সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল ও সভা-সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে অনুসরণের জন্য নির্দেশ দিয়ে লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন আপিল বিভাগ।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ চার বিচারপতির স্বাক্ষরের পর এ আদেশ প্রকাশ করা হয়েছে।
লিখিত আদেশে বিএনপির সাত আইনজীবী নেতাসহ সব আইনজীবীকে মিছিল-সমাবেশ না করার বিষয়ে হাইকোর্টের রায় কঠোরভাবে মেনে চলতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সভা-সমাবেশ ও মিছিল না করার বিষয়ে উচ্চ আদালতের স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে দেওয়া ২০০৫ সালের একটি রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
দুই বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করছিলেন বিএনপিসহ সরকারবিরোধী আইনজীবীরা। এ নিয়ে আদালত অবমাননার আবেদন নিয়ে যায় আওয়ামীপন্থি এক আইনজীবী। ওই আবদনের ওপর ১৯ অক্টোবর শুনানির দিন ধার্য করে এই রায় কঠোরভাবে অনুসরণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত প্রাঙ্গণে কোনো ধরনের মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের এ রায় এখন থেকে মানা না হলে তা হবে আদালত অবমাননা। কারণ আপিল বিভাগ ওই রায় মেনে চলতে বলেছেন। নিষেধ অমান্য করে কেউ মিছিল, সভা-সমাবেশ ও লিফলেট বিতরণ করলে সেই আইনজীবী আইনি কার্যক্রম থেকে বিরত থাকবে বলেও তিনি জানান।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মূলত ২০০৫ সালে তৎকালীন হাইকোর্টের বিচারপতি আবদুল মতিনের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে এসব নিষেধাজ্ঞা দেন। এখন থেকে সেই রায় কঠোরভাবে অনুসরণ করা হবে। তবে আদালত অবমাননার অভিযোগ ওঠা বিএনপির ৭ আইনজীবীর ক্ষেত্রে এই রায় কার্যকর হবে না বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
গত ১৫ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট আয়োজিত শোক দিবসের এক আলোচনাসভায় ‘বিচারপতিরা শপথবদ্ধ রাজনীতিবিদ’ উল্লেখ করে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতির বক্তব্যকে কেন্দ্র করে তাদের অপসারণ চেয়ে সংবাদ সম্মেলনের পাশাপাশি কয়েকটি কর্মসূচি পালন করে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ২৯ আগস্ট বিএনপি সমর্থক সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ব্যবস্থা গ্রহণ চেয়ে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন মো. নাজমুল হুদা নামের এক আইনজীবী। সে আবেদন আপিল বিভাগে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাহিদ সুলতানা যুঁথী।
বিএনপির যে সাত আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন- জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ফোরামের সভাপতি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক কায়সার কামাল, ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সভাপতি আব্দুল জব্বার ভূঁইয়া, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সহসম্পাদক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ফাহিমা নাসরিন মুন্নি এবং ফোরামের সুপ্রিম কোর্ট শাখার সাধারণ সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
আবেদনটি শুনানির জন্য ৩০ আগস্ট আদালতে আবেদন করেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুঁথি। ওইদিন প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, “আমরা আবেদনটি অবকাশের পর শুনানি গ্রহণ করব। এরপরই ২০০৫ সালে হাইকোর্টের দেওয়া রায় কঠোরভাবে অনুসরণের আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি।”
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে বিচারপতি এম এ মতিন ও বিচারপতি এ এফ এম আব্দুর রহমানের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সভা-সমাবেশ বা মিছিল করা যাবে না। বহন করা যাবে না কোনো প্ল্যাকার্ড। এ ধরনের কর্মকাণ্ড করলে তা হবে বিচার প্রশাসনে হস্তক্ষেপের সামিল। এমনকি তা আদালত অবমাননাও বটে।
এ ছাড়া কর্মসূচি দিয়ে কোনো আইনজীবীকে মামলা পরিচালনা করতে বাধা দেওয়া যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই রায় গত ১৮ বছরেও মেনে চলেনি আইনজীবীদের বিবদমান সংগঠনগুলো। এখন এটি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলেন আপিল বিভাগ।