এক হাতের অর্ধেক অংশ নেই, নেই দুচোখে আলো। তারপরও জীবনযুদ্ধে থেমে নেই ইবাদুল বাউল (৭২)। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন ফুটপাত, চায়ের দোকানের সামনে কাটা হাতের অর্ধেক অংশ দিয়ে হারমোনিয়াম বাজিয়ে, গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন এই অন্ধ শিল্পী ইবাদুল।
পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো ব্যক্তি না থাকায় চোখে পৃথিবীর সকল অন্ধকার নিয়ে এই বয়সেও ফুটপাতে গান গেয়ে পয়সা রোজগার করে পরিবারের ঘানি টেনে চলেছেন তিনি। তার একটাই আশা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এভাবেই গান গেয়ে হালাল পথে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করে যেতে চান।
গত সোমবার (২৪ জুলাই) এই অন্ধ বাউলকে নিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল সংবাদ প্রকাশে ‘৫২ বছর ধরে গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন অন্ধ ইবাদুল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি নজরে আসে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলমের।
এরপর সংবাদ প্রকাশের প্রতিবেদকের মাধ্যমে ইবাদুল বাউলকে বুধবার (২ আগস্ট) তার কার্যালয়ে ডেকে নেন ডিসি মাহাবুবুল আলম।
এরপর ইবাদুল বাউলকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। ইতোমধ্যে ভ্যানটি তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। ভ্যানটি তৈরি হলে নিজ হাতে হস্তান্তর করবেন জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম। এ সময় ইবাদুল বাউলকে ভ্যানটি ভাড়া দিয়ে সংসারের খরচ যোগাতে বলা হয়েছে। এছাড়া ইবাদুলের পরিবারের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এরপর জেলা প্রশাসককে গান গেয়ে শোনান অন্ধ শিল্পী ইবাদুল বাউল।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে প্রতিবেদকের সঙ্গে ইবাদুল বাউলের কথা হলে তিনি বলেন, “ডিসি স্যার আমার জন্য যা করেছেন, আমি তার কাছে সারাজীবন ঋণী থেকে যাব। এখন গান তেমন কেউ শুনতে চায় না। আয় তো হয় না বলতে গেলে। তারপর আবার বয়স হয়ে গেছে। আমার অনেক উপকার হলো। ভ্যানটি ভাড়া দিলে আমি প্রতিদিন যে টাকা পাব তাতে আমার সংসারের খরচ চলে যাবে। ডিসি স্যার অনেক ভালো মানুষ। আল্লাহর কাছে তার জন্য দোয়া রইলো।
এ সময় জেলা প্রশাসক কাজী মাহাবুবুল আলম বলেন, “কয়েকদিন আগে আমি একটি অনলাইন গণমাধ্যমে ইবাদুল বাউলকে নিয়ে নিউজ দেখি। নিউজটি পড়ার পর প্রতিবেদককে আমার অফিসে আসতে বলি। আজ (বুধবার) ইবাদুল বাউল সামনে এলে তার দীর্ঘ জীবনের কাহিনি শুনে আমার খুব খারাপ লেগেছে। অন্ধ, এক হাত নেই এরপরও তিনি ভিক্ষা না করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এভাবে চলা যায়? আমরা তাকে একটি ব্যাটারিচালিত ভ্যান দিতে চাই। আমার স্টাফদের ভ্যান তৈরির জন্য নির্দেশও দিয়েছি। ভ্যানটি তৈরি হলে আমি নিজ হাতে হস্তান্তর করতে চাই। এছাড়াও তার পাশে জেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে। আমি তার সবসময় খোজ খবর নেব।”




































