মশার উপদ্রব কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের মিয়ামি শহরের কৌশল কাজে লাগাতে চান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, “আমরা এত দিন ভুল পদ্ধতি ব্যবহার করেছি। তাতে মশা তো ধ্বংস হয়নি বরং অর্থের অপচয় হয়েছে। তাই অতিদ্রুত ডিএনসিসি মশার প্রজাতি চিহ্নিত করতে একটি ল্যাব স্থাপন করতে চাই।”
শনিবার (২১ জানুয়ারি) ফ্লোরিডার মিয়ামিতে স্থানীয় সময় সকালে ফিল্ড ভিজিট ও কর্মশালায় তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরার মাধ্যমে ডিএনসিসি প্রতিনিধিদলকে হাতে-কলমে মশা নিধনের বিষয়টি শিখিয়ে দিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। কর্মশালা শেষে মেয়র এসব কথা বলেন।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, “মিয়ামি থেকে যে জ্ঞান অর্জিত হয়েছে, সেটির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিএনসিসিকে মশা মুক্ত রাখতে চাই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে তাদের সিএলডিপির (ডিপার্টমেন্ট অব কমার্সের কমার্শিয়াল ল ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম) সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আমাদের দেশের কীটত্ত্ববিদদের নিয়ে একটি সভার আয়োজন করব। তারা আসলে কীভাবে সফল, সেটি কীভাবে ঢাকাতে প্রয়োগ করা যায়, তার কর্মপদ্ধতি ঠিক করা হবে।”
মিয়ামি শহরে প্রায় ৫২ প্রজাতির মশার অস্তিত্ব রয়েছে বলে কর্মশালায় তুলে ধরা হয়। ফলে বছরের ৩৬৫ দিনই মশাবাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায় শহরটিতে। রাজধানীর ঢাকার আবহাওয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা স্টেটের মিয়ামি ডেড কাউন্টির বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। সেখানকার তাপমাত্রা গড়ে ১৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রিতে ওঠানামা করে। মধ্যে মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতও হয়ে থাকে। ফলে ডেঙ্গুসহ সব ধরনের মশাবাহিত রোগের উর্বর ক্ষেত্র হতে পারত মিয়ামি। কিন্তু সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে মশাবাহিত রোগ পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ। মিয়ামিতে মশা ধ্বংস করার ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে মশার প্রজাতি নির্ণয়। কেননা, মশার ধরন বুঝে ওষুধ স্প্রে করতে পারলেই কেবল মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব। অন্যথায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা ফগার স্প্রে করে কোনোভাবেই মশা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে মিয়ামি ডেড কাউন্টি কর্তৃপক্ষ।
মেয়র আতিক আরও বলেন, “প্রয়োজনে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আলাপ করে তাদের ল্যাবেই মশার জীবন প্রকৃতি নির্ণয়ে কাজ করা যেতে পারে। আর ফগিংয়ে অর্থ অপচয় না করে লার্বিসাইডিংয়ে মনোযোগী হতে হবে। আমরা দেখেছি মিয়ামি আর ঢাকার আবহাওয়া এবং মশার ধরন একই। তাই তারা সফল হলে অবশ্যই আমরা সফল হব। এখন আর পিছিয়ে থাকার সময় নেই। উন্নত দেশ তাদের পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারলে ঢাকাকেও মশামুক্ত করা সম্ভব। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সিএলডিপি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান।’
যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আয়োজনে দেশটির সিএলডিপি আমন্ত্রণ ও অর্থায়নে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রতিনিধিদল ফ্লোরিডা সফর করে। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। সফরকালে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দেশটির অভিজ্ঞতা হাতে কলমে শিখিয়ে দেন মিয়ামি ডেড কাউন্টির বিশেষজ্ঞরা। আর মশা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের এই সফল কার্যক্রম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বাস্তবায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডিএনসিসি মেয়র।