• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০২৪, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,

যাত্রী সংকটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’, কমছে বাসের সংখ্যা


জাহিদ রাকিব
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৪, ২০২৩, ১০:০০ পিএম
যাত্রী সংকটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’, কমছে বাসের সংখ্যা

রাজধানীর বিশৃঙ্খল গণপরিবহনে শৃঙ্খলা আনতে বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় প্রাথমিকভাবে তিন রুটে চালু হয়েছিল ঢাকা নগর পরিবহন। গত বছরের শুরুতে ২৩ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর, ২১ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার ও ২৬ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে কদমতলী পর্যন্ত ঢাকা নগর পরিবহন নামে বাস চালু হয়।

তিন রুটে ৫০টি করে মোট ১৫০টি বাসের মাধ্যমে এই সার্ভিস শুরু হয়। প্রতিটি রুটে বাসের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে ৫০ থেকে ১০০ হওয়ার কথা থাকলেও উল্টো সেই সংখ্যা কমেছে।

ঘাটারচরের শহীদ বুদ্ধিজীবী চত্বরে সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা নগর পরিবহনের টিকিট কাউন্টারের সামনে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাস। টিকিট কাউন্টারে তখন ছিল না কোনো যাত্রীর উপস্থিতি। অলস সময় পার করছেন বাসের কাউন্টার ম্যানেজার, গাড়ির চালক ও সহকারীরা।

ঘাটারচর এলাকায় ২৬ নম্বর রুটের টিকিট কাউন্টারে থাকা ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “৫০টি বাস দিয়ে এই রুটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ধীরে ধীরে যাত্রীর চাহিদা অনুযায়ী বাসের সংখ্যা বাড়ার কথা থাকলেও এখন উল্টো বাসের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে এসেছে। ২২টি বাস বন্ধ হয়ে এখন ২৮টি বাস চলাচল করে এই রুটে। কিন্তু দিনের বেশিরভাগ সময় যাত্রী সংকট থাকায় এই স্টপেজে বাসগুলো বসে থাকে।”

২৬ নম্বর রুটের মতো ২১ ও ২৩ নম্বর রুটের কাউন্টারগুলোর চিত্রও একই রকম। যাত্রী সংকটে বাসগুলো দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের সামনে।  এই দুই রুটেও বাসের সংখ্যা ৫০ থেকে কমে অর্ধেকে নেমেছে। কিন্তু এই তিন রুটে প্রাইভেট কোম্পানির অন্য বাসগুলো যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা যায়।

নগর পরিবহন শুরুর পর থেকে বাসগুলোতে যাত্রী ওঠার নামার জন্য তিন রুটে রাস্তার দুই পাশে শতাধিক স্টপেজ চালু করা হয়েছিল।

সরেজমিনে দেখা যায়, পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই স্টপেজগুলোতে থাকা টিকেট কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। বাসগুলো অন্যান্য গণপরিবহনের মতো যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠা নামা করছে। বাসের ভাড়া নেওয়ার সময় টিকিট দেওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ বাসে তা দেখা যায়নি।

ধানমন্ডির ঝিগাতলা থেকে মতিঝিল নিয়মিত যাতায়াত করেন হারুনুর রশীদ। নগর পরিবহনের বাসে নিয়মিত যাতায়াত করতেন তিনি। সংবাদ প্রকাশকে হারুনুর রশীদ বলেন, “আগে এই রুটে বেসরকারি কোম্পানির রজনীগন্ধা, সিটি লিংকের কয়েকশ’ বাস যাত্রী পরিবহন করত। ঢাকা নগর পরিবহন চালু হওয়ার পর ওই বাসগুলোতে যাত্রী সংখ্যা কমে যায়। তখন নগর পরিবহনের বাসে যাত্রী বেশি যাতায়াত করত। বাসগুলো নির্দিষ্ট কাউন্টার থেকে যাত্রী নেওয়ায় সবাই তখন যাতায়াত করত। কিছুদিন যেতে না যেতেই বাসগুলো যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা শুরু করে। পাশাপাশি বাসের সংখ্যা কমে যাওয়া ও নির্দিষ্ট সময়ে বাস না পাওয়ায় যাত্রীরা অন্য বাসে চলে যাচ্ছেন।”

শাহবাগ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, নগর পরিবহনের নির্ধারিত যে কাউন্টার ছিল তা কয়েক মাস থেকে বন্ধের অভিযোগ করেন যাত্রীরা। ঘণ্টাখানেক সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেও নগর পরিবহনের কোনো বাস দেখা যায়নি। ঠিক এই সময়ে এই রুটে চলাচল করা অন্য কোম্পানির বাসগুলো বাসভর্তি যাত্রী নিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীক কাজে শাহবাগ এলাকায় এসেছেন ইকরামুল হক। কাঁচপুর যাওয়ার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন তিনি। সংবাদ প্রকাশকে তিনি বলেন, “সড়কে দীর্ঘ যানজট ও নতুন বাসের পরিবর্তে পুরাতন বাস দিয়ে সার্ভিস শুরু হওয়ায় যাত্রীদের মন জয় করতে পারেনি নগর পরিবহন। শুরুর দিকে কিছুক্ষণ পর পর বাস পাওয়া গেলেও এখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও বাস পাওয়া যায় না।”

সাইন্সল্যাব মোড়ে যাত্রী ছাউনিতে দায়িত্বরত নগর পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা জামান হোসেন সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “গত বছর জুনের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নগর পরিবহনে যুক্ত হয়ে বেসরকারি পরিবহনের বাসগুলো যাত্রী পরিবহন করেছিল। কিন্তু এরপর লোকসানের অজুহাতে ক্রমান্বয়ে তারা বাস সরিয়ে নেয়। অথচ এই রুটে প্রচুর যাত্রী রয়েছে।”

জামান হোসেন আরও বলেন, “ঢাকা নগর পরিবহন যে গতিতে কাজ শুরু করেছিল, এখন বাস সংকটে তা অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়েছে। ঠিকমতো যাত্রীদের সেবা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কাউন্টারে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাস না পেয়ে চলে যাচ্ছেন যাত্রীরা।”  

ঢাকা নগর পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আখতার সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নগর পরিবহন পরিচালনা করতে গিয়ে ছোটখাটো কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে আমাদের। তারপরও ঢাকা নগর পরিবহন এগিয়ে চলছে। সড়কে নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পরীক্ষামূলকভাবে তিনটি রুটে বাস সার্ভিস শুরু করেছি। তিন রুটে কিছুসংখ্যক বাস কমেছে। আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে আরও নতুন ও আধুনিক বাস এই রুটে যুক্ত করা যায়।”

নীলিমা আখতার আরও বলেন, “তিন রুটে বাস পরিচালনা করতে আমাদের যে অসুবিধা তৈরি হয়েছে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। চলতি বছর মে মাসে বাস রুট রেশনালাইজেশন ২৭তম সভায় যে প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করেছি, সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং তা সমাধানে চেষ্টা চলছে। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্য পুরো মহানগরীকে নগর পরিবহনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছি।”

Link copied!