টাঙ্গাইলে কয়েক দিন ধরে বেড়েই চলছে আলু, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজির দাম। বাড়তি দামে এসব কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের। ব্যবসায়ীদের দাবি, বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত নষ্ট ও আমদানি কমে যাওয়ায় আলু, পেঁয়াজসহ সবজির দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীরা উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে সবজি কিনে আনে। সেখানে দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় টাঙ্গাইলেও দাম বেশি। দাম বৃদ্ধির ব্যাপারে টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।
ব্যবসায়ীরা জানান, টাঙ্গাইল পৌর শহরের প্রধান কাঁচা বাজার পার্ক বাজারে প্রতিদিন ভোর থেকে পাইকারি দরে আলু পেঁয়াজসহ বিভিন্ন সবজি বিক্রি করা হয়। শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা এবং কালিয়াকৈর, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন হাট বাজারের ব্যবসায়ীরা এ বাজার থেকে পাইকারি দরে সবজি ক্রয় করে থাকেন। এ ছাড়াও সকাল থেকে এই পার্কবাজারে খুচরা মূল্যে বিভিন্ন সবজি বিক্রি করা হয়। বগুড়া, রাজশাহী, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জসহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে টাঙ্গাইলে আলু পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। কেনা দামের ওপর নির্ভর করে বিক্রির দাম নির্ধারণ করেন পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারা। দাম বৃদ্ধি পাওয়াতে বিক্রি কমে গেছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
পাইকারি ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া বলেন, বর্তমানে টাঙ্গাইলের নিজস্ব কোনো আলু নেই। সব আলু উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আমদানি করতে হয়। পাইকারি দরে প্রতি কেজি আলু ৬৫ টাকা ও পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১৩০-১৩২ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতা ফয়সাল মিয়া বলেন, আলু ৭৫ টাকা, পেঁয়াজ ১৩৫ টাকা, বেগুন ৭০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা, লাউ ৫০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, কচুর মুখি ৬০ টাকা, কা৭চা মরিচ ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন সুলতান মিয়া। তিনি বলেন, “সব কিছুর দাম দিন দিন বাড়তে শুরু করেছে। আগে যে বাজার করতে এক-দুই হাজার লাগতো। এখন সেই বাজার করতে তিন-চার হাজার টাকার বেশি লাগছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।”
দিঘুলিয়া এলাকার ক্রেতা কাশেম মিয়া বলেন, “আজকে এক কেজি পেঁয়াজ ১৪০ টাকা ও এক কেজি আলু কিনেছি ৮০ টাকা দিয়ে। আমি রিকশা চালিয়ে সংসার চালাই। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবজিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ঠিক রাখতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর দাবি করছি।”
কলেজ পাড়া এলাকায় একটি মেসে থাকেন আবু সাইদ ও বিপ্লব মিয়া। তারা বলেন, “আমরা টিউশন করে যে টাকা পাই তাতে খাওয়ার খরচই হচ্ছে না। বাসা ভাড়া দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাজারে কোনো সব কিছুর দাম আগুনের মতো। এভাবে চলতে থাকলে নিম্ন আয়ের মানুষ না খেতে মারা যাবে। সরকারের কাছে দাবি দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো হোক।”
পার্ক বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুর বারেক মিয়া বলেন, পার্ক বাজারে প্রতিদিন প্রায় ১০০ টন করে আলু ও পেয়াজ বিক্রি হয়। এখানে কয়েকজন ভারত থেকে এলসি করেও পেঁয়াজ আনে। কয়েক দিন ধরে হরতাল অবরোধে কারণে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে টাঙ্গাইলের ব্যবসায়ীদের কোনো হাত নেই।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খায়রুল ইসলাম জানান, প্রশাসনের পক্ষে থেকে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। যদি কোনো অসাধু ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের দাম বেশি নিয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।