রাজশাহীর পদ্মার চরাঞ্চলের কৃষকদের সব সময় বাড়তি দামেই কৃষিকাজে ব্যবহৃত সবকিছু কিনে চাষাবাদ করতে হয়। চরগুলোতে চাষাবাদের প্রায় পুরোটাই হয় শ্যালো ইঞ্জিনের সেচে। চরের সামান্য কিছু জমি সৌরবিদ্যুতের ওপর নির্ভরশীল। বর্তমানে তেলের দাম বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা। চাষাবাদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় চরাঞ্চলের কৃষকরা।
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নটি নদীর ওপারে। এই চরে চাষাবাদে সেচ খরচের হিসাবটা দিলেন আমতলা গ্রামের কৃষক মো. রকি। তিনি জানান, প্রতি মৌসুমে শ্যালো ইঞ্জিনের মালিককেই দিতে হয় সাড়ে তিন থেকে চার মণ ধান। আবার সেচ নেওয়ার জন্য কৃষককে কিনে দিতে হয় তেল। ইঞ্জিন ও জমিভেদে বোরো ধানের ক্ষেত্রেই কৃষকের লাগে ৪০ থেকে ৬০ লিটার তেল। ধান ও তেল দেওয়ার হিসাবের বাইরে সেচ নিলে ঘণ্টা প্রতি গুনতে হয় ১০০ টাকা। ৬০০ মিলিলিটার থেকে এক লিটার তেলে এক ঘণ্টা চলে শ্যালো ইঞ্জিন। এখন তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আগের খরচে পাওয়া যাবে না সেচের পানি।
চর আষাড়িয়াদহের আমতলা খাসমহলে জ্বালানি তেল বিক্রি করেন ইয়াকুব আলী। তিনি জানান, চরে তেল নিয়ে যেতে লিটারে ৫ থেকে ৭ টাকা খরচ হয়েই যায়। তাই সরকারি মূল্যের চেয়ে চরে অন্তত ১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি করতে হয়। এবার যেভাবে তেলের দাম বাড়ল তাতে চরের কৃষকদের সমস্যা আরও বাড়বে।
আমতলা গ্রামের কৃষক গোলাম রাব্বানী বলেন, “কৃষকের তো আবার লজ্জা নাই। লস হলেও আমরা চাষ করি। এডাই নেশা। কিন্তু সরকারকেও এ বিষয়ে একটু খেয়াল করা উচিত। বর্তমান পরিস্থিতিতে ধানের দাম কমপক্ষে দু’হাজার টাকা মণ হতে হবে। তাহিলে চরের কৃষকের জানডা বাঁচবে। তা না হোলে কৃষক মোর্যা শেষ হয়্যা যাবে।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মো. শামছুল ওয়াদুদ বলেন, “জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষিতে তেমন খারাপ প্রভাব পড়বে না। কারণ, এখন কৃষিযন্ত্রের বেশির ভাগই তো চলে বিদ্যুতে।”
চরে বিদ্যুৎ না থাকার কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “চরে কিছুটা খারাপ প্রভাব পড়বে। এটা কতটা, সেটা আমাদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা হয়নি। আগে দেখি, তারপর বলতে পারব।”