পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের শ্রীপুর কৈজুরী গ্রামের বাসিন্দা মাহাতাব হোসেন (৩৫) ও শাপলা খাতুন (২৪) দম্পতি। মাহাতাব এলাকায় ভ্যান চালিয়ে ও কৃষিকাজ করতেন। শাপলা খাতুন বাড়িতে দর্জির কাজ করতেন। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। প্রায় ২০ দিন আগে ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হন মাহাতাব-শাপলা।
এর মধ্যে জানা যায় গেল শনিবার কুলাউড়ায় পুলিশের অভিযানে ‘জঙ্গি’ সন্দেহে আটক হয়েছেন শাপলা খাতুন। তার সঙ্গে রয়েছে দুই শিশুসন্তানও। ঘটনার পর থেকে পলাতক মাহাতাব হোসেন।
শাপলা খাতুনের তাদের জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় হতবাক প্রতিবেশীরা। তবে মাহাতাবের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির দাবি, মাহাতাবের গতিবিধির বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু সতর্কতামূলক কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন একসময় পরিচিত ছিল চরমপন্থী অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে। যেখানে প্রায়ই ঘটতো হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টেছে সে পরিস্থিতি। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিরও উন্নতি ঘটেছে।
এই ইউনিয়নের কৈজুরী শ্রীপুর গ্রামের দরিদ্র মাহাতাব হোসেন ও তার স্ত্রী শাপলা খাতুন হঠাৎ করেই জড়িয়ে পড়েন জঙ্গি কর্মকাণ্ডে। যা জানেন না তার বাবা-মাসহ প্রতিবেশীরা।
সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, মাহাতাবের বাবার নাম হাবিবুর মণ্ডল। তিনি ভ্যানচালক। টিনশেড দুটি ঘর। দুটি ঘরই তালাবদ্ধ। সাত বছর আগে আতাইকুলার রঘুনাথপুর গ্রামের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মজনু ব্যাপারীর মেয়ে শাপলা খাতুনকে বিয়ে করেন মাহাতাব। তাদের সংসারে এক ছেলে হুজাইফার বয়স ছয় বছর আর এক মেয়ে জুবেদার বয়স দেড় বছর। দুই ভাইয়ের মধ্যে মাহাতাব বড়। লেখাপড়া প্রাথমিকের গণ্ডি পেরোয়নি। তার আরেক ভাই ভ্যানচালক। তিনি আলাদা বাড়িতে থাকেন। তারা স্বামী-স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তেন। মাঝেমধ্যে তারা ঢাকায় যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে কিছুদিন উধাও হয়ে যেতেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, ভ্যান চালিয়ে ও কৃষিকাজ করে সংসার চালান মাহাতাব। তার স্ত্রী বাড়িতে দর্জির কাজ করেন। নামাজ কালাম পড়েন। কারও সঙ্গে কখনো উগ্র ব্যবহার করেননি। তারা স্বামী-স্ত্রী কবে কীভাবে জঙ্গি সংগঠনে জড়িয়েছেন, তা জানেন না তারা।
এদিকে একটি সূত্র জানায়, মাহাতাবের স্ত্রী শাপলা মোটামুটি শিক্ষিত। তার শ্যালক মামুনও জঙ্গি সংশ্লিষ্টতায় পলাতক। ওই শ্যালক মামুনের মাধ্যমে মাহাতাব ও তার স্ত্রী জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে একটি ধারণা পাওয়া গেছে।
মাহাতাবের বাবা হাবিবুর মণ্ডল বলেন, “১৫ দিন আগে একদিন সন্ধ্যায় দেখতে পাই বউ, বাচ্চা নিয়ে বাড়ি থেকে চলে যাচ্ছে। কোথায় যাচ্ছে জিজ্ঞেস করলে জানায় তার ভায়রা আসছে মালয়েশিয়া থেকে, দেখা করতে যাচ্ছে। তারপর থেকে তাদের আর খোঁজ নাই। বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও পাইনি। পরে শনিবার শুনলাম ছেলের বউ জঙ্গিতে ধরা পড়েছে। এখন আইনে যা হয় হোক।”
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য জামাল প্রামাণিক বলেন, তার বিরুদ্ধে বছর দুয়েক আগেও কক্সবাজারে জঙ্গি সন্দেহে আটকের অভিযোগ রয়েছে। এলাকায় মাহাতাবের চলাফেরা ছিল সন্দেহজনক। বিষয়টি আতাইকুলা থানার ওসিকে জানানো হয়েছিল। নিখোঁজের পর তার বাবাকে নিয়ে থানায় গিয়ে ছবিসহ সব তথ্য দিয়ে আসা হয়েছে। এখন শুনি ছেলেটা ও তার বউ জঙ্গি হয়েছে। বিষয়টি লজ্জাজনক।
আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, মাহাতাবের বাবা এসেছিল। ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না এ জন্য। তারপর বলেছিল দুই বছর আগে একবার জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হয়েছিল। পরে তারা জামিন করায়ে নিয়ে আসছে। তবে নিখোঁজের বিষয়ে কোনো জিডি বা অভিযোগ কিছু দেয়নি।
পাবনা পুলিশ সুপার আকবর আলী মুনসী বলেন, নিখোঁজদের বিষয়ে পুলিশ হেডকোয়াটার্স নজরদারি করে। সারা দেশে যারা নিখোঁজ হয়, সেগুলো অনলাইন নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সেখানে ডাটাবেইজ তৈরি হয়। অভিযানের বিষয়ে বা তল্লাসির সিদ্ধান্ত নেয় কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। আমরাও তাদের সহযোগিতা করে থাকি। তবে মাহাতাব দম্পতির তৎপরতা ও তার বাড়িতে কারা যাতায়াত করত, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।