নদীর ওপারে মন্দির। মহালয়া অনুষ্ঠানে যোগ দিতে নৌকা করে নদী পার হতে গিয়ে তারা রানী ওরফে লিপি রানীসহ (৩০) একই পরিবারের চার জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় নেমে এসেছে শোকের মাতম।
লিপি রানীদের বাড়ি পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার শালডাঙা ইউনিয়নের ছত্রশিকারপুর এলাকায়। তিনি সেখানকার রবিন বর্মনের স্ত্রী। লিপি রানীর সঙ্গে ছিলেন- তার ৪ বছর বয়সি ছেলে বিষ্ণু বর্মন, রবিনের ছোট ভাই কার্তিক বর্মনের স্ত্রী লক্ষী রানী (২৫) এবং রবিনের ভাতিজা তিন বছর বয়সি শিশু দীপঙ্কর বর্মন।
রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতে উদ্ধার হওয়া ৪ জনের মরদেহের সৎকার করতে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকালে শ্মশানে নিয়ে গেছেন পরিবারের লোকজন।
একই পরিবারের ৪ জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে ওই পরিবারে। স্ত্রী-সন্তানকে হারিয়ে নির্বাক রবিন। ছেলেকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রবিনের ছোট ভাই বাবুল বর্মন।
জানা যায়, পূজা দিতে রানী ওরফে লিপি রানী পরিবারের তিনজনকে নিয়ে নৌকায় ওঠেন। কিন্তু মন্দিরে পৌঁছানোতো দূরের কথা নদীই পার হতে পারেননি তারা। নৌকা নদীর মাঝ পথে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়েন। এতে নৌকার অন্যান্য যাত্রীদের মধ্যে প্রাণ হারায় এই চারজন।
নিহত লিপির স্বামী রবিন বর্মন বলেন, “স্ত্রী-সন্তানকে পাঠিয়েছিলাম মহালয়া অনুষ্ঠানে। কিন্তু নৌকাডুবিতে আমার সব শেষ হয়ে গেল।”
বাবুল বর্মন বলেন, “আমার তিন বছর বয়সী একমাত্র ছেলে দীপঙ্করকে আমার বৌদিদের সঙ্গে মন্দিরে পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু কে জানত সে লাশ হয়ে ফিরবে।”
এর আগে, রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। ভোর থেকে পূণরায় উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সোমবার সন্ধা ৬টা পর্যন্ত মরদেহের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ জনে। উদ্ধার হওয়া মরদেহের বেশির ভাগই শিশু ও নারী এবং অধিকাংশ সনাতন ধর্মাবলম্বী।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নের করতোয়া নদীর অপরপাড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়া পূজা উপলক্ষে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ধর্মসভার আয়োজন করা হয়। রোববার দুপুরের দিকে মূলত ওই ধর্মসভায় যোগ দিতে সনাতন ধর্মালম্বীরা নৌকাযোগে নদী পার হচ্ছিলেন। তবে, ৫০-৬০ জনের ধারণ ক্ষমতার নৌকাটিতে দেড় শতাধিক যাত্রী ছিলেন।
অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে নদীর মাঝপথে নৌকাটি ডুবে যায়। অনেকে সাঁতার জানায় তীরে আসতে পারলেও সাঁতার না জানা বিশেষ করে নারী ও শিশুরা পানিতে ডুবে যায়।
এ ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। এছাড়া নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। আর আহতদের ৫-১০ হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে।