কৃষিজমির মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়ার প্রতিবাদ করায় দুজনকে পিটিয়ে জখম করেছে ভূমিদস্যুরা। এ সময় ছবি তুলতে গেলে দীপ্ত টেলিভিশনের ক্যামেরা পার্সন রিজাউল করিমের উপর হামলা চালিয়ে তার ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়।
শুক্রবার (২৬ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙা ইউনিয়নের তুজুলপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। আহত গ্রামবাসীদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহতরা হলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার তুজুলপুর গ্রামের মৃত ইসহাক আলী মোড়েলর ছেলে আবু সিদ্দিক ও একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে জাহাঙ্গীর মোড়ল।
তুজুলপুর গ্রামের আবু সিদ্দিক জানান, তাদের গ্রামের গোলাম বারী মোড়লের চেলে আব্দুর রহমানের কৃষি জমির মাটি কেটে ভূমিদস্যু একই গ্রামের আমজাদ সরদারের ছেলে শাহাঙ্গীর সরদার তার ভাই জাহাঙ্গীর সরদার, বাদল গাজীর ছেলে শুকুর আলী ও হাফিজুল সরদার হাফির ছেলে কামরুজ্জামান মিন্টু পার্শ্ববর্তী জাকির হোসেনের মালিকানাধীন স্টার ইট ভাটায় বিক্রি করা হচ্ছে এমন খবর পেয়ে তিনিসহ ৩৬জন গ্রামবাসি বিষয়টি গত ২১ নভেম্বর ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মো. আব্দুল বারিকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
এরপর বৃহস্পতিবার সকালে মাটি কাটা শুরু করলে তিনির মোবাইল ফোনে তহশিলদারকে অবহিত করলেও তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। একপর্যায়ে শুক্রবার সকালে মাটিকাটা মেশিন দিয়ে আবারো ১০ ফুট গর্ত করে মাটি কাটা শুরু করলে তিনি বিষয়টি তহশিলদার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তহশিলদার ঘটনাস্থলে আসার নাম করে কালক্ষেপণ করেন। একপর্যায়ে সকাল সোয়া ১০টার দিকে সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে এলে তিনিসহ জাহাঙ্গীর মোড়ল সেখানে গিয়ে মাটি কাটার প্রতিবাদ করতেই জাহাঙ্গীর আলম, তার ভাই নাশকতার মামলার আসামী শাহাঙ্গীর আলম, শুকুর আলী ও কামরুজ্জামান মিন্টু তাদের উপর হামলা চালায়।
তারা তাদের এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে। মারপিটের দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার সময় দীপ্ত টিভির সাতক্ষীরা প্রতিনিধিকে হুমকি দেওয়া হয়। হামলা চালিয়ে দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপার্সনের ক্যামেরা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। চিৎকার শুনে পথচারী মোহনপুরের শাহীনুর, তুজুলপুরের বকুলসহ কয়েকজন এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। বিষয়টি বার বার থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে জানানোর চেষ্টা করলে তারা ফোর রিসিভ করেননি।
তুজুলপুর গ্রামের আব্দুর রহমান জানান, তার জমিটি এবার কৃষি জমি থেকে চিংড়ি ঘের বানাতে চান। সে অনুযায়ী তিনি জমির চারিধারে প্রয়োজনীয় মাটির অতিরিক্ত মাটি শুকুর আলী, জাহাঙ্গীর তার ভাই শাহাঙ্গীর, মিন্টু ও শুকুর আলীর কাছে বিক্রি করেছেন। তারা মাটি কাটার সময় সাংবাদিসহ তিনজনকে মারপিট করার কথা শুনেছেন তিনি। এটা ঠিক হয়নি।
শুকুর আলী বলেন, তিনিসহ চারজন আব্দুর রহমানের কাছ থেকে মাটি কিনেছেন তাই স্টার ভাটায় বিক্রি করেছেন।
ঝাউডাঙা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহশিলদার আব্দুল বারী জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি দুপুর ১২টার দিকে আব্দুর রহমানের কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধ করতে আসেন। দেরির কারণ হিসেবে তিনি বলেন কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে নয়, ছুটির দিনে ব্যক্তিগত কাজ থাকায় দেরি হয়ে গেছে। তবে তিনি আসার আগে মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত জাহাঙ্গীর, শাহাঙ্গীর, মিন্টু ও শুকুর আলী সাংবাদিকসহ দুইজনের ওপর হামলা করেছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে তিনি এসেই মাটিকাটার মেশিন জমি থেকে তুলে দিয়েছেন। বন্ধ করেছেন মাটি কাটার কাজ।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, “তহশিলদারের প্রতিবেদন পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে ওইসব ভূমি দস্যুদের বিরুদ্ধে।”
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবীর জানান, বিষয়টি তাকে মোবাইল ফোনে জানানোর পর তিনি শুক্রবার বিকেলে গ্রামবাসীকে লিখিতভাবে জানাতে বলেছেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন ও পুলিশ পরিদর্শক বাবুল আক্তারের সঙ্গে বারবার যোগোযোগের চেষ্টা করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।
 
                
              
 
																                   
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                     
                                                    





































