• ঢাকা
  • সোমবার, ০৯ জুন, ২০২৫, ২৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

সরিষার ফলন ভালো, সয়াবিনের ওপর চাপ কমার আশা কৃষকদের


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২২, ২০২২, ০১:২৩ পিএম
সরিষার ফলন ভালো, সয়াবিনের ওপর চাপ কমার আশা কৃষকদের

কুমিল্লা ও জয়পুরহাটে চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে, হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে মাঠ। সরিষার বাম্পার ফলন আশা করছে কৃষি বিভাগ। এদিকে কৃষকরা বলেছেন, এ বছর সরিষার উৎপাদন ভালো হবে, এতে সয়াবিন তেলের ওপর থেকে চাপ কমবে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

জয়পুরহাট

ক্রমাগত বাড়ছে সরিষা চাষ। এখন সরিষার ফুলে হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে অনেক মাঠ। শীতের সকালে সরিষার হলুদ ফুলের মৌ মৌ গন্ধে ভিন্নরকম অনুভূতি তৈরি করে। গুনগুন শব্দে ফসলের ক্ষেতে ক্ষেতে এক ফুল হতে আরেক ফুলে মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। মাঝখানে কৃষকরা একেবারেই সরিষা চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেললেও চলতি মৌসুমে অনেকেই এ চাষে আগ্রহী হয়েছেন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২২-২০২৩ রবি মৌসুমে জেলায় ১৫ হাজার ৩৭ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ৫৫৩ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। এর বিপরীতে সরিষার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৭৭৫ মেট্রিক টন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কালাই উপজেলার জমিনপুর গ্রামের ছাইদুর রহমান বলেন, দুই বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করেছি। বিগত বছরগুলোর চেয়ে গাছ অনেক সুন্দর হয়েছে। আশা করছি এবার খুব ভালোফলন পাব।

ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল গ্রামের ছাব্বির হোসেন বলেন, “আমি এ বছর ১৮ বিঘা জমিতে সরিষা বপন করেছি। গত বছর বিঘা প্রতি ৯-১০ মণ ফলন হয়েছিল। বিক্রি করে লাভবান হয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আরও বেশি ফলন হবে বলে আশা করছি।”

আক্কেলপুর সদর উপজেলার আমুত্ত কাজিপাড়ার কাজি গোলাম রাশেদ বলেন, “অন্যান্য ফসলের তুলনায় সরিষা আবাদে খরচ ও ঝামেলা কম এবং বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় দামও অনেক ভালো। তাই এবার তিন বিঘা জমিতে সরিষা আবাদ করেছি।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক আব্দুল করিম বলেন, “সরিষা চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করতে ভালো ফলনের লক্ষে কৃষক পর্যায়ে প্রণোদনা প্রদান, নতুন নতুন উন্নত জাতের বীজ উদ্ভাবনে ফলন বৃদ্ধি, পতিত জমিতে সরিষা চাষ এবং বাজারে সরিষার ভালো মূল্য পাওয়ায় এ চাষে কৃষকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন।”

কুমিল্লা

চলতি মৌসুমে সরিষার আবাদ বেড়েছে। জেলায় এবার রেকর্ড পরিমাণ জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষকরা। গত বছর জেলায় আট হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। এবছর সরিষার আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রাও ধরা হচ্ছে গতবারের আড়াইগুণ বেশি।

কৃষকরা জানিয়েছেন, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবছর ফলন ভালো হবে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সরিষার উৎপাদন হলে সয়াবিন তেলের ওপর থেকে চাপ কমবে বলেও জানান তারা।

