ভারতের কলকাতায় দুটি কারাগারে বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন কক্সবাজারের মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার ৫৬ জন জেলে। বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভারতের জলসীমায় প্রবেশের দায়ে সেখানকার কোস্টগার্ডের হাতে তারা আটক হন। এর মধ্যে মহেশখালীর কুতুবজোম ইউনিয়নের ২৭ জেলে ও কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের ২৯ জেলে রয়েছেন। সংশ্লিষ্ট ট্রলারমালিকরা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মহেশখালীর কুতুবজোম এলাকার এফবি শাহ আমানত নামের ট্রলারমালিক সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, ১০ ফেব্রুয়ারি মাছ ধরতে গিয়ে তার ট্রলারের জেলেরা নিখোঁজ হন। ঘটনার পর থেকে জেলেদের পরিবারে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
অমল কান্তি নামে কলকাতার এক গণমাধ্যমকর্মীর বরাত দিয়ে সাজ্জাদুল ইসলাম আরও জানান, ভারতের জলসীমায় প্রবেশের দায়ে সেখানকার কোস্টগার্ড তার ট্রলারের ২৭ জন জেলেকে আটক করে নিয়ে যায়। আটক জেলেদের ১৭ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কাকদ্বীপ আদালতে হাজির করা হলে জলসীমা অতিক্রম সংশ্লিষ্ট আইনে তাদের ১৪ দিনের সাজা দেওয়া হয়। বর্তমানে তারা কলকাতার চব্বিশ পরগনা জেলার কার্তিক মহকুমা কারাগারে রয়েছেন।
কার্তিক মহকুমা কারাগারে থাকা মহেশখালীর জেলেরা হলেন পেঠান আলী (৩৭), খোরশেদ আলম (৪৪), গিয়াস উদ্দিন (৪০), হেলাল উদ্দিন (৪২), সফিউল আলম (৩৪), ফরিদ আলম (৪৫), রবিউল আলম (৩৫), মো. শওকত উদ্দিন (৩০), গোলাম সুলতান ওরফে মোস্তাক (৪৩), আব্দুর শুক্কুর ওরফে (দানু) (৩৮), মো. ইব্রাহিম (২৮), মো. রুবেল (২৬), আব্দুল মজিদ (২৫), নুরুল কবির (৩৫), আব্দুল মজিদ (২৭), কবির হোসেন (৩৩), আব্দুল গফুর (৩২), আব্দুর রহমান (৫০), আব্দুল করিম (২৭), রবি আলম (৩১), হামিদ হোসেন (৩৫), শাহেদ মিয়া (১৮), জিহাদ (২১), আব্দুর ছফুর (২৩), মোহাম্মদ জোবাইর (২৮), শফি আলম (৩২) ও মোহাম্মদ কালু (৩৫)। তারা কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নের ঘটিভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা।
কুতুবজোম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শেখ আলমগীর জানান, সাগরে যাওয়া জেলেরা কলকাতায় বন্দি রয়েছেন জানার পর কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও তাদের দেশে ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন পরিবার সদস্যরা।
এদিকে, বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরতে গিয়ে কুতুবদিয়া উপকূলের ২৯ জেলে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটকের খবর পাওয়া গেছে। ভারতীয় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানতে পারেন এফবি আল রাফি ফিশিং বোটের মালিক জসিম উদ্দিন।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঘন কুয়াশায় পথ হারিয়ে ভারতীয় জলসীমায় ঢুকে পড়া কুতুবদিয়া উপজেলার মুরালিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের মালিকানাধীন ট্রলারের ২৯ জেলে। বর্তমানে তারা ভরতের দক্ষিণ ২৪ পরগনা ফ্রেজারগঞ্জ বন্দর এলাকার নামখানা জেল হাজতে বন্দি আছেন। ভারতে আটক কুতুবদিয়ার জেলেরা হলেন কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মৃত আবুল কালামের ছেলে মো. ইউনুছ মাঝি (৫০) তোতা মিয়ার ছেলে মো. এরশাদ (৩৫) আবদুর ছাত্তারের ছেলে মো. জমির উদ্দিন (৩০), মৃত ছালে আহমদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৪৩), মো. আলমগীরের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৩), মৃত কালু মিয়ার ছেলে শাহাদাৎ হোসাইন (৩৪), মফিজুর রহমানের ছেলে নুরুল বশর (৩৮), নুরুল আবছারের ছেলে একরামুল হক (২৫), মো. বকসুর ছেলে জমির উদ্দিন (৩৪), মোহাম্মদ সৈয়দের ছেলে জাফর আলম (৩৯), জকির আহমদের ছেলে নুর মোহাম্মদ (৩৬), মো. হোসেনের ছেলে খোরশেদ আলম (২৫), আবু তাহেরের ছেলে মো. ইব্রাহিম (৩৩), আনোয়ার হোসাইনের ছেলে আরাফাত হোসাইন (২৩), আবু তাহেরের ছেলে রফিক উদ্দিন (২৫), আবুল হোসেনের ছেলে আলা উদ্দিন (৩৭), ফজল করিমের ছেলে মোহাম্মদ রুবেল (২৯), কবির আহমদের ছেলে মাহাবুব আলম (৫০), ইব্রাহিম খলিলের ছেলে মো. মামুন (৩১), মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে মো. আকাশ (৩২), অনিল দাশের ছেলে রম্ভস দাশ (৩৫), নুরুল আবছারের ছেলে মহি উদ্দিন (২৬), পেঠান কান্তি দাশের ছেলে প্রভাত কান্তি দাশ (৪০), আবু তাহেরের ছেলে আবু মুছা (৩১), নুরুল ইসলামের ছেলে অলি উদ্দিন (২৪), নুরুল ইসলামের ছেলে নুরুল আলম (২২), মো. শেরজান খানের ছেলে মো. শহীদ উদ্দিন রাসেল (২৬), ইদ্রিস হোসেনের ছেলে মিজানুর রহমান (৩৪) ও রাশেদ মিয়ার ছেলে মাহামুদুল করিম। কারাগারে থাকা জেলে পরিবারে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
এদিকে জেলেদের নিখোঁজের বিষয়ে এফবি আল রাফি ফিশিং বোটের মালিক কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ মুরালিয়া গ্রামের জসিম উদ্দিন কুতুবদিয়া থানায় দুটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
কুতুবদিয়ার বড়ঘোপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কালাম বলেন, “আমার এলাকার ২৯ জন জেলে সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ভারতীয় কোস্টগার্ডের হাতে আটক হয়ে দেশটিতে কারাবন্দী রয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। তাদের ফিরিয়ে আনতে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় সংসদ সদস্যকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, “সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার ৫৬ জেলে ভারতের কারাবন্দি রয়েছেন বলে খবর পেয়েছি। তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হবে।”