• ঢাকা
  • সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫

সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কেন জরুরি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩, ২০২৩, ০৭:৪৫ পিএম
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক কেন জরুরি
বন্ধুসুলভ আচরণ সন্তানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। ছবি : সংগৃহীত

জন্মের পর থেকে একটি বয়স পর্যন্ত শিশুকে যা শেখাবেন বা শিশু যা শিখবে, সেটির ওপরই তার ব্যক্তিত্ব গঠন হয়। সন্তানকে যা কিছুই শেখান না কেন, সবার আগে তার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আসলে কোনো কিছু শেখানো হোক বা সন্তানকে সুন্দর পরিবেশের মধ্য দিয়ে বড় করে তোলা হোক, বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করার কোনো বিকল্প নেই। তাহলে চলুন জেনে নিই সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব সম্পর্ক কেন জরুরি।

খাবারে আনুন আকর্ষণীয়তা
সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব করার প্রধান ধাপই হচ্ছে খাওয়ার সময়। শিশুকে খাওয়ানোর সময় তার সঙ্গে নানা ধরনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাবা-মায়ের একধরনের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কারণ, সন্তানরা বিশ্বাস করে বাবা-মা তাদের পছন্দের খাবার কী, সেটি জানেন। অথবা কোনো খাবার পছন্দ না হলে বাবা তার ইচ্ছা অনুযায়ী চাহিদা পূরণ করেন। 

তাই সন্তানকে ক্ষুধা লাগলে সময়মতো খেতে দিন। বাড়ির তৈরি নানা রকম সুস্বাদু খাবার দিন তাকে। এবং যতটা সম্ভব খাবার আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করুন। তবে একটি বিষয় অবশ্যই খেয়াল রাখবেন, খাবারটি যেন পুষ্টিকর হয়।

মতামতকে গুরুত্ব দিন
দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সের বাচ্চার নিয়ে একটি গুরুতর সমস্যা হলো কথা শোনে না। তাই তাকে পরিণত মানুষ হিসেবে দেখুন। তার মতামতকে গুরুত্ব দিন। সে কিছু বোঝে না, এ ধরনের মন্তব্য ওদের সামনে করবেন না। আপনার সন্তানের সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করুন।

আচরণ ঠিক রাখতে হবে
নিজেদের আচরণ ঠিক রাখার চেষ্টা করুন। কারণ, এই বয়স থেকেই বাচ্চারা অনুকরণ করতে শেখে। তাদের সামনে এমন কোনো আচরণ করবেন না, যেটি পরবর্তী সময়ে তার ক্ষতি ডেকে আনবে এবং আপনার জন্যেও বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হবে। সন্তানের যেকোনো সমস্যার কথা মন দিয়ে শুনুন। তুচ্ছ মনে হলেও শুনতে হবে। কারণ, সেখানেই লুকিয়ে থাকে বড় কোনো সমস্যার কারণ।

অতিরিক্ত শাসন করা
কোনো কিছুই অতিরিক্ত যেমন ভালো নয়, তেমনি তাকে অতিরিক্ত শাসন করা থেকে বিরত থাকুন। সে ভুল করলে বন্ধুর মতো আচরণ দিয়ে বোঝাতে হবে। কখনো যেন সে কষ্ট না পায় অর্থাৎ হতাশাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যের সামনে বকাঝকা করবেন না। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে শ্রদ্ধা করুন। এতে শিশুও শ্রদ্ধাবোধ শিখবে।

ছোটখাটো উপহার দিন
একটি বয়সে বাচ্চার আঙুল চোষার মতো বিভিন্ন বদ-অভ্যাস থাকতে পারে। মনে থাকা উদ্বেগ, আকাঙ্ক্ষা , নিরাপত্তার অভাবে দুই-আড়াই বছর বয়স থেকে মুদ্রাদোষ তৈরি হয়। একদিনেই মুদ্রাদোষ ছাড়ানো সম্ভব নয়। কারণ এটি একটি মানসিক সমস্যা। 

মুদ্রাদোষ ছাড়ানোর জন্য তাকে উপহার দিন বা অন্য কোনো বিনোদনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখতে পারেন। বাবা মায়ের একাকিত্বে অনেক শিশু মনে করে তারা আর তাদের ভালোবাসা পাচ্ছে না। যার কারণে নিজের অবচেতন মনে এসব মুদ্রাদোষের শিকার হয়।

বিছানায় প্রশ্রাব করা
একটা বয়স পর্যন্ত অনেক শিশুরা বিছানায় প্রস্রাব করে ফেলে। এ সমস্যা এড়াতে পেপার টয়লেট ট্রেনিং দিন। চাইলে সন্ধ্যার পর পানি খাওয়ানোর পরিমাণ কমিয়ে দিতে পারেন। মাঝরাতে একবার উঠিয়ে টয়লেট করিয়ে নিন। ৫ বছর বয়সের পরেও বিছানা ভেজালে ভুলেও তাকে বকাঝকা করবেন না। 

বরং এটি যে একটি স্বাভাবিক ব্যপার সেটি তাকে হাসিমুখে বুঝিয়ে বলুন। যেন এতে সে আপনার আচরণকে বন্ধুসুলভ মনে করেন। তবে এ সমস্যা থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

সন্তানদের সময় দিন
আজকাল সবারই ব্যস্ততা বেড়েছে। পর্যাপ্ত সময় চাইলেও দিতে পারেন না অনেক বাবা মা। একা থাকতে থাকতে অনেক বাচ্চার অ্যাটেনশন ডেফিসিট হাইপার অ্যাক্টিভিটি ডিসঅর্ডারে ভোগে। উদ্বেগ ও অবসাদ থেকে এই রোগ হয়। আত্মবিশ্বাস ধরে রাখতে না পারার কারণে মূলত এটি হয়ে থাকে। তাই সন্তানদের সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন।

স্বপ্নপূরণ
আপনার পূরণ না হওয়া স্বপ্ন বা চাওয়ার প্রতিফলন সন্তানের মধ্যে দেখার মনোভাব ঝেড়ে ফেলতে হবে। তাকে সিদ্ধান্ত নিতে শেখান। বন্ধুত্বের মনোভাব দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করুন। ভালো কাজে উৎসাহ দিন। বাস্তবতার নিরিখে আপনিই নিতে পারেন সন্তানের সঠিক যত্ন। এবং মনে রাখবেন বন্ধুসুলভ আচরণ সন্তানকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।

Link copied!