• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২০ মে, ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২১ জ্বিলকদ ১৪৪৬

সিত্রাংয়ে খুলনায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত


খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২২, ০৯:৪৬ এএম
সিত্রাংয়ে খুলনায় ২০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে খুলনায় ২০ কিলোমিটার নদীর বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও কোথাও প্রায় সম্পূর্ণ অংশ ধসে গেছে। কোথাও ক্ষতি হয়েছে বেড়িবাঁধের ঢাল। পূর্বে থেকেই দুর্বল বাঁধগুলো আরও জরাজীর্ণ হয়ে পড়ায় ভেঙে নোনা পানিতে প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে। 

এদিকে সিত্রাং আঘাত হানার আগের দিন (২৪ অক্টোবর) ভোরে খুলনার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা এলাকায় কপোতাক্ষ নদের প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ধসে যায়। ধসে যাওয়া বাঁধ এক বছর আগে জাইকার অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। বছর না ঘুরতেই ধসে যাওয়ায় কাজের মান নিয়ে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পাশে মাটির দেওয়াল ও মাঝখানে বালু ভরাট করে বাঁধটি গেল বছরের সেপ্টেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সে সময় নির্মাণকারীরা মূল বাঁধের পাশের নদী থেকে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তুলেছেন। পরে বাঁধের দুই পাশের ঢালে চরের মাটি দিয়ে বালু ঢেকে দেওয়া হয়। প্রতিনিয়ত ঢেউয়ের ধাক্কায় ধীরে ধীরে ঢালের মাটি সরে গিয়ে এখন মূল বাঁধে টান পড়েছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কালাম শেখ বলেন, গেল বছর নির্মাণকালে সেনাবাহিনী কাজ করেছিল। তখন কপোতাক্ষ নদ থেকে বালি উত্তোলন করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। নদীর ঢেউ লেগে বাঁধের তলার মাটি সরে যাওয়ায় বালির রাস্তা ধসে গেছে। বাঁধটি পরিকল্পিতভাবে না করায় টেকসই হয়নি। নদীতে ডাম্পিং করে ও ব্লক ব্যবহার করলে রাস্তা নষ্ট হত না।

কয়রা সদর ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবির বলেন, হরিণখোলায় সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে বাঁধ নির্মাণ করা হয়। আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না। দুই পাশে মাটি আর ভেতরে বালু দিয়ে ভরাট করে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।

পাউবো সূত্র জানায়, জাইকার অর্থায়নে তারা ঠিকাদারের মাধ্যমে ২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর ২ নম্বর কয়রা গ্রামের খালের গোড়া নামক স্থান থেকে গোবরা গ্রাম পর্যন্ত ৬০ মিটার ক্লোজার ও ১ হাজার ৬৪০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণকাজ শুরু করে। ওমরর্স ট্রেডিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে ছিলো। ২০২১ সালের ১২ সেপ্টেম্বর নির্মাণ কাজ সম্পন্নের পর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করে তারা। নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, নদী শাসন ছাড়া শুধু বাঁধ নির্মাণ হলে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সেটি আবারও নদীতে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বাঁধের পেছনে শত কোটি টাকা খরচের আগে নদী শাসন জরুরি। কিন্তু ওই অঞ্চলের পানি-মাটিতে বেড়ে ওঠা গ্রামের মানুষের কথাকে কখনো গুরুত্ব দেন না পাউবো কর্মকর্তারা।

খুলনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা এলাকার প্রায় ২০ কিলোমিটার নদীর বাঁধ আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে দাকোপের খলিসা ও খনা নামক স্থান বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেখানে মেরামতের কাজ চলছে।

খুলনার কয়রা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর আওতায়। সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার বলেন, কয়রার হরিণখোলা, শাকবাড়িয়াসহ কিছু অংশ আংশিক ও কিছু অংশ সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেনি।

মো. শাহনেওয়াজ তালুকদার আরও বলেন, হরিণখোলায় জাইকার অর্থায়নে বাঁধ নির্মাণের ডিজাইনে মাটি ছিল। বালি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সেখানে মাটি দিয়েই বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে মাটি সংকট থাকায় কিছু কিছু প্রকল্পে বালু দিয়ে বাঁধ তৈরির ডিজাইন করা হচ্ছে। বালুর ওপর দিয়ে এক মিটার মাটির লেয়ার দেওয়া হচ্ছে। 

Link copied!