শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের পাপরাইল গ্রামের মৃত হাকিম আলী সরদারের ছেলে মন্নান সরদার। বর্তমানে তার বয়সের কোটা ৮০ পেরিয়েছে। জমি-জমা বিক্রি করে অনেক আগেই চার মেয়েকে দিয়েছেন। এখন শুধু ৭০ বছর বয়সী অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। কোনো ছেলে সন্তান না থাকায় এই বৃদ্ধ বয়সেও সকাল হলেই রিকশার হাতল ধরে রোজগারের উদ্দেশ্যে বের হতে হয় তাকে।
জীবিকার তাগিদে শীত বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কে বের হলেও অনেক সময় তার শরীরের কাপুনি দেখে দুর্ঘটনার ভয়ে কোনো যাত্রী তার রিকশায় উঠতে চান না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষার পরেও কোনো যাত্রী না পেলে রিকশা নিয়েই বিভিন্ন দোকানপাটসহ পথচারীদের কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততে হয় তাকে। অনেক সময় অনেক যাত্রী নির্ধারিত ভাড়া থেকে বেশি টাকাও দিয়ে থাকেন। আর সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীর ওষুধ কেনার পর চাল-ডাল কিনে বাড়ি ফেরেন। আবার অনেক সময় টাকা না থাকলে উপোস থাকতে হয় মন্নান ও তার স্ত্রী ফুলমালাকে।
জানা যায়, ৮০ বছর বয়সী মন্নান সরদার জীবনের ৬০ বছরই রিকশা চালিয়ে জীবন যাপন করেছেন। উপার্জনের টাকা দিয়ে সারা জীবন সংসারের খরচ বহন করতে পারলেও গত ৬ মাস ধরে স্ট্রোকজনিত কারণে অসুস্থ্যতায় ভূগছেন তিনি। নিজের জায়গা-জমি বিক্রি করে চার মেয়েকে বিয়ে দিতে হয়েছে। এখন বৃদ্ধ বয়সে তার কোনো সম্বল নেই। স্ত্রী ফুলমালাসহ মন্নান সরদার নিজেও বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে ভুগছেন।
সম্প্রতি মন্নান সরদারকে শরীয়তপুর পৌর বাসস্টান্ড এলাকায় রিকশা নিয়ে পথচারীদের কাছে সাহায্য চাইতে দেখা যায়। তার সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, স্ত্রী ফুলমালার জন্য প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ টাকার ওষুধ প্রয়োজন হয়। স্বামী-স্ত্রী দুই জনই বয়স্ক ভাতার জন্য উপযুক্ত হলেও স্ত্রী ফুলমালা বয়স্ক ভাতা পান না। আর একজনের বয়স্ক ভাতার টাকার তাদের দুজনের চলতে কষ্ট হয়। ভিক্ষাবৃত্তিকে ঘৃণা করেন তিনি। কিন্তু বয়সের কারণে এখন বাধ্য হয়ে অন্যের কাছে তাকে হাত পাততে হয়।
নুরুল ইসলাম মাল নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, “যাত্রী পেলে মন্নান সরদার কারও কাছ থেকে সাহায্য নেন না। তবে বয়স হওয়ার কারণে তার হাত পা অনেক কাঁপার ফলে দুর্ঘটনার ভয়ে তার রিকশায় কেউ ওঠে না। আমরা প্রায়ই তাকে সাহায্য করে থাকি। সাহায্যের টাকা দিয়ে তিনি স্ত্রীর জন্য ওষুধ ও সংসারের খরচ বহন করেন।”
এ ব্যাপারে ছয়গাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান লিটন বলেন, “মন্নান সরদার পরিষদ থেকে বয়স্ক ভাতা পায়। ইউনিয়ন পরিষদের অন্যান্য সুবিধাও তাকে প্রদান করা হবে।”
ভেদরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল ইসলাম বলেন, মন্নান সরদার আবেদন করলে বিস্তারিত খোঁজ খবর নিয়ে তার পাশে থাকবে উপজেলা প্রশাসন।