• ঢাকা
  • শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

দেয়ালে দেয়ালে ছবি আঁকাই চাঁনু পাগলার কাজ


হাসান সিকদার, টাঙ্গাইল
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২৩, ০৮:৫০ এএম
দেয়ালে দেয়ালে ছবি আঁকাই চাঁনু পাগলার কাজ

নাম আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে চাঁনু মিয়া (৫১)। চাঁনু পাগলা নামে পরিচিত। চাঁনু মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন। ভোর হলে চাঁনু মিয়াকে আর পাওয়া যায় না তার বাড়িতে। নিজের ঘর তালা দিয়ে বের হন অজানা গন্তব্যে। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন দেয়ালে আঁকাতে থাকেন নানা ধরনের ছবি। সন্ধ্যা হলে চলে যান তার নিজ বাড়িতে। এভাবেই কেটে যায় তার দিন-রাত।

চাঁনু মিয়া পেশায় চিত্রশিল্পী না হলেও, একজন পেশাদার চিত্রশিল্পীকে হার মানাবেন তিনি। মাত্র ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে সময়ের মধ্যে নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় ফুটিয়ে তোলেন সব রকমের ছবি। বিভিন্ন দেয়ালে উপদেশমূলক কথাও লিখে রেখেছেন। কিন্তু চাঁনু মিয়া ভালো করে কথা বলতে পারেন না। আবার যাও কথা বলেন তেমন বোঝা যায় না।

জানা যায়, টাঙ্গাইল পৌর শহরের এনায়েতপুর এলাকার বাসিন্দা আবু বক্কর সিদ্দিক চাঁনু মিয়া। পাঁচ বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে চাঁনু মিয়া সবার ছোট। পড়াশোনা করেছেন দশম শ্রেণি পর্যন্ত। ছোট বেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি বাবার সঙ্গে মাঠে-ঘাটে কাজ করতেন। আর কাজের ফাঁকে সময় পেলে কচুরিপানা, মাটির টুকরা ও কয়লা দিয়ে আঁকতেন ছবি। সেখান থেকে শুরু হয় তার ছবি আঁকার যাত্রা। বাবা-মা মারা যাওয়ার পর মানসিকভাবে ভেঙে পরেন তিনি। একটা সময় মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন তিনি। এরপর ঘুরে ঘুরে শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আঁকতে থাকেন।

সোমবার (৯ অক্টোবর) সরেজমিনে দেখা যায়, চাঁনু মিয়ার সঙ্গে একটি বস্তা। বস্তার ভেতর কয়লা ও কচুরিপানা আর কিছু কাগজের টুকরা। পৌর শহরের পার্ক বাজারের মোড়ে একটি দেয়ালে চাঁনু মিয়া ছবি আঁকছেন। তার এ ছবি আঁকা দেখতে ভিড় করছেন নানা বয়সী মানুষজন। 

স্থানীয় রবিন সরকার বলেন, “আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি চাঁনু মিয়া কচুরিপানা ও কয়লা দিয়ে শহরের বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আর্ট করে রাখেন। তার ছবি আঁকা খুবই সুন্দর। তার এ ছবি আঁকা দেখে নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা উৎসাহিত হবেন। তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করলে আরও ভালো ছবি আঁকতে পারবেন।”

সোলায়মান হোসেন রাব্বি বলেন, “বিভিন্ন দেয়ালে দেখা মিলে একটি ছেলে ও একটি মেয়ের ছবি। সবাই ধারণা করছে মেয়েটি তার প্রেমিকা ছেলেটি তিনি নিজে। তার এ ছবি আঁকা দেখে অনেক ভালো লাগে। তিনি স্বাধীনতার ছবি ও বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকেন।”

রিকশাচালক ইদ্রিস আলী বলেন, “আমি শহরের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে রিকশা চালাই। তখন চাঁনু পাগলাকে বিভিন্ন দেয়ালে ছবি আঁকতে দেখি। যে দেয়ালে ছবি আঁকেন, অনেক সময় তাকে বাসার মালিকরা গালিগালাজ করেন। তারপরও চাঁনু মিয়া থেমে যাননি। তার প্রতিভা দেখে সবাই মুগ্ধ।”

চাঁনু মিয়া ভারসাম্যহীন হওয়ায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সাংস্কৃতিক কর্মী জসিম উদ্দিন বলেন, “চাঁনু মিয়া অনেক সুন্দর ছবি আর্ট করতে পারেন। সে একজন ভারসাম্যহীন মানুষ তারপরও একজন পেশাদার চিত্রশিল্পীর মতো ছবি আর্ট করেন। এটা অনেক প্রশংসনীয়। আমি নিজেও মুগ্ধ তার এত সুন্দর প্রতিভা দেখে।”

টাঙ্গাইল জেলা কালচারাল অফিসার এরশাদ হাসান বলেন, “আমি নিজেও দেখেছি চাঁনু মিয়া ভালো ছবি আঁকেন। কেউ যদি চাঁনু মিয়ার দায়িত্ব নিয়ে শিল্পকলা একাডেমি বা জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেন, আমাদের যতটুকু সুযোগ আছে অবশ্যই চেষ্টা করব তাকে সহযোগিতা করার।”

Link copied!