• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৪, ৬ কার্তিক ১৪৩১, ১৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

কালের সাক্ষী উজানী রাজবাড়ি


গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২২, ১২:১০ পিএম
কালের সাক্ষী উজানী রাজবাড়ি

জেলায় জমিদারদের প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের নিদর্শনগুলো নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা উজানী রাজবাড়ি আজও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়ে নিচ্ছে।

মহারানী ভিক্টোরিয়ার আমলে যশোর থেকে রায় গোবিন্দ ও সুর নারায়ণ নামক দুই জমিদার বংশধর গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের উজানী গ্রামে বসতি স্থাপন করেন এবং তেলিহাটি পরগনা পওন নিয়ে শুরু করেন এলাকার জমিদারি প্রথা। সেই সুবাদে উজানীতে নির্মিত হয় বিভিন্ন কারুকার্য খচিত দ্বিতল-ত্রিতলবিশিষ্ট জমিদারদের বসতের জন্য দালানবাড়ি, যা বর্তমানে রাজবাড়ি নামে পরিচিত। সেই সঙ্গে জমিদাররা নির্মাণ করে পাকা বৈঠকখানা, শান বাঁধানো ঘাট, টেরাকোটা সমাধি মঠ ও মন্দির। জমিদারদের এসব প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম নিদর্শন ধ্বংসের মুখোমুখি অবস্থায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আজও দর্শকদের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। এখন টিকে থাকা জমিদার সুর নারায়ণের প্রপৌত্র প্রশান্ত রায় দর্শনার্থীদের কাছে বলে যান সেই জমিদারি আমলের রূপকথার ইতিহাস।

প্রশান্ত রায় জানান, অবিভক্ত ভারত বিভাগ ও জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হওয়ার পর এখানকার জমিদাররা ভারতে চলে গেলেও তিনি পৈতৃক নিবাস ছেড়ে যাননি। জমিদাররা চলে গেলেও থেকে যায় তাদের স্মৃতিচিহ্ন। সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে সে চিহ্নগুলো আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ভেঙে পড়ছে পাঁচিল ঘেরা দালানবাড়ি, মন্দির, মঠ ইত্যাদি। প্রাচীন ভাস্কর্য শিল্পের অনুপম টেরাকোটা শৈলীর নির্মিত জমিদারদের মঠটির ছাদ ভেঙে পড়েছে। এছাড়া গুপ্তধনের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ি, ভাঙচুর করে কতিপয় লোকজন মাঠটিকে বিকৃত করে ফেলেছে। এই মাঠটি প্রায় ৩০ হাত মাটির নিচে দেবে গেছে। জমিদারবাড়ির সন্নিকটে কালীমন্দিরটি ও ভগ্নদশায় পতিত। এই মন্দিরের কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিটি অনেক আগেই হারিয়ে গেছে। জমিদারবাড়িসংলগ্ন বিশাল দিঘিটি ও দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার করা হয়নি। উজানীর অদূরে মহাটালী গ্রামে রয়েছে জমিদার আমলের আরও একটি প্রাচীন মন্দির ও ধর্ম রায়ের বাড়িতে আছে বিশাল দিঘি। দীর্ঘদিন ধরে এগুলো কোনো সংস্কার না করায় ক্রমে বিলুপ্ত হওয়ার পথে।

প্রশান্ত রায়ের কাছ থেকে আরও জানা যায়, জমিদারদের ফেলে যাওয়া সম্পদের প্রায় ৭০ ভাগ জমি জায়গা এলাকার কিছু প্রভাবশালী মহল ভয়ভীতি দেখিয়ে ছলচাতুরী করে জাল দলিল ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। বাংলা ১৩৫২ সালের ঝড়ে তহশিলের বিভিন্ন কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায়। এই সুযোগে এলাকার ওই প্রভাবশালীরা জমিদারি সম্পত্তির বেশকিছু অংশ দলিল করে নেন।

গোপালগঞ্জের কবি, সাংবাদিক ও ইতিহাস গবেষক রবীন্দ্র নাথ অধিকারী জানান, গোপালগঞ্জে জেলার ২২টি জমিদারির মধ্যে উজানী জমিদারদের জমিদারি ছিল দ্বিতীয় বৃহত্তর। তারা অত্যন্ত প্রজাদরদি ছিলেন। ভোগ বিলাসের চেয়ে জনসেবার দিকেই তদের লক্ষ্য ছিল বেশি। তারা শিক্ষা প্রসারে কাজ করেছে। এছাড়া দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠা করে পীড়িত মানুষের সেবা করেছেন। দুর্ভিক্ষের সময় প্রজাদের খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন। প্রজাদের যে কোনো সমস্যার সমাধান করেছেন। এই জমিদার বংশের অবদানের কথা নতুন প্রজন্মের কাছে জানান দিতে জমিদারবাড়িটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এটি সংরক্ষণ করলে এটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।

Link copied!