একদিকে তীব্র তাপদাহ, অন্যদিকে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে পুরো দেশবাসী। এরই মধ্যে পানি সংকট রাজধানীবাসীর জীবনকে করে তুলেছে আরও দুর্বিষহ।
বুধবার (৭ জুন) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রায়েরবাজার, আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মিরপুরের মণিপুর, বড়বাগ, পীরেরবাগ , বারিধারার নুরের চালা, ভাটারা, কুড়িল বিশ্বরোড, বাড্ডা, আফতাবনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এসব এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তারা ঠিক মতো পানি পাচ্ছেন না।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, চলমান বিদ্যুৎ সংকটের প্রভাব পড়ছে পানিতে। বিদ্যুতের অভাবে ঠিকমতো পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না। মানুষের এমন ভোগান্তিতে ওয়াসার এখন শেষ ভরসা বৃষ্টি। এছাড়া লোডশেডিং যে হারে বাড়ছে তাতে তাদের হাতে কিছু করার নেই। এখন একদিন বৃষ্টি হলেই পানি সংকট কেটে যাবে। কিছু কিছু জায়গায় জেনারেটর দিয়ে চলছে পানি সরবরাহ।
পানি সংকট নিয়ে মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী মাসুম রহমান সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “লোডশেডিং আর তাপদাহ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের এলাকায় পানির সংকট বেড়েছে। দিনে খুব সামান্য সময়ের জন্য লাইনে পানি থাকে। এই পানি দুর্গন্ধযুক্ত ব্যবহার উপযোগী নয়।”
মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা আরাফাত হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, দিনের মধ্যে পানি থাকে দুই ঘণ্টার মতো। অনেকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পানি উঠিয়ে ব্যবহার করেন। স্বাভাবিকভাবে পানি থাকে না।
একই এলাকার বাসিন্দা সোহরাব আলী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এখানে দৈনিক ব্যবহারের পানিও পাচ্ছি না। ওয়াসরুম, গোসল, রান্না থেকে শুরু করে সব বন্ধ। এক প্রকার ঘরবন্দি হয়ে পড়েছি আমরা। একটা ভবনে প্রায় ৩০টি ফ্লাট। এখানে এতগুলো মানুষের ব্যবহারের জন্য সারাদিন বহু ফোন দেওয়ার পরে ছোট এক গাড়ি পানি আসে। এ পানি দিয়ে তো রান্না-বান্না, ওয়াসরুম ব্যবহারের পানিও হয় না। চরম ভোগান্তিতে দিন পার করছি আমরা।”
মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় ১৪ নম্বর সড়কেও একই অবস্থা। এখানেও বেশির ভাগ বাড়িতে পানি সরবরাহ নেই। এই এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “একদিকে তীব্রতাপদাহ অন্যদিকে লোডশেডিং এর মাঝখানে পানি সরবারহ ঠিক নেই। এই কয়েকদিনে ১৪ হাজার টাকার পানি কিনেছি। তাও পানির সমস্যা ঠিক হচ্ছে না। এভাবে পানির সংকট আর কতদিন থাকবে তাও জানি না। পানি ছাড়া দুঃসহ সময় পার করছি।”
ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে গড়ে প্রতিদিন ২৫৫ থেকে ২৬০ কোটি লিটার পানির প্রয়োজন হয়। ওয়াসা প্রায় ২৮০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে। গরমের কারণে এখন পানির চাহিদা বেড়ে দৈনিক ৩০০ কোটি লিটারের কাছাকাছি চলে গেছে। ফলে বেশি সংখ্যক এলাকায় সংকট দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ) এ কে এম সহিদ উদ্দিন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বৃষ্টিপাত না থাকা ও তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষের পানির চাহিদা বেড়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে ঠিকমতো পানির পাম্প চালানো যাচ্ছে না। বেশ কয়েকটি এলাকায় জেনারেটরের মাধ্যমে পানি সরবারহ ঠিক রাখার চেষ্টা করছি। আশা করি অচিরেই এই সংকট কেটে যাবে।”




























