ওয়ানডে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জেতা হলো না নিউজিল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়ার দেওয়া ৩৮৯ রানে পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করে খুব কাছে গিয়ে হারতে হলো কিউইদের। শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া কাছে ৫ রানে হেরেছে টম লাথামের দল।চলতি বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানে লক্ষ্য তাড়া করে জয় তুলে নেয় পাকিস্তান। আর এটিই বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। পাকিস্তানের সেই রেকর্ড ভাঙা হলো না ব্লাক ক্যাপসদের।
এদিন টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনারের তাণ্ডবের পর মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের ঝড়ে অজিদের ইনিংস থামে ৪৯ ওভার ২ বলে ৩৮৮ রানে গিয়ে। পাহাড়সম লক্ষ্যে তাড়া করতে নেমে রাচিন রবীন্দ্রর সেঞ্চুরিতে ঠিক কক্ষপথেই ছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের থামতে হয়েছে নির্ধারিত ওভার শেষে ৯ উইকেটে ৩৮৩ রানে গিয়ে।
শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৯ রান হাতে ২ উইকেট। মিচেল স্টার্কের প্রথম বলে সিঙ্গেল রানের পর, দ্বিতীয় ডেলিভারিতে ওয়াইড ও চার মিলিয়ে জয়ের পাল্লা হেলে গিয়েছিল কিউইদের দিকে। পরবর্তী দুই বলে নিশামের দুটি শটই ছিল চারের বাউন্ডারি পাওয়ার মতো। অজি ফিল্ডাররা দারুণ প্রচেষ্টায় দু’দফায় সেখানে দুটি করে রান ঠেকিয়েছেন। শেষ তিন বলে ৩ রান নিতেই এক উইকেট হারানোয় আর বিশ্বরেকর্ড গড়া হয়নি টম ল্যাথামের দলের।
রেকর্ড রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ৩১ বলেই পঞ্চাশ তুলে ফেলেন কিউই দুই ওপেনার ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়ং। তবে জশ হ্যাজলউড পরপর দুই ওভারে দুজনকে বিদায় করে দিলে নিউজিল্যান্ডের রানের গতি কিছুটা কমে আসে। এরপর নিউজিল্যান্ডকে মূলত জয়ের পথে ধরে রাখেন রাচিন রবীন্দ্র। তিনে নামা এই বাঁ-হাতি ব্যাটার প্রথমে ড্যারিল মিচেল, এরপর অধিনায়ক টম ল্যাথামকে নিয়ে দুটি পঞ্চাশোর্ধ রানের জুটি গড়েন।
সতীর্থদের আসা–যাওয়া দেখলেও একপ্রান্ত আগলে রাখেন রাচিন। ক্রিচে ছিলেন ৪১ ওভার পর্যন্ত। করেছেন এবারের বিশ্বকাপে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ৪০ ওভার ২ বলের সময় প্যাট কামিন্সকে তুলে মারতে গিয়ে বাউন্ডারিতে মারনাস লাবুশেনের হাতে তালু বন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। রাচিন বিদায়ের আগে ১১৬ রানে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন। বিদায়ের আগে রবীন্দ্র কিউইদের হয়ে বিশ্বকাপে দ্রুততম (৭৭ বল) সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন।
রবীন্দ্র আউট হওয়ার পর নিউজিল্যান্ডকে ম্যাচে রেখেছিল নিশাম। শেষ ওভারে রান আউট হওয়ার আগে ৩টি করে চার ও ছয়ে ৩৯ বলে ৫৮ রান করেন এই ব্যাটার। এছাড়া ৫১ বলে ৫৪ রান করেছেন ড্যারিল মিচেল। অজিদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিয়েছেন অ্যাডাম জাম্পা, এছাড়া দুটি করে শিকার করে হ্যাজলউড ও কামিন্স।
এর আগে, অস্ট্রেলিয়া ব্যাট করতে নেমে তাদের দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড তান্ডব চালায়। ৯ ওভারের ভিতর দুই ব্যাটসম্যান তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। আর ব্যাটিং পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর অজিদের স্কোর ১০ ওভারে ১১৮ রান, বিনা উইকেটে। তবে ২০ তম ওভারে এসে ভাঙে এই জুটি। সেঞ্চুরির দিকে অগ্রসর হওয়া ওয়ার্নারকে ফেরান গ্লেন ফিলিপস। ৮১ রানে ওয়ার্নারের বিদায়ে ভাঙে ১৭৫ রানের উদ্বোধনী জুটি।
ওয়ার্নারকে হারালেও ইনিংসের ২৩ ওভার শেষেই দুইশ ছাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি তুলে নেন ট্রাভিস হেড। হাতের ইনজুরির কারণে বিশ্বকাপের আগের ম্যাচগুলো খেলতে পারেননি। আজ দলে ফিরেই মাত্র ২৫ বলে চলতি বিশ্বকাপের যৌথভাবে দ্রুততম ফিফটির পর ব্যক্তিগত সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে খেললেন ৫৯ বল। আর একেই বলে প্রত্যাবর্তন।
সেঞ্চুরির কিছুক্ষণ পর তাকে থামান ফিলিপস। ৬৭ বলে ১০৯ রান করেন অজি ওপেনার। তার ইনিংসে আছে ১০টি চার ও ৭টি ছয়ের মার। এরপর রানের গতি কমতে থাকে অজিদের। স্টিভ স্মিথ দলীয় ২২৮ রানে, মিচেল মার্শ ২৬৪ রানে, মার্নাস লাবুশেন ২৭৪ রানে বিদায় নেন। এদের মধ্যে স্মিথ ১৮, মার্শ ৩৬ ও লাবুশেন ১৮ রান করেন।
শেষদিকে ঝোড়ো ইনিংস আসে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, জস ইংলিস ও প্যাট কামিন্সের ব্যাট থেকে। ডাচদের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করা ম্যাক্সওয়েল ২৪ বলে ৪১ রান করে জিমি নিশামের ওভারে আউট হন। ইংলিসকে ৩৮ রানে আউট করেন বোল্ট। ১৪ বলে ৩৭ রান করে আউট হন কামিন্স। মিচেল স্টার্ককে ম্যাট হেনরি ও অ্যাডাম জাম্পাকে তুলে নেন বোল্ট। ফলে অজিদের ইনিংস থামে ৩৮৮ রানে। ব্ল্যাকক্যাপসদের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ও গ্লেন ফিলিপস দুইজনই তিন উইকেট পেয়েছেন।