দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা কুড়িগ্রামে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে কৃষিজমিতে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ১১১টি ইটভাটা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ইট পোড়ানো লাইসেন্স, ফায়ার সার্ভিসের সার্টিফিকেট এমনকি ভ্যাট-আয়কর প্রদানের কাগজপত্র ছাড়াই ইটভাটার মালিকরা আবাদি জমি ও জনবসতি এলাকাসহ স্কুল-কলেজের পাশে রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা ইট পোড়ানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
ইটভাটার বিষাক্ত ছাই, কালো ধোঁয়ায় ফলন হ্রাসের আশঙ্কায় পড়েছে কৃষকদের শত শত একর আমন ও বোরো আবাদ, রবিশস্য, সুপারি, নারিকেল, আম-জামসহ বিভিন্ন প্রজাতির ফল। সেই সঙ্গে চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ইটভাটার পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষজন।
সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের আজোয়াটারী গ্রামের বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে মেসার্স ডব্লিউ এ এইস ব্রিকস ফিল্ড, এ বি ব্রিকস, মেসার্স এম এস এইচ ব্রিকস, বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের পাশে মেসার্স এএমবি, ফুলবাড়ী সদর ইউনিয়নের খামারের বাজার এলাকায় মেসার্স কেএমবি এবং শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের জকুরটল এলাকায় মেসার্স জেএমএস নামের ছয়টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এসব ইটভাটার একটিরও পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরে নামমাত্র আবেদন করে, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে চলছে ইট পোড়ানোর কাজ।
ইটভাটার আয়তন দুই একরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার নিয়ম থাকলেও বিস্তৃত এলাকা দখলে নিয়েছেন তারা। ভরাট করেছে পানি নিষ্কাশনের পথ। একই চিত্র জেলার ভূরুঙ্গামারী, নাগেশ্বরী, কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট, উলিপুর, চিলমারীসহ রৌমারী ও রাজীবপুর উপজেলার ইটভাটাগুলোর। ওই সব ইটভাটাসংলগ্ন স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটার মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় সরকারি নিময় নীতির তোয়াক্কা করছেন না।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, ভাটার মালিকরা জমি ভাড়া নিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করছেন। এসব ইটভাটার কালো ধোঁয়ায় পাঁচ বছর ধরে বোরো এবং আমন আবাদের ফলন বিঘাপ্রতি ৬-৭ মণ কমে এসেছে। ভাটার কালো ধোঁয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে সুপারিবাগানের। তা ছাড়া আম, কাঁঠাল, নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের ফলনো কমে গেছে। ভাটার মালিকরা ইট পরিবহনের জন্য উঁচু রাস্তা তৈরি ও সেতুর মুখ বন্ধ করায় বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর এই এলাকার শত শত বিঘা আমন খেত পানিতে তলিয়ে নষ্ট হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলার মেসার্স ডব্লিউ এ এইচ ব্রিকস ফিল্ডের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, “শুধু আমার ভাটার না জেলার কোনো ইটভাটারই পরিবেশ অধিদপ্তরসহ আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নেই। প্রতিবছর মালিক সমিতির লোকজনসহ ডিসি অফিসে কথা বলি। তারা ভাটা চালানোর মৌখিক অনুমতি দেওয়ায় ভাটায় ইট পোড়ানোর কাজ চলছে।”
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সুমন দাস জানান, ইতোমধ্যেই ৮ ডিসেম্বর তিনটি ভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে। ওই তিন ভাটার কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই তাদের ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। আজকালের মধ্যে বাকি তিন ইটভাটায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, “জেলায় মোট ১১১টি ইটভাটা অবৈধভাবে কৃষিজমিতে গড়ে তোলা হয়েছে। মাত্র ২১টি ইটভাটার কাগজপত্র হালনাগাদ আছে। ২০ থেকে ২৫টি ইট ভাটার মালিক আবেদন করেছেন। ৫১টি ইটভাটার কোনো ধরনের বৈধ কাগজ নেই। আমরা বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”