ৬ লাখ টাকা রেডি রাখতে বলে।” 

সর্বশেষ ২৭ জানুয়ারি রাত ১০টার দিকে ফয়সালের সঙ্গে তার কথা হয়। এ সময় ফয়সাল ও তার বন্ধুরা ভয় পাচ্ছিল। “আমাদের সাগরের পাড়ে নিয়ে আসছে। মনে হয় নৌকায় ওঠাবে। তোমরা দোয়া কইরো আমাদের জন্য।” ছেলের কণ্ঠে সর্বশেষ এ কথাই শুনতে পেয়েছেন ফারুক। 

ফয়সালের সঙ্গে এভাবে ইতালি যেতে লিবিয়ায় আটকদের একজন নাজমুল। তার ভাই সম্রাট বলেন, “শওকত ও রাসেল তার ভাইদের বডি কন্টাক্টে ইতালি নিয়ে যাবে বলেছিল।” বডি কন্টাক্ট মানে কী—এর জবাবে সম্রাট বলেন, “লিবিয়া যাওয়ার পথে যতবার ধরা খাবে, ততবার ওরা ফেরত আনবে। ওদের বডি যেকোনো উপায়ে ইতালি পৌঁছে দেবে। ওদের হান্ড্রেড পারসেন্ট ইতালি নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের। যত টাকাই লাগুক এতে।”

সম্রাট জানান, ২৭ জানুয়ারির পর প্রথম দিকে দালালরা এমনও বলেছিল যে, তার ভাইয়েরা ইতালি পৌঁছে গেছে। বাকি টাকা রেডি রাখতে বলছিল। শেষে বলেছে, ওরা মাল্টা থেকে ধরা খাইছে। বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাতে ওরা নিশ্চিত করে যে, ওরা তিনজন থামছা থামছা জেলে আছে। এরপর ওরা সামিউলের একটা ভয়েস রেকর্ড পাঠায়। যেখানে সামিউল বলছে, ‘আমরা কষ্টে আছি, আমাদের বাঁচাও’।

সম্রাট আরও জানান, শুক্রবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ওই তিন যুবকের সঙ্গে দেশে পরিবারের লোকদের কথা বলিয়ে দেবে বলেছিল। এদিন তারা পাশের ছোট নাউডুবি গ্রামে দালাল শওকত ও রাসেলের বাড়িতে যান। সেখানে যেয়ে দেখেন ওদের বাড়িতে কেউ নেই। এমনকি গরু ছাগল হাস মুরগি কিছুই নাই। 

এ বিষয় নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হাবিল হোসেন বলেন, “ভুক্তভোগীরা এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!