একই কথা উল্লেখ করে জেলা কৃষি অফিস জানিয়েছে, ভোজ্যতেলের বাজার অস্থিতিশীল থাকায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ সরিষা চাষ হয়েছে কুমিল্লায়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছর জেলার ১৭ উপজেলায় ৮ হাজার ৭৬৫ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়। এ বছর তা দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়িয়েছে; অর্থাৎ ১৬ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। গত বছর জেলায় সরিষা উৎপাদন হয়েছে ৯ হাজার মেট্রিক টন। এবার লক্ষ্যমাত্রা ২৩ হাজার মেট্রিক টন। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় আড়াই গুণেরও বেশি। এবার সরিষা চাষে যুক্ত হয়েছেন ৩০-৩৫ হাজার কৃষক। যা গত বছরের তুলনায় অর্ধেকের বেশি।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গোমতিরচরসহ বিভিন্ন স্থানের মাঠঘাট ছেয়ে গেছে সরিষার হলুদ ফুলে। সরিষার ফুলে আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। জেলার সদর উপজেলা ছাড়াও নাঙ্গলকোট, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, বুড়িচং, সদর দক্ষিণ, মুরাদনগর, দেবিদ্বার, ব্রাহ্মণপাড়াসহ ১৭টি উপজেলাতেই এবছর সরিষার ব্যাপক আবাদ করেছেন কৃষকরা। জেলার শত শত কৃষক নতুন করে এ বছর সরিষা চাষে ঝুঁকেছেন। এর মধ্যে কেউ কেউ ধানের বদলে সরিষা, কেউ মাছের বদলে সরিষা চাষ করেছেন। ফলে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে সরিষা উৎপাদনে নতুন রেকর্ড গড়বে কুমিল্লা- এমনটাই প্রত্যাশা চাষিদের।

সদর দক্ষিণ উপজেলার কৃষক আবু আহমেদ বলেন, “এ বছর ৩০০ শতক জমিতে ধানের বদলে সরিষা চাষ করেছি। পরিবারে তেলের চাহিদা মেটাতে বেশি পরিমাণ জমিতে সরিষা চাষ করেছি। আবাদ ভালো হলে পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করব। আমাদের এলাকায় আরও অনেকেই সরিষা চাষ করেছেন।”

সদর দক্ষিণ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাবিবুল বাশার গণমাধ্যমকে বলেন, “উপজেলায় ১৮৫ হেক্টরের বেশি জমিতে সরিষা চাষ হয়েছে। মূলত ভোজ্যতেলের ওপর নির্ভরতা কমাতে কৃষকরা এই বিপ্লব ঘটিয়েছেন। আমরা বহুদিন ধরে কৃষকদের সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করছি। এবার তারা সাড়া দিয়েছেন। আশা করছি, প্রত্যাশার চেয়ে লাভবান হবেন কৃষকরা।”

বুড়িচং উপজেলার কৃষক হুমায়ুন কবির বলেন, “সরিষা বিনা চাষেই উৎপাদন করা যায়। জমি সমান করা লাগে না, সেচ লাগে না। শুধু বপন করে দিলেই হয়। আর তেমন খরচ নেই। খাটা-খাটুনি ছাড়াই সরিষার ভালো ফলন পাওয়া যায়। এসব কারণে সরিষা আবাদে ঝুঁকেছি।” তিনি আরও বলেন, “সরিষার উৎপাদন বেশি হলে মানুষ সরিষার তেল কম দামে পাবে। সয়াবিন তেলের বিকল্প হয়ে উঠবে। চাহিদা কমলে সয়াবিন তেলেরও দাম কমে যাবে। সরিষা আবাদে অনেক সুবিধা আছে। আমার তেল কেনা লাগবে না। সরিষা থেকে খৈল হয়। গরুর খৈল কেনা লাগবে না। ফলে সরিষা চাষে লাভ ছাড়া লোকসান নেই বললেই চলে।”

বুড়িচং উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বানিন রায় বলেন, “উপজেলার ইউনিয়নগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি কর্মকর্তাদের নিয়ে বসেছি। কোন চাষির কি সমস্যা? কীভাবে তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে সরিষা চাষে কাজে লাগানো যায়- এসব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের ব্যবস্থা করেছি। এবার আমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার ৮০০ কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ করেছি। আমরা কৃষকদের পাশে সবসময় আছি। তাই তারাও সরিষা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। আশা করছি, ভালো ফলন হবে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার দ্বিগুণ চাষ ও ফলন হবে। তিন মাসের মধ্যে ফসল আসবে। এজন্য যে পরিমাণ সার ও বীজ দরকার আমরা সরকারিভাবে কৃষকদের দিয়েছি। সেইসঙ্গে কৃষকদের সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। 

Link copied!