অন্যান্য ফসলের তুলনায় অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কলা চাষে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের কৃষকরা। জেলায় কলা চাষের জন্য উর্বর মাটি হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের লালমাটি। জেলার মধুপর, ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলার পাহাড়ি মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কলা চাষের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে স্থানীয় কৃষকদের। অনেকের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও এসেছে এ কলা চাষে।
ধান, পাট প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় কলা চাষে শ্রম ও ব্যয় খুবই কম। বিক্রির ক্ষেত্রেও ঝামেলা নেই। কলার বাজার দরেও সহজে ধস নামে না। এখন সারা বছরেই কলার চাষ করা যায়।
উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায়। স্থানীয় কলার পাইকারি বাজার মধুপুরের জলছত্র, গারো বাজার এবং সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজারে সবচেয়ে বেশি কলা বিক্রি হয়। এসব হাট থেকে প্রতিদিনই বের হচ্ছে ছোট বড় মিলিয়ে ২০-৩০ ট্রাক কলা। মধুপুরের জলছত্রে সপ্তাহে দুইদিন হাট বসে। এই দুই হাটেই কলা বিক্রি হয় কোটি টাকার ওপরে। একই চিত্র সখীপুরের কুতুবপুর এবং মধুপুরের গারো বাজারেও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকার আসেন কলা কিনতে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, মন্দিরা, মন্দিরা সাগর, সবরি, চম্পা, চিনিচাম্পা, কবরি, মেহেরসাগর জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি কলাগাছ রোপণ করা হয়। একটি কলাগাছ রোপণ থেকে বাজার জাত পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি কলার ছড়ি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ হিসেবে প্রতি বিঘায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা কৃষকের লাভ হয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে আরও জানা যায়, কলায় প্রচুর পরিমাণ ক্যালসিয়াম, লৌহ ও ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে। পাকা কলা মানব দেহে কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে এবং কলার থোড় বা মোচা ডায়াবেটিস, আমাশয়, আলসার নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
চলতি মৌসুমে জেলায় ৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সব চেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। মহিষমারা, শোলাকুড়ী, বেরীবাইদ, অরণখোলা, কুড়াগাছা, কাকরাইত, ভবানীটেকী, গরমবাজার, কাউচি বাজারসহ এ উপজেলায় বিভিন্ন গ্রামে দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে। এ বছর ঘাটাইল উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। সন্ধানপুর, সংগ্রামপুর, রসুলপুর, লখিন্দর, ধলাপাড়া ও সাগরদিঘী ইউনিয়নে সব চেয়ে বেশি কলার চাষ করা হয়েছে।
মধুপুরের মহিষমারার কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, “এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ১৭০০টি কলার চারা রোপণ করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন এবং লাভ দুটোই ভাল হবে। এখন শীত দেখে কলার দাম একটু কম যাচ্ছে। মাসেও কলার বাজার অনেক ভাল ছিল।”
স্থানীয় কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এইবার প্রথম তিনি সবরি কলা চাষ করেছেন। এখন পর্যন্ত কলাগাছগুলো সুস্থ সবল থাকায় ভালো ফলনের আশা করছেন এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সহযোগিতা পেলে সামনে আরও বেশি জমিতে কলার চাষ করতে পারবেন।
মধুপুরে কাকরাইত গ্রামের কলা চাষি মাসুদ রানা বলেন, “আমি আনারসের পাশাপাশি কলা ও পেঁপে চাষ করে থাকি। করোনা মহামারির সময় কলাসহ বিভিন্ন ফলে ব্যাপক লোকসান হয়েছিল। এ বছর কলার বাম্পার ফলন হবে। আশা রাখছি এবার লাভবান হবো।”
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল জানান, এ বছর উপজেলায় কলা চাষ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ একই জমিতে বারবার কলা চাষ করলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয় এবং পানামা পোকার আক্রমণ ঘটে। এবারও মধুপুর উপজেলায় দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ আহসানুল বাসার বলেন, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় চার হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। মধুপুরের জলছত্রে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন কলা কিনতে এবং প্রায় কোটি টাকার কলা বিক্রি হয়ে থাকে।