তিস্তার ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগে বালু ভরাট করতে বালু উত্তোলনের জন্য একই নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছে পাউবোর ঠিকাদার। যেন কইয়ের তেল দিয়ে কই ভাজার চেষ্টা করছে পাউবো। তবে এতে বাধা দিয়েছেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ বালু উত্তোলন নদীর ভাঙন আরও বাড়বে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নে তিস্তা পাড়ের কলোনি পাড়ায় গত কয়েকদিন থেকে নদীর তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি ভিত্তিতে সেখানে জিও ব্যাগ ফেলার উদ্যোগ নেয়। তবে জিও ব্যাগগুলো ভরাট করতে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে নদী তীরের কাছ থেকেই।
স্থানীয়রা বলছেন, “ভাঙন ঠেকানোর জন্য পাউবো নদী থেকেই জিও ব্যাগের জন্য বালু উত্তোলন করছে। এতে নদী ভাঙন আরও তীব্র আকার ধারণ করবে।”
সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর পাড় ঘেঁষেই বসানো হয়েছে ড্রেজিং মেশিন। তিস্তা পাড়ের কলোনি পাড়ায় অন্তত ৩০টি পরিবারের বসবাস। তাদের সবাই কয়েক দফায় তিস্তা নদীর ভাঙনের শিকার হয়ে বসতভিটা ও আবাদি জমি হারিয়েছেন। আবারও তারা পড়েছেন ভাঙনের মুখে। ভাঙন আতঙ্কে তাদের রাতগুলো এখন কাটে নির্ঘুম।
কলোনি পাড়া গ্রামের কৃষক মনসুর আলী (৫৮) বলেন, “জিও ব্যাগ বালুপূর্ণ করতে নদী পাড় থেকে মাত্র ২৫ থেকে ৩০ মিটার দূরত্বে পাউবোর ঠিকাদার ড্রেজার বসিয়েছে বালু উত্তোলনের জন্য। এখান থেকে বালু উত্তোলন করলে গ্রাম আরও বেশি ভাঙনের কবলে পড়বে।”
একই গ্রামের কৃষক নায়েব আলী (৫৬) বলেন, “বার বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে আমরা নিঃস্ব। এখন এই বসত ভিটাটুকু শেষ সম্বল। নিরাপদ দূরত্ব থেকে বালু সংগ্রহ করে জিও ব্যাগে না ভরা হলে আমাদের এইটুকু সম্বলও হারাবো।”
পাউবোর ঠিকাদার গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, “স্থানীয়রা না বুঝেই বালু উত্তোলনে বাধা দিচ্ছে। নিরাপদ দূরত্বে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাজটি জরুরি বলে তাড়াতাড়ি বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে ডাম্পিং করতে হবে।”
তবে সরেজমিনে গিয়ে গ্রামবাসীর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়। দেখা যায়, নদীর পাড় ঘেঁষেই বসানো হয়েছে ড্রেজিং মেশিন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, “নদী পাড় থেকে ৫০০ থেকে ৬০০ মিটার দূরত্ব থেকে বালু উত্তোলন করে জিও ব্যাগে ভরে তা ডাম্পিং করতে ঠিকাদারকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাউবো কর্মকর্তা এটা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন।”
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, “অনির্ধারিত বাজেটে জরুরি কাজ হিসেবে কলোনি পাড়া এলাকায় তিস্তা নদীর ভাঙন ঠেকাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”