• ঢাকা
  • শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ২৫ জ্বিলকদ ১৪৪৬

‘পারমাণবিক যুগে বেশ শক্ত অবস্থানে এলাম আমরা’


পাবনা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ১০, ২০২১, ০২:১৬ পিএম
‘পারমাণবিক যুগে বেশ শক্ত অবস্থানে এলাম আমরা’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের ফলে বিশ্বে পারমাণবিক যুগে বেশ শক্ত অবস্থানে এলাম আমরা। সেটি কিন্তু আমরা পারমাণবিক প্রযুক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার করে।

রোববার (১০ অক্টোবর) পাবনার রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের চুল্লির প্রথম ইউনিট স্থাপনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। 

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা বলেন, “আজকের দিনটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, আমার ব্যক্তিগত জীবনেও গুরুত্বপূর্ণ। আমি খুব আনন্দিত হতাম যদি সশরীরে উপস্থিত থাকতে পারতাম। করোনা মহামারির কারণে সেটি সম্ভব হলো না। তবে দ্রুতই আমি এখানে আসবো।”

শেখ হাসিনা বলেন, “পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাথেও পাকিস্তান আমলের বঞ্চনার ইতিহাস জড়িত। তারা ধোঁকাবাজি করেছে। শুধু জমি বরাদ্দ করে। আর প্রকল্পটি পশ্চিম পাকিস্তানে সরিয়ে নেয়।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতির পিতা স্বাধীনতার পরপরই আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন। এর ফলে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি এজেন্সি-আইএইএ’র অনেক নির্দেশনা মেনে চলতে হচ্ছে। ২০১৩ সালে রাশিয়া সফরে প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে আমার আলোচনা হয়। বিশেষকরে পারমাণবিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং জননিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েই আমরা এই প্রকল্প শুরু করি।“

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে রূপপুর প্রকল্প। রুশ পরমাণু শক্তি সংস্থার মহাপরিচালক এলেক্সি লিখাচেভ বলেন, “পারমাণবিক বিদ্যুৎ নির্মাণ বেশ জটিল একটি বিষয়। রুশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতার প্রমাণ ভিভিইআর রিঅ্যাক্টর। যেটি রূপপুরে নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণের পর এটি পরিচালনার জনশক্তিকেও প্রশিক্ষিত করে দিচ্ছে বাংলাদেশ। পারমাণবিক প্রযুক্তি ক্লিন এনার্জির একটি উত্তম দৃষ্টান্ত। এছাড়া রূপপুরের কারণে ২০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। এটি শুধু স্থানীয় জীবনমান-ই পরিবর্তন করবে না বরং জিডিপি বৃদ্ধিতেও অবদান রাখবে। বাংলাদেশের পারমাণবিক প্রকল্প নির্মাণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে রোসাটম। এবং সময়মত এটির নির্মাণ শেষ করতে রাশিয়া সম্ভাব্য সবকিছু করবে।”

রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন। প্রকল্প পরিচালক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. মো. শৌকত আকবর বলেন, আইএইএ’র গাইডলাইন অনুযায়ী সব নির্দেশনা মেনেই আজকে রিঅ্যাক্টর প্রেসাল ভেসেল স্থাপন করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জিয়াউল হাসান।

রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল:

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল যন্ত্র। এর মধ্যেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জ্বালানি ইউরেনিয়াম লোড করা হয়। এবং এখানেই ফিশন বা চেইন রিয়াকশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

কী কী বসবে রিঅ্যাক্টর ভবনে?

প্রকল্প এলাকায় গোলাকৃতি যে দুটি ভবন দেখা যায় সেগুলোই রিঅ্যাক্টর ভবন। এদের মধ্যে একটিতে আজ বসল রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল বা পরমাণু চুল্লিপাত্র। এটিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হার্ট বা হৃদপিণ্ড বলা যেতে পারে। এই ভবনের বিভিন্ন ধাপে বসানো হয়েছে নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি। পাঁচ ধরনের যন্ত্রের মধ্যে ইতিমধ্যে প্রেসারাইজার, কুল্যান্ট পাম্প এবং হাইড্রো এক্যুমুলেটর বসানো সম্পন্ন হয়েছে। রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের পরপরই আগামী নভেম্বরে স্থাপন করা হবে স্টিম জেনারেটর। এর মাধ্যমে প্রথম ইউনিটে সব ধরনের নিউক্লিয়ার যন্ত্রপাতি বসানো শেষ হবে।

১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচের এই প্রকল্পে নব্বই ভাগ টাকা ঋণ দিয়েছে রাশিয়া। একই সাথে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কয়েকটি চুক্তির মাধ্যমে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রুশ ঠিকাদার এটমস্ট্রয়এক্সপোর্ট। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৩ এ প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট এবং একই পরিমাণ বিদ্যুৎ দ্বিতীয় ইউনিট থেকে পাওয়া যাবে ২০২৪ সালে।

Link copied